Sylhet Today 24 PRINT

রিভিউ শুনানিতে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর অন্য কৌশল

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৯ অক্টোবর, ২০১৫

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পক্ষে মামলার বিচারিক ব্যবস্থা নিয়ে অপপ্রচার ও বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেওয়া অব্যাহত রয়েছে। এবার রিভিউ শুনানিতে তার পক্ষে সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। 

সাকা চৌধুরীর আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের দিন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা অনলাইনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান পাঁচ পাকিস্তানি সাকার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে চায় বলে প্রতিবেদন প্রকাশের পর এবার সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আটজন দেশি-বিদেশির নাম উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি আবেদন করা হয়েছে।

সাকা চৌধুরীর পক্ষে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ওই আটজনের নামে সমন জারির আবেদন জানানো হয়েছে।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) সকালে সুপ্রিম কোর্টে এ আবেদন জানানো হয়। সাকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান আল ফেসানী সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলছেন, বিচারের এ পর্যায়ে এসে এ ধরনের আবেদন ‘নজিরবিহীন’। 

তবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলার সময় পর্যাপ্ত সাক্ষ্য এবং তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। ওই সাজা বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, সালাউদ্দিন কাদেরের সপক্ষে দেয়া তথ্য-প্রমাণ বিচার করেই ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। অপরাধীর বেলায় রিভিউতে সাক্ষী ডাকার নজীর নেই। 

আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন চার পাকিস্তানি। অপর তিন জনের একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এছাড়াও বাংলাদেশের হাইকোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও তার মা-ও সাকার পক্ষে সাক্ষ্য দেবেন বলে সাকা চৌধুরীর আবেদনে বলা হয়েছে।  

যে আটজনের নামে সমন চাওয়া হয়েছে তারা হলেন- পাকিস্তানের স্থপতি মুনিব আরজুমান্দ খান, পাকিস্তানের ডন গ্রুপের চেয়ারম্যান আমবর হারুণ সায়গল, পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি, ভিকারুননিসা নূনের নাতি রিয়াজ আহমেদ নূন এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মিয়া মোহাম্মদ সুমরো।

বাকি তিনজন হলেন- যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক কূটনীতিক এম ওসমান সিদ্দিক, হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও তার মা জিনাত আরা বেগম।

এর আগে গত ১৪ অক্টোবর সাকার আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। যুদ্ধাপরাধী এ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে (অভিযোগ নং- ৩, ৫, ৬ ও ৮) তাকে ওই শাস্তি দেওয়া হয়।

এছাড়া তিনটি (অভিযোগ নং- ২, ৪ ও ৭) অভিযোগে তাকে ২০ বছরের ও দুটি (অভিযোগ নং- ১৭ ও ১৮) অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সাকা চৌধুরী।  সেখানেও তার সর্বোচ্চ সাজার রায়ই বহাল থাকে। ৩০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদের সঙ্গে তারও মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। এরপর দুজনের রায়েরই পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি একসঙ্গে আসে ট্রাইব্যুনালে। এরপর ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করলে তা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, মামলার রিভিউয়ের পর্যায়ে কোন আসামির পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণের কোন বিধান নাই বলে আইনজ্ঞরা ইতোমধ্যেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন এবং এ ধরনের কোন নজিরও নেই।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) অন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে বিচার প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিচারকদের কটূক্তি, আদালতকে উপহাস থেকে শুরু করে ট্রাইব্যুনালের রায় প্রকাশের আগের দিন খসড়া রায় ফাঁস হয়েছে এমন দাবি করা হয় তার পক্ষ থেকে। পরে দেখা যায় ফাঁস হয়ে যাওয়া রায়ের সঙ্গে মূল রায়ের সম্পর্ক নেই। 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.