Sylhet Today 24 PRINT

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৭ এপ্রিল, ২০২১

আজ ১৭ এপ্রিল; ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।

এরআগে একই বছরের ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলায় এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। পরের দিন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।

এছাড়াও ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়। তাজউদ্দীনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরে ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। একই সাথে প্রবাসী সরকারের এক অধ্যাদেশে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্যপ্রয়াত জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের নির্বাচিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি গোপনস্থানে মিলিত হয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) নির্বাচিত করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম পরে তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন।

মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা হলেন, এম মনসুর আলী (অর্থ বাণিজ্য ও শিল্প) এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি)। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি খন্দকার মোশতাক আহমদও (পররাষ্ট্র , আইন ও সংসদ) মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।

মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে থাকে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধরত অঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে প্রতিটিতে একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। তবে ১০নং বা নৌ সেক্টরে কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না, কমান্ডোরা যখন যে এলাকায় অভিযান করতেন সে সেক্টরের কমান্ডারের অধীনে থাকত। এ ছাড়াও জেড ফোর্স, কে ফোর্স ও এস ফোর্স নামে তিনটি ব্রিগেড গঠন করা হয়। মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম বৈদ্যনাথতলায় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এম.এন.এ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম.এন.এ। নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। আর সেই অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন ১৭ বছরের এক কিশোর মো. বাকের আলী। যিনি কয়েক বছর আগে কলেজ শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। সেদিন কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে তিনি এই দায়িত্বটি পালন করেছিলেন তার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে। বাকের আলী তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্তটির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বেশ আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি দর্শনা কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে বিহারী অধ্যুষিত দর্শনায় থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সুযোগ বুঝে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে ১৬ এপ্রিল বিকেলে বর্তমান মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর গ্রামের নিজ বাড়িতে চলে আসেন।

তিনি জানান, ‘ওইদিন রাতে শুনলাম ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলায় এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। কিসের সভা, কী উদ্দেশে হবে সবকিছুই রয়ে গেল অজানা। সকালে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে পায়ে হেঁটে সভাস্থলে পৌঁছে গেলাম। আমার স্কুল শিক্ষক দোয়াজউদ্দিন স্যার সেখানে ছিলেন। তিনি আমার হাত ধরে বলেন, আমাকে এ অনুষ্ঠানে কুরআন পাঠ করতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে বাকের আলীর শিক্ষক দোয়াজউদ্দিন বলেন, ‘বাকের স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সুললিত কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করতো। এ ছাড়াও সে ছিল ধর্মভীরু। তাই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাকেই টেনে নিয়েছিলাম।’

এদিকে ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নিলেও ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভায় মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হয়। মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। শুধু তাই নয়, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের এই প্রথম সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ভারত এবং ভুটান এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.