Sylhet Today 24 PRINT

নড়াইলের সাধারণ গ্রাম্য মেয়ে থেকে ভারতের ফার্স্ট লেডি

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৯ আগস্ট, ২০১৫

তিনি নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামেরই মেয়ে। নাম শুভ্রা মুখার্জি। ছোটবেলায় যাকে সবাই আদর করে ডাকতেন ‘গীতা’।

নড়াইলের চিত্রা নদীর কোল ঘেষে ভদ্রবিলা গ্রামের ‘গীতা’ নামের মেয়েটিই ভারতবাসীর কাছে ‘শুভ্রা মুখার্জি’ হিসেবে খ্যাত। যিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী।

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে ভারতের নয়াদিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জীবনাবসন ঘটে।

নড়াইল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভদ্রবিলা গ্রামে ১৯৪৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শুভ্রা মুখার্জি। তার বাবার নাম অমরেন্দ্র ঘোষ ও মা মীরা রানী ঘোষ। জন্মের পরে তার নাম রাখা হয় গীতা। গীতার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে নড়াইলের ভদ্রবিলা এবং মামাবাড়ি তুলারামপুর গ্রামে। নড়াইলের এই দুটি গ্রামে (ভদ্রবিলা ও তুলারামপুর) শুভ্রা মুখার্জির অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানে রয়েছে তার অনেক আত্মীয়-স্বজনও। প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বিয়ের পর নড়াইলের মেয়ে গীতা ঘোষ পরিচিতি পান ‘শুভ্রা মুখার্জি’ হিসেবে।

আত্মীয়-স্বজন সূত্রে জানা গেছে, শুভ্রা মুখার্জির শৈশবের প্রথম দিকটা ভদ্রবিলা গ্রামে নিজবাড়িতে (পিত্রালয়) কাটলেও পরে নড়াইলের তুলারামপুরে মামাবাড়ি থেকে চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্তু লেখাপড়া করেন। ১৯৫৫ সালে চলে যান ভারতের কলকাতার তারকেশ্বর লাইনে আরেক মামার বাড়িতে। নয় ভাইবোনের মধ্যে শুভ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। অন্যরা ভারতে চলে গেলেও নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে বসবাস করছেন শুভ্রা মুখার্জির ভাই কানাই লাল ঘোষ। ভদ্রবিলার পৈতৃক ভিটা ও জমিজমা দেখাশোনা করেন ভাই কানাই লাল ও তার স্ত্রী দুলালী ঘোষ। তাদের রয়েছে তিন সন্তান। শুভ্রার মামাতো ভাইয়েরা তুলারামপুর গ্রামেই বসবাস করেন।

শুভ্রা মুখার্জির মামাতো ভাই তুলারামপুর গ্রামের কার্তিক ঘোষ জানান, শুভ্রা মুখার্জির শৈশব কেটেছে আমাদের বাড়িতেই। শুভ্রা দিদি তুলারামপুরে থেকেই চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। তারপর চলে যান ভারতে।

কার্তিক বলেন, ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নিকে নিয়ে শুভ্রা দিদি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তবে, সে সময় সঙ্গে ছিলেন না আমাদের জামাইবাবু প্রণব মুখার্জি। পরে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে নড়াইলের ভদ্রবিলার বাড়িতে আসেন শুভ্রা মুখার্জি।

শুভ্রা ও প্রণব মুখার্জির দুই ছেলে অভিজিৎ ও সুরজিৎ এবং মেয়ে শর্মিষ্ঠা। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী শুভ্রা পেশায় ছিলেন অধ্যাপক। ভালো রবীন্দ্রসংগীতও গাইতে পারতেন। লিখেছেন অসংখ্য গল্প, প্রবন্ধ ও ফিচার।

এদিকে, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ২০১৩ সালের ৫ মার্চ শুভ্রা মুখার্জিকে নিয়ে নড়াইলের ভদ্রবিলায় শ্বশুরালয়ে বেড়াতে আসেন। এ সময় জামাইবাবু প্রণব মুখার্জিকে বরণ করে নেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

প্রণব মুখার্জির শ্যালক কানাই লাল ঘোষের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ওইদিন প্রণব মুখার্জি ও শুভ্রা মুখার্জিকে এক ভরি দুই আনা ওজনের সোনার চেইন ও একটি জামদানি শাড়ি উপহার দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া কুল বরই, নারকেলের নাডু ও ঘি দেওয়া হয়। আর শুভ্রা মুখার্জি কানাই লালের পরিবারের জন্য তিনটি শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। ওই সফরের সময় (২০১৩ সালের ৫ মার্চ) প্রণব মুখার্জি ও শুভ্রা মুখার্জির সঙ্গে কানাই লালের পরিবারের (ভদ্রবিলা) ১২ সদস্য এবং তুলারামপুরের মামাবাড়ির ছয় সদস্য দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন।

কানাই লালের পুত্রবধূ জানান, ২০১৩ সালের ৫ মার্চ পিসোমশাই প্রণব মুখার্জি শ্বশুরবাড়ি ভদ্রবিলা গ্রামে বেড়াতে এসে আমাদের সঙ্গে খুবই আন্তরিকভাবে কথা বলেছিলেন। তাকে (প্রণব) আমরা প্রণাম করারও সুযোগ পেয়েছিলাম। পিসি আমাদের খুবই আদর করেছিলেন। আমরা শুভ্রা পিসিকে চুমু খেয়েছিলাম। কিন্তু পিসি গতকাল আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমরা দেখতে পারলাম না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.