Sylhet Today 24 PRINT

মিয়ানমারকে আদালত দেখাল গাম্বিয়া

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু তাঙ্গারা ও অং সান সু চি

রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নিষ্ঠুরতা দেখিয়েও বড়ধরনের আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের মুখোমুখি না হলেও আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ গাম্বিয়া মিয়ানমারকে আদালত দেখিয়েছে।

দ্য হেগ শহরের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। সে দেশের বিচার-মন্ত্রী আবুবাকার তামবাদু শুনানির শুরুতে বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচার হত্যার প্রশ্নে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতেই তার দেশ আইসিজেতে এই অভিযোগ এনেছে।

"সারা বিশ্ব কেন এখন নীরব দর্শক? কেন আমাদের জীবদ্দশাতে এটা আমরা ঘটতে দিচ্ছি?" তিনি বলেন, "সবাই মনে করে এখানে মিয়ানমারের বিচার হচ্ছে। আসলে এখানে বিচার চলছে আমাদের সামগ্রিক মানবিকতার।"

শুনানির প্রথম দিনে বাদীপক্ষের বক্তব্য শোনা হচ্ছে। মিয়ানমার এসব অভিযোগের জবাব দেবে বুধবার। এরপর বৃহস্পতিবার দু'পক্ষের মধ্যে যুক্তি-তর্ক হবে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারকে দোষী প্রমাণিত করার চেষ্টায় গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু তাঙ্গারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে শুনানির প্রথম দিনে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সামরিক বাহিনীর একের পর এক নৃশংসতার ঘটনা তুলে ধরা হচ্ছিল তখন সেখানে পাথরের মত মুখ করে বসে ছিলেন নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী অং সান সু চি।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকেই এ সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আর আলোচনায় থেকেছে গাম্বিয়া। তৃতীয় দেশে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নেওয়ার বিষয়টিও যে গাম্বিয়া ভাবছে তা বাংলাদেশকে জানিয়েছে দেশটি।

গত বছরের মে মাসে ঢাকায় ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু তার দেশের নেতৃত্ব দেন। ঢাকায় বৈঠকে বসার আগে তিনি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজার গিয়েছিলেন। পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন রুয়ান্ডার গণহত্যার সঙ্গে তিনি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার মিল খুঁজে পাচ্ছেন। কাজেই মিয়ানমারকে আদালতে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত সপ্তাহে তাদের এক বিশ্লেষণে বলেছে, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইয়াহিয়া জামেহর ২২ বছরের স্বৈরশাসনের সময়ের নেতিবাচক ছবি আর রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে মারি তামবাদু মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন।

রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি গাম্বিয়ার বানজুলে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গঠিত ওআইসির মন্ত্রিসভা বিষয়ক অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি এ নিয়ে আলোচনা করে। বাংলাদেশ, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, সুদান, তুরস্ক ও জিবুতি নিয়ে গড়া ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ওই কমিটির বৈঠকে একটি খসড়া প্রস্তাব আনে আফ্রিকার দেশটি। ওই প্রস্তাব মার্চে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।

ওআইসির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনাসহ আইনি পদক্ষেপ নিতে এ পর্যন্ত গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার খরচ ধরা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সৌদি আরব, তুরস্ক, কুয়েত, কাতারের পাশাপাশি বাংলাদেশও গাম্বিয়াকে ওই তহবিল সংগ্রহে সহযোগিতায় রাজি হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.