Sylhet Today 24 PRINT

আইএসের শামীমার সন্তানের মৃত্যু, সমালোচনার মুখে ব্রিটিশ মন্ত্রী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক |  ১০ মার্চ, ২০১৯

জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া শামীমা বেগমের (১৯) নবজাতক ছেলের মৃত্যুতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। সন্তানের জন্য দেশে ফিরতে চাইলে শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন সাজিদ জাভিদ।

শামীমার সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের ‘উদাসীন’ ও ‘অমানবিক’ সিদ্ধান্তকে দায়ী করেছে লেবার পার্টি।

শামীমার পারিবারিক শুভাকাঙ্ক্ষীদের অভিযোগ, ব্রিটিশ সরকার শিশুটির সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

সমালোচনার মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেছেন, ‘যেসব শিশুকে এই পরিস্থিতির দিকে টেনে নেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ ছাড়া আমার কিছুই করার নেই।’

রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, সিরিয়ার শরণার্থীশিবিরে বৃহস্পতিবার শামীমার ২০ দিন বয়সী নবজাতক জারাহ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আগে শামীমার আরও দুটি সন্তান অসুস্থতা ও অপুষ্টিতে ভুগে মারা যায়।

আইএসে যোগ দিতে শামীমা মাত্র ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাজ্য ছাড়েন। পরে আইএসের সদস্য এক ডাচ তরুণকে তিনি বিয়ে করেন। তার স্বামী আত্মসমর্পণের পর সিরিয়ায় এখন বন্দী। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন শামীমা। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় শরণার্থীশিবিরে জন্ম নেয় তার ছেলে।

ব্রিটিশ সরকার শামীমার ছেলের মৃত্যুকে ‘মর্মান্তিক’ বলে মন্তব্য করেছে। ব্রিটিশ সরকারের মুখপাত্র বলেন, সরকার সিরিয়ায় যাওয়ার বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে সতর্ক করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদের প্রতি আকৃষ্ট না হতে এবং সংঘাতপূর্ণ বিপজ্জনক এলাকায় না যেতে লোকজনকে বাধা দিতে সরকার যা যা করার সব করতে থাকবে।

২০১৫ সালে শামীমার সঙ্গে তার আরও দুই বন্ধু খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসে যুক্তরাজ্যে ছেড়ে যান। শামীমার বন্ধু খাদিজা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমিরার ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা যায়নি।

ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যের দ্য টাইমসের সাংবাদিক অ্যান্টনি লয়েড সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় একটি শরণার্থীশিবিরে সাক্ষাৎ পান শামীমার। ওই সাংবাদিককে তখন শামীমা বলেন, তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। যেকোনো দিন তার সন্তানের জন্ম হতে পারে। নবাগত সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান।

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শামীমা জানান, তিনি আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য অনুতপ্ত নন। তবে তিনি মনে করেন, আইএসের দিন ফুরিয়ে এসেছে।

পরে ছেলে জারাহকে জন্ম দেওয়ার দুই-তিন দিনের মধ্যে শামীমা বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন যে, তার ছেলে ব্রিটিশ নাগরিক হবে এবং যুক্তরাজ্যে বড় হবে।

শামীমার ঘটনায় ইউরোপের দেশগুলো উভয়সংকটে পড়ে। জিহাদি ও আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল কাউকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে, নাকি দেশে ফিরতে বাধা দেওয়া হবে, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি অনেকে।

সন্তানের জন্য যুক্তরাজ্যে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়ে শরণার্থীশিবির থেকে বিবিসিকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে আইএসের হামলা নিয়ে শামীমার একটি বক্তব্যে জনসমর্থন তার বিরুদ্ধে চলে যায়। তিনি বলেছিলেন, ২০১৭ সালে ম্যানচেস্টারে হামলায় ২২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি ‘বেদনাহত’ হয়েছিলেন।

তবে একই সঙ্গে সিরিয়ায় সামরিক হামলার তুলনা করে তিনি বলেন, ‘একজন সৈন্যকে হত্যা করা হলে ঠিক আছে, আত্মরক্ষার জন্য তা করা হয়েছে। সিরিয়ার বাঘুজে নির্বিচারে বোমা মেরে আইএসের নারী ও শিশু হত্যা করা হচ্ছে। এটি এখন দুই দিকের ব্যাপার। কারণ, আইএসেও নারী ও শিশু মারা যাচ্ছে।’

শামীমা আরও বলেন, ‘এটা একধরনের প্রতিশোধ। তাদের (আইএস) যুক্তি ছিল যে, এটা প্রতিশোধ, তাই আমি ভেবেছি, ঠিক আছে, এটা ন্যায্য।’

ওই সাক্ষাৎকারের পর পর যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

শামীমার সন্তানের মৃত্যুর খবরে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ডিয়ানে অ্যাবট। এ ঘটনায় সরকার ‘উদাসীন’ ও ‘অমানবিক’ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাউকে রাষ্ট্রহীন করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। একজন ব্রিটিশ নারী তার নাগরিকত্ব হারিয়েছেন বলে আজ একটি নির্দোষ শিশুকে মরতে হলো।

কনজারভেটিভ এমপি ও বিচার বিভাগবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ফিলিপ লি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এই দুঃখজনক ঘটনায় সরকারের ‘নৈতিক দায়বদ্ধতা’ ছিল।

তিনি আরও বলেন, শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করা এবং তাকে যুক্তরাজ্যে ফেরার সুযোগ প্রত্যাখ্যান করার ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, ‘এটা নৈতিকতা দিয়ে নয়, জনগণের দ্বারা চালিত হয়েছে’।

বিবিসি জানিয়েছে, শরণার্থীশিবিরগুলোর অবস্থা বেশ করুণ। সেখানে খাবার, কম্বল ও তাঁবুর অভাব রয়েছে।

ডেইলি মেইলের সাংবাদিক লারিসা ব্রাউন জানিয়েছেন, শরণার্থীশিবিরে তীব্র ঠান্ডার মধ্যে তাঁবু উষ্ণ রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। রাতে তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ ডিগ্রিতে নেমে এলে শিশুদের উষ্ণ রাখার জন্য স্টোভের ব্যবস্থাও নেই।

গত তিন মাসে শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেওয়ার পথে বা আশ্রয় নেওয়ার পরপর ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।

যুক্তরাজ্যের মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক প্রধান তত্ত্বাবধায়ক এবং শামীমার পারিবারিক বন্ধু ডাল বাবু শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘একটি শিশুকে সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’

শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের আগেই শিশুটি জন্ম নেওয়ায় শিশুটি ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত ছিল। এ প্রসঙ্গ টেনে ডাল বাবু বলেন, একজন ব্রিটিশ নাগরিকের এই মৃত্যু সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যেত। শিশুটিকে সহায়তা করার কোনো উদ্যোগই ছিল না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় যা করেছে, তা দুঃখজনক।

শামীমার সন্তানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার আগে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন, দুঃখজনকভাবে যুদ্ধ এলাকায় জন্ম নেওয়া হয়তো আরও অনেক শিশু আছে। অবশ্যই তারা একদম নির্দোষ। যেসব শিশুকে এই পরিস্থিতির দিকে টেনে নেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ ছাড়া কিছুই করার নেই। এ ঘটনা আরেকবার মনে করিয়ে দেয়, যুদ্ধ এলাকায় কারও যাওয়া কতটা বিপজ্জনক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.