Sylhet Today 24 PRINT

ক্লান্তি মৃত্যু ডেকে এনেছিল সেই ১৬ জনের!

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৯ মে, ২০২০

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে একটি মালগাড়ির ধাক্কায় অন্তত ১৬ জন মারা গেছেন। এরা সকলেই ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন এবং লকডাউনের কারণে রেললাইন ধরেই পায়ে হেঁটে গ্রামে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। মৃতদের মধ্যে কয়েকটি শিশুও আছে। পাঁচজনকে আহত অবস্থায় ঔরঙ্গাবাদের সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

যে এলাকায় দুর্ঘটনাটি হয়েছে, সেখানকার স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে বলেছেন যে ওই শ্রমিকরা মধ্য প্রদেশের দিকে যাচ্ছিলেন রেললাইন ধরেই। এবং ক্লান্তিতে লাইনের ওপরেই ঘুমিয়ে পড়েন। শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ একটি মালগাড়ি তাদের ওপর দিয়ে চলে যায়।

বিজ্ঞাপন

লকডাউনের কারণে ভারতে ট্রেন চলাচল সাধারণ ভাবে বন্ধ থাকলেও মালগাড়ি যাতায়াত করছে এবং ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের নিজের রাজ্যে ফেরানোর জন্য বিশেষ কিছু ট্রেনও চলতে শুরু করেছে এক সপ্তাহ ধরে। তবে ওই শ্রমিকদের সম্ভবত ধারণা ছিল না যে মাঝে মাঝে মালগাড়ি বা বিশেষ ট্রেন চলাচল করছে।

ঔরঙ্গাবাদের পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট মোক্ষদা পাটিল বিবিসির মারাঠি বিভাগকে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কবলে পড়া সব শ্রমিকই জালনা নামের এক জায়গায় ইস্পাত কারখানায় কাজ করতেন এবং এরা মধ্যপ্রদেশের ভুসাওয়ালের দিকে যাচ্ছিলেন। তাদের ধারণা হয়েছিল ভুসাওয়াল থেকে তার নিজেদের গ্রামে ফেরার ট্রেন ধরতে পারবেন।

যেখানে দুর্ঘটনা হয়েছে, সেখান থেকে তাদের কাজের জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতে দুর্ঘটনাস্থলের যেসব ছবি এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে রেললাইনের ওপরে বেশ কিছু আটার রুটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।

এই দুর্ঘটনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে গিয়ে রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, "ট্রেনের চালক যখন দেখতে পান যে কিছু মানুষ রেললাইনের ওপরে শুয়ে আছেন, তখনই তিনি ব্রেক কষে ট্রেনটি থামানোর চেষ্টা করেন। ``কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। ট্রেনটি তাদের ধাক্কা মারে। গোটা ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"

যদিও রেললাইন ধরে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল, কিন্তু ২৪ মার্চ হঠাৎই লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ার পর থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বহু শ্রমিক ওইভাবেই পায়ে হেঁটে কয়েকশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গ্রামে ফিরেছেন।

বিজ্ঞাপন

অনেকের সঙ্গেই স্ত্রী, সন্তানরাও ছিলেন। এরকম বহু ছবি আর ভিডিও সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে দেখা গেছে, যেখানে খিদের জ্বালায় কাঁদতে কাঁদতেই ছোট্ট শিশুরা বাবা মায়ের হাত ধরে হাঁটছে।

কোথাও আবার কোনও শ্রমিকদের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকেও হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এর আগেও পায়ে হেঁটে গ্রামে ফেরার ক্লান্তিতে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের।

পশ্চিম বা দক্ষিণাঞ্চলের শিল্পোন্নত রাজ্যগুলিতে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যার মতো রাজ্যগুলি থেকে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকরা বলছেন হঠাৎ লকডাউন হয়ে যাওয়ায় মালিকরা বেতন দিচ্ছেন না, আর জমানো পুঁজিও প্রায় তলানিতে।

এই অবস্থায় শুধুই ভরসা সরকার বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর দেওয়া খাবার। সেই খাবারও বেশিরভাগ আটকিয়ে পড়া শ্রমিকই দিনে একবার করেই পাচ্ছেন। তাই শত শত কিলোমিটার পথ হেঁটে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.