Sylhet Today 24 PRINT

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ৩০ লাখেরও বেশি

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৯ মার্চ, ২০২১

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার শিকার শহীদদের সংখ্যা ত্রিশ লাখেরও বেশি বলে তথ্য প্রকাশ করেছে ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর এবং গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র।

জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সোমবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘গণহত্যার পাঁচ দশক: স্বীকৃতি, বিচার ও ইতিহাসের দায়’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। ড. মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে সেমিনারে গণহত্যা জাদুঘর প্রকাশিত গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর নতুন আটটি জেলা জরিপের মোড়ক উন্মোচন এবং সেমিনারে দুই অধিবেশনে জরিপ গ্রন্থগুলোর তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়। প্রথম অধিবেশনে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত ৬ষ্ঠ পিজিটি কোর্সের সনদ বিতরণ করা হয়।

‘গণহত্যার নতুন হিসাব’ শীর্ষক সেমিনারের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি এবং সম্মানিত অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক মামুন সিদ্দিকী, লেখক ও গবেষক আহম্মেদ শরীফ এবং গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি সম্পাদক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের। প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি, লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, ‘এ পর্যন্ত ২৮ জেলায় জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। ওই ২৮ জেলার যে তথ্য আমরা পেয়েছি, তাতে ৬৪ জেলায় গণহত্যার সংখ্যা দাঁড়াবে ধারণার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। সেক্ষেত্রে শহীদের সংখ্যাও হয়তো ৩০ লাখে সীমাবদ্ধ থাকবে না, আরও বেশি হতে পারে।

ড. মুনতাসীর মামুন আরও বলেন, ‘দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল- নতুন আটটি জেলাসহ মোট ২৮টি জেলায় এই জরিপ করতে গিয়ে দেখেছি, আমরা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বড় কম জানি। আমাদের মাথায় আধিপত্য বিস্তার করে আছে, বিজয়। খালি বিজয় দেখলে মুক্তিযুদ্ধের যে নিদারুণ যন্ত্রণা, সেটি কিন্তু পাবো না।’

তিনি জানান, ২৮টি জেলায় প্রাথমিক জরিপে ১১ হাজার ৩৫৬টি গণহত্যা, ৬৫৪টি বধ্যভূমি, ৮৪৬টি গণকবর ও ৯৯৮টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ সর্বমোট ১৩ হাজার ৮৫৪টির তথ্য পাওয়া গেছে। আগের ২০টি জেলায় যেখানে ছিল পাঁচ হাজার ১২১টি গণহত্যা, ৪০৪টি বধ্যভূমি, ৫০২টি গণকবর ও ৫৪৭টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ সর্বমোট ছয় হাজার ৫৭৪টি।

জরিপের তথ্যগুলো তুলে ধরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপকরা জানান, গণহত্যা জাদুঘরের জেলা জরিপ ও গণহত্যা নির্ঘণ্ট মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে দিচ্ছে। জাদুঘরের ডিজিটাল আর্কাইভ ও সংগ্রহশালা সম্পর্কে তুলে ধরে জেনোসাইড ডিনাইয়েল ল’ তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তারা।

উদাহরণ তুলে ধরে সেমিনারে জানানো হয়, জরিপের আগে মুন্সীগঞ্জ জেলায় মাত্র ১৩টি গণহত্যার কথা জানা ছিল। সাহাদাত পারভেজ ওই জেলায় জরিপ করে যে ফলাফল দিয়েছেন, তাতে ১৪৫টি গণহত্যা ছাড়াও সাতটি বধ্যভূমি, ৬৫টি গণকবর, ১৭টি নির্যাতন কেন্দ্রসহ মোট ২৩৪টির তথ্য জানা গেছে।

দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জরিপে যেভাবে নতুন নতুন গণহত্যার তথ্য উঠে আসছে, তাতে শহীদের সংখ্যা নিয়ে আর কেউ প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবেন না। এখন এসব স্থান রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’

পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙালিদের ভূমিকা এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নমূলক আচরণের নজির তুলে ধরেন তিনি। বলেন, এই স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু সুখী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নের জন্য তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন লড়াইয়ের পর এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল।

প্রথম অধিবেশনের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে হলেও এমন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সবাই যদি সমানভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষায় সচেতন হন, তাহলে নতুন করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধও সম্ভব হবে।

তিনি মুক্তিযুদ্ধের পরে একাত্তরের ভয়াবহতার স্মৃতিচারণ এবং কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে, তার কিছু নমুনা নিজের জীবন থেকে উল্লেখ করেন।

সম্মানিত অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ ড. মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবিরের উদ্যোগে গণহত্যার ইতিহাস ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত গবেষণা, গণহত্যা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা ও জাদুঘরের জরিপ কার্যক্রম ইত্যাদির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন সেমিনারে আরও বলেন, ‘গণহত্যার রাজনীতি আছে। একাত্তরে পাকিস্তান এই রাজনীতি করেছিল আমাদের দমন ও চিরদিনের জন্য কলোনি করে রাখতে। আর এখন ‘বিএনপি-জামায়াত চক্র’ গণহত্যা নিয়ে রাজনীতি করেছে। পঁচাত্তর থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও পরে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একাত্তরের গণহত্যার বিষয়টিকে বিস্মৃত ও মুছে দিতে চেয়েছেন। কারণটা হচ্ছে, গণহত্যার বিষয়টি থাকলে তাদের রাজনীতি থাকে না। কেননা, তারা পাকিস্তানি ধারায় পাকিস্তানি এজেন্ডা পূরণের রাজনীতি করছিলেন। গণহত্যার কথা থাকলে আলবদর, আলশামস, রাজাকার বা অন্য যারা কাজ করছে, যারা এই খুনে যুক্ত, তাদের কথাও চলে আসে।’

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, ভাষা, অঞ্চল - যে কারণেই হোক, বিশ্বকে গণহত্যার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হলে গণহত্যার স্বীকৃতি জরুরি। এই স্বীকৃতি গণহত্যায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পাশাপাশি দেশে দেশে গণহত্যাকারীদের বিচারের পথ সুগম করবে। একই সঙ্গে অপরাধ থেকে দায়মুক্তির কলঙ্ক থেকে ইতিহাসকে মুক্ত করবে।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.