Sylhet Today 24 PRINT

বিশ্বের ঘুম ভাঙালেন নীলুফার দেমির

সিলেটটটুডে ডেস্ক |  ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ফলে সৃষ্ট শরণার্থী সংকটের ভয়াবহতার চিত্রটি নতুন ছিল না। এটি হয়তো শুধু শক্ত একটি মাধ্যমই খুঁজে বেড়াচ্ছিল এর তীব্রতা প্রকাশ করার জন্য। আর সেই মাধ্যম তৈরির কাজটিই করেছেন তুর্কি আলোকচিত্রী নীলুফার দেমির।

দেমিরের ক্যামেরায় সম্প্রতি উঠে এসেছে বিশ্বমানবতার চূড়ান্ত পতনের দৃশ্যটি। তিন বছরের সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির নিথর দেহটি মুখ গুঁজে পড়ে ছিল সাগরের ভেজা বালুতটে। কোমরের দিকে ভাঁজ হয়ে ছিল তার লাল টি-শার্ট, আর ছিল গাঢ় নীল শর্টস। সমুদ্রসৈকতে বালি নিয়ে খেলে বেড়ানোর কথা যে শিশুটির, সে জানান দিল সুন্দর পৃথিবীর বদলে এক বিভীষিকাময় মৃত্যুপুরীর কথা।

‘একমাত্র যা আমি করতে পারতাম তা হচ্ছে, তার চিত্কার সবাইকে শোনানো’— বলেন নীলুফার দেমির।

২০১৫ সালে গ্রীষ্মে দোগান নিউজ এজেন্সির ‘ইউরোপীয় অভিবাসী সংকট’ নিয়ে কাজ করছিলেন ২৯ বছর বয়সী ফটোসাংবাদিক নীলুফার দেমির। সেটি করতেই সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ তিনি গিয়েছিলেন তুরস্কের ওই সমুদ্রসৈকতে। সেখানে একটি শিশুর মরদেহ দেখতে পেয়ে প্রথমে তিনি থমকে যান। তার পরই ক্লিক পড়তে থাকে তার ক্যামেরায়।

পরবর্তীতে তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘সেখানে তার জন্য করার কিছুই বাকি ছিল না। এমন কোনো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না, যা তার জীবন ফিরিয়ে দিতে পারত। কিছুই করার ছিল না, শুধু তার কিছু ছবি তুলে নেয়া ছাড়া, সেটাই আমি করেছি।’ তিনি ভেবেছিলেন, এটাই একমাত্র পথ ছিল, যার মাধ্যমে তিনি নীরব হয়ে যাওয়া শিশুটির চিত্কার সবার সামনে নিয়ে আসতে পারেন।

তিনি শুধু তার কাজটি করেছিলেন। ফলাফল নিয়ে তেমন কিছু শক্ত ভাবনা ছিল না তার। এর আগেও তিনি এটি নিয়ে কাজ করেছেন। তবে এবার তার ভাষাটি এতটাই জোরালো হয়ে দাঁড়ায়, যা সমগ্র পৃথিবীকে আলোড়িত করে। এমনকি সেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিকেও আরেকবার ভাবতে বাধ্য করে, যারা অভিবাসী সংকট নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছতে পারছিলেন না। তাই দেরিতে হলেও অবশেষে তারা কিছু সংখ্যক শরণার্থীকে স্থান দিতে সম্মত হয়েছেন। একটি আলোকচিত্র দিয়েই বিশ্ববাসীর কান পর্যন্ত দেমির হয়তো অনেকটাই পৌঁছে দিতে পেরেছেন কুর্দি বা তার ভাই গালিবের নীরব ক্রন্দন, যেটি তিনি চেয়েছিলেন।

প্রাথমিকভাবে ছবিটি দেখে তার অন্তরে যে বেদনার সৃষ্টি হয়েছিল, সেটিই দেমির দেখাতে চেয়েছেন সবাইকে। এরই সঙ্গে দেখাতে চেয়েছেন অভিবাসীদের কঠিন বাস্তবতার বিকট রূপটি। তার কাজ সঠিকভাবেই করেছেন দেমির। এবার ঘুম ভাঙবে তো সমগ্র বিশ্বের? হানাহানি বন্ধ করে মানুষ কি ফিরিয়ে দিতে পারবে শিশুদের স্বর্গ, যেটি ছিল কুর্দির প্রাপ্য? দেমিরের সঙ্গে শুধু সে আশাটিই করতে পারি আমরা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.