Sylhet Today 24 PRINT

ভারতের রাজ্যসভায় আলোচিত নাগরিকত্ব বিল পাস

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯

লোকসভার পর ভারতের রাজ্যসভাতেও বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয়েছে। গত সোমবার বিলটি পাস হয়েছিল লোকসভায়, বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ১১৭-৯২ ভোটে পাস হলো রাজ্যসভায়। এনডিএ শরিক শিবসেনা লোকসভায় বিলের পক্ষে ভোট দিলেও রাজ্যসভায় তারা ওয়াকআউট করে।

১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনে এই সংশোধনের ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে চলে আসা হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান, জৈন, পারসি ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।

এদিকে, এই বিলকে কেন্দ্র করে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তা সামাল দিতে সরকার হিমশিম অবস্থায়। গুয়াহাটিতে কারফিউ জারি হয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সেনা নামাতে হয়েছে দুই রাজ্যেই।

তিন প্রতিবেশী দেশ থেকে ধর্মীয় কারণে ‘অত্যাচারিত হয়ে’ ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যারা ভারতে চলে এসেছেন, তাদের কাউকেই আর ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলা হবে না। অনুপ্রবেশসংক্রান্ত যাবতীয় মামলাও প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু দেশে অত্যাচারিত অমুসলমান নাগরিকদের সেই সংখ্যা কত, তার কোনো সঠিক হিসাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিতে পারেননি। এই বিষয়ে গত তিন বছরে একাধিক প্রশ্ন সংসদে তোলা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্তা নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি বলে আসামের কংগ্রেস সদস্য রিপন বোরা রাজ্যসভায় জানান। এই প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব অমিত শাহর কাছেও ছিল না। তবে বিল নিয়ে আলোচনার সময় তিনি বলেন, আইন না থাকায় কেউই সাহস করে নিজেকে শরণার্থী আখ্যা দিতে চাননি। এখন সবাই সাহসী হয়ে নিজেরাই এগিয়ে আসবেন। এখন দেখা যাবে সংখ্যাটা লাখ বা কোটি ছাড়িয়ে যাবে। কারণ, তারা নিজেদের প্রতারিত ভাববেন না। সম্মানিত বোধ করবেন।

রাজ্যসভার বিতর্কের শুরুতে তৃণমূল কংগ্রেসের সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, বিলের উদ্দেশে বলা হয়েছে, এই তিন মুসলমানপ্রধান রাষ্ট্রে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অথচ মূল বিলের কোথাও ধর্মীয় অত্যাচারিতদের উল্লেখ নেই। একাধিক সদস্য এ কথাও বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এমন লাখ লাখ শরণার্থী এ দেশে রয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর প্রধান অতীতে এই বিল নিয়ে আলোচনার সময় সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসে জানিয়েছিলেন, তিন দেশ থেকে মাত্র ৩১ হাজার ৩১৩ জন সংখ্যালঘু ভারতের নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন।

এই বিল সংবিধানবিরোধী এবং মুসলমানদেরও বিরুদ্ধে- সরকারকে দুটি সমালোচনা শুনতে হচ্ছে। এ কারণে রাজ্যসভায় বিল পেশ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার বলেন, ‘প্রচার চালানো হচ্ছে, এই বিল নাকি মুসলমানদের বিরুদ্ধে। আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, ওই অপপ্রচার পুরোপুরি মিথ্যা। এই বিল শুধু প্রতিবেশী তিন রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের জন্য। ভারতীয় মুসলমানরা কোনোভাবেই এই বিলের আওতায় আসছেন না।’

অমিত শাহ বলেন, ‘ভারতীয় মুসলমানরা নিরাপদে আছেন। নিরাপদেই থাকবেন। দয়া করে বিরোধীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না।’ তিনি বলেন, এই বিলের লক্ষ্য হচ্ছে তিন রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া। কারও নাগরিকত্ব কাটা হবে না। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো ভণিতা না করেই জানান, ‘কিছু মানুষের প্রশ্ন, কেন মুসলমানদেরও নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে না? আমরা কি সারা দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য নাগরিকত্বের দরজা খুলে দেব? তা হয় কি? এভাবে কোনো দেশ চলতে পারে না।’

কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা বলেন, এই বিল ভারতীয় সংবিধানের বিরোধী, নৈতিকতার বিরোধী, গণতন্ত্র ও মানবিকতারও বিরোধী। নাগরিকত্ব বিল এর আগেও সংশোধিত হয়েছে। কিন্তু কখনো ধর্মের আধারে হয়নি। অমিত শাহের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলেই আপনারা এটা করতে পারেন না। কেননা, কোনো দলের ঘোষণাপত্রের স্থান সংবিধানের ওপরে নয়।’ এই বিলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার অভিযোগ বিরোধীরা আনেন। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার অভিযোগ, ‘এনআরসি নিয়ে আপনারা যা করছেন, তাতে গোটা দেশকেই আপনারা “ডিটেনশন ক্যাম্প” করে ছাড়বেন।’

তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ও’ব্রায়ান শাসক দলের আচরণ ও প্রচারকে ‘হিটলারিয় কায়দার’ সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘আপনারা কোনো আশ্বাসই আজ পর্যন্ত রাখতে পারেননি। নোটবন্দি, কালোটাকা ফেরানো, আচ্ছে দিন, কোনোটাই নয়। এখন মুসলমানদের আশ্বস্ত করছেন। সেটাও রাখতে পারবেন না। ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিও আয়ত্ত করতে পারবেন না।’ তিনি আরও বলেন, এটা হলো ‘মেজরিটি বনাম মরালিটির লড়াই’।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.