Sylhet Today 24 PRINT

মিনা ট্রাজেডি : মিলনের পরেই চিরবিদায়!

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বাংলাদেশি হাজি মোহাম্মদ বেলাল। শুক্রবার মিনার ঘটনার পর আল জিসর হাতপাতালের রাস্তায় বসে ছিলেন স্ত্রীর মুখটা শেষবারের মতো দেখতে। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না এতো তাড়াতাড়ি স্ত্রীকে চিরদিনের মতো হারাতে হবে। দীর্ঘ ২০ বছর এই মিলনের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। নিমেষেই কীভাবে সবকিছু তছনছ হয়ে গেল!

মিনার দুর্ঘটনা থেকে কোনোরকম বেঁচে গিয়ে তিনি হন্যে হয়ে পাগলের মতো তার স্ত্রীকে খুঁজছিলেন। পরিচিত বাংলাদেশিদের কাছে জিজ্ঞেস করছিলেন কেউ তার স্ত্রীকে কোথাও দেখেছে কি না।

গতকাল শুক্রবার বেলাল সৌদি আল হায়াত পত্রিকাকে বলেন, ‘সে আমাকে কথা দিয়েছিল চিরদিন আমার সাথে থাকবে। কখনোই ছেড়ে যাবে না। কিন্তু এখন সে তো আমাকে চিরকালের মতো ছেড়ে গেল।’ এই বলে বিলাপ করতে থাকেন তিনি।

বেলাল সৌদি আরবে আছেন ২৫ বছর ধরে। তিনি বর্তমানে দাহরান আল জানুবে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন।

তিনি বলেন, ‘স্ত্রীকে এনে একসাথে হজ করার জন্য আমি বিশ বছর ধরে টাকা জমাইতেছি। দীর্ঘ দিন আমি তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন। অবশেষে এলো। কিন্তু আমি কয়েক সেকেন্ডের ভেতর তাকে হারালাম।’

হাসপাতালের সামনে বন্ধু আবদুল আলিম তাকে কোরআনের আয়াত পড়ে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। এরকম সময়ে ধৈর্য ধরতে হয়, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন- এই বলে বেলালকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তিনি।

ঘটনার পর মিনার রাস্তায় বসে তিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। এক পর্যায়ে কান্না থামিয়ে যখন বাংলাদেশি হাজিদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন তার স্ত্রী আর নেই তখন বেলাল বিলাপ শুরু করে দিলেন। ‘আমার স্ত্রী হজের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার আগেই মারা গেল। সে আমরা চোখের সামনেই মারা গেছে। সে কখনোই তার কলিজার টুকরা তিন সন্তানকে দেখতে পাবে না।’

বেলাল বলেন, তার স্ত্রী অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ছিলেন। হজ করতে আসতে পেরে সে খুবই আনন্দিত ছিল। সে আসার সময় ছেলে-মেয়েদের এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছিল যে মনে হচ্ছিল যেন এটাই শেষ যাওয়া।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বেলাল বলেন, তিনি ও তার স্ত্রী একসাথে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করছিলেন। এরপর তারা স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টায় জামারাহর পথে ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ২০৪ নম্বর সড়কে প্রবেশ করি তখন জামারাতে যেন মানুষের বান। আমরা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি কিন্তু দু’জনেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাই। অসংখ্য হাজি আমার গায়ের উপর এসে পড়ে। আর রাস্তা ছিল তখন আগুনের মতো গরম। আমি চিৎকার করে বলি- আমার স্ত্রীকে কেউ বাঁচান, কিন্তু কেউ শুনছিল না, সবাই ছিল নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত। বহু মানুষের নিচে চাপা পড়া আমার স্ত্রীকে টেনে বের করে আনার চেষ্টা করেও পারিনি। আমি দেখছিলাম ওর চোখদুটো বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকানো আর আঙ্গুলগুলো যেন পাথরের মতো উঁচু করে ধরা। ও চলে যাওয়ার আগে আমাকে ও ছেলে-মেয়েদের শেষ বিদায় জানাতে পারলো না।’

এখন বেলালের একমাত্র চাওয়া তার স্ত্রীর কবরটা যেন এই পবিত্র ভূমিতেই হয়। ও এখানে আরো যারা শহিদ হয়েছেন তাদের সাথে চিরনিদ্রায় শায়িত হোক।

বেলালের শারীরিক অবস্থাও ভলো নয়। মানুষের চাপে অনেক স্থানেই আঘাত পেয়েছেন, তপ্ত রাস্তায় মুখ পুড়ে গেছে।

অবশেষে চিকিৎসার জন্য তাকে মিনা আল জিসর হাসপাতালে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য নয় তিনি এখানে এসেছেন স্ত্রীর মুখটা শেষবারের মতো দেখতে।

সৌদি গ্যাজেট।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.