Sylhet Today 24 PRINT

আজাদ কাশ্মিরে ২২ স্বাধীনতাকামীকে পাকিস্তানের গ্রেপ্তার

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মিরে অন্তত ২২ জন স্বাধীনতাকামীকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। তবে আন্দোলনরত সংগঠনটির দাবি, সোমবার স্বাধীনতার দাবির আন্দোলন থেকে অন্তত ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। আর পাকিস্তানি পুলিশের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যখন পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে তখন সেই দেশটিই আজাদ কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামীদের গ্রেপ্তারের খবর জানা গেলো। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

আন্দোলনকারীরা জম্মু ও কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) এর সদস্য। ভারত ও পাকিস্তানের অধিকৃত উভয় কাশ্মিরেরই স্বাধীনতার দাবিতে কাজ করে সংগঠনটি। শুক্রবার তাত্রিনোটে আন্দোলন শুরু করে জেকেএলএফ। তাদের দাবি, ভারত যেন কাশ্মিরে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

দলের সিনিয়র নেতা তোকির গিলানি বলেন, কাশ্মির থেকে দুই দেশই যেনও সেনা প্রত্যাহার করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় এটাই তাদের মূল দাবি। তিনি বলেন, অবস্থান ধর্মঘটের প্রধান দাবিই হচ্ছে গত ৩৫ দিন ধরে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে চলমান নিপীড়নের অবসান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

শনিবার কাশ্মিরের রাজধানী মুজাফফরবাদ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে তাত্রিনোট গ্রামের কাছে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই স্থানটি ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখারও কাছে। পুলিশ জানায়, সোমবার ওই সংঘর্ষের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। পুলিশ ও অধিকারকর্মীরা জানান, সোমবার অবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল।

তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি যাচাইয়ে বেগ পেতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলোর।

জেলা পুলিশ প্রধান তাহির মাহমুদ কুরেশি বলেন, শনিবার আন্দোলনকারীরা নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। তিনি বলেন, আমরা তাদের নিরাপদ পথ তৈরি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বিপজ্জনক এলাকার দিকে যাচ্ছিল, যেখানে গেলে ভারতীয় বাহিনী তাদের গুলি করতে পারত। কুরেশির দাবি, আমাদের এলাকায় গুলি চালিয়েছে ভারত। আমরা চাই না কোনও নিরপরাধ ব্যক্তি প্রাণ হারাক।

অন্যদিকে গিলানি বলেন, তাদের ৪০ জনেরও বেশি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্দোলন থামানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে তাদের।

তবে কুরেশির দাবি, আন্দোলনকারীদের কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আটক করা হয়নি। তারা অবৈধ কাজ করেছে বলেই আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, কাশ্মির নিয়ে তাদের আদর্শের কারণে আটক করা হয়নি। বরং তারা অপরাধী বলেই আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য মারাত্মক আহত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই পুলিশ সদস্য।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত-পাকিস্তানের তিনটি যুদ্ধের মধ্যে দুটি সংঘটিত হয়েছে কাশ্মির ইস্যুতে। গত ৫ আগস্ট (সোমবার) ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর প্রতিবাদে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করাসহ ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কাশ্মির সীমান্তে চলছে টানটান উত্তেজনা। একইসঙ্গে সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত ও ভারতের স্বাধীনতা দিবসকে কালো দিবস হিসেবে পালন করেছে পাকিস্তান।

কাশ্মিরের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ইতোমধ্যে ইস্যুটি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতের ভূমিকার সমালোচনা শুরু করেছে পাকিস্তান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। তবে ভারতের দাবি, বিষয়টি অভ্যন্তরীণ।

পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, কাশ্মিরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করা উচিত। তবে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মিরেও স্বাধীনতাকামীদের দমন করছে পাকিস্তান। চলতি বছরেই জেকেএলএফের ১৯ সদস্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.