Sylhet Today 24 PRINT

তাঁর ছেঁড়া কান যেনো বাংলাদেশের মানচিত্র

মাইদুল রাসেল, সুনামগঞ্জ |  ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

১৯৭১ এর ৬ ডিসেম্বর। স্থানীয় রাজাকারেরা পাক বাহিনীকে নিয়ে হাজির হয় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার পেরুয়া গ্রামে। ওইদিন সুরমা নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয় ৪জন মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় ৩১ জনকে। এরপর তাদের হাত বেঁধে পিছন ‌দিকে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেয় হায়েনারা। এদের মধ্যে পেটে গুলি খেয়েও কোনরকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন ব্রজেন্দ্র দাস।

গুলিতে আহত ব্রজেন্দ্র গিয়ে হাজির হন প্রতিবেশী কুলসুম বিবির বাড়িতে। গোপনে তাকে শশ্রুষা করতে থাকেন কুলসমা। সে খবর রাজাকার মারফত পৌছে যায় পাক বাহিনীর কাছে। পাক বাহিনীর হাতে ধর্ষিত হন কুলসমা। পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় তার স্বামীকে। এরপর ব্রজেন দাসের বাড়ি গিয়ে তাঁর স্ত্রী প্রমিলা দাসেরও সম্ভ্রম কেড়ে নেয় ঘাতকদের দল। যাওয়ার সময় শেষে প্রমিলার কান ছিড়ে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় রাজাকারেরা।।

সেই ছেঁড়া কানের ক্ষত নিয়ে আজো বেঁচে আছেন প্রমিলা। তাঁর ছেঁড়া কান যেনো বাংলাদেশের মানচিত্র। ওই দিন পেরুয়া গ্রামের হিন্দু নারী-পুরুষদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে কলেমা পাঠ করায় রাজাকাররা।

৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ পাক বাহিনী মুক্ত হয়। সেদিন এমন নির্মম হত্যাযজ্ঞ ঘটে পেরুয়ায়। নির্বিচারে লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে পাক হায়েনারা।

সেই ভয়াবহ গা শিউরে ওঠা স্মৃতির কথা মনে করে এখনো রাজাকার ও তাদের দোসরদের নাম বলতে ভয় পান নির্যাতিতরা। এখনো কেউ সাহস পাচ্ছেন না মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়েরের। তবে এই গণহত্যার বিচার চেয়েছেন তারা। দাবি জানিয়েছেন, গণহত্যাস্থলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ও বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতির।

১৯৭১ সনে শ্যামারচর বাজারটি ছিল রাজাকারদের আস্তানা। ৬ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার অভিযোগে শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদের পরাজিত প্রার্থী আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে পেরুয়া গ্রামে গণহত্যা চালানো হয়। নির্বিচারে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষন চালানো হয় গ্রামটিতে। সম্পদ লুণ্ঠন শেষে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুরো গ্রাম।

সুরমা নদীর পাড়ে ৩১জনকে হত্যা করা হয়। ওইদিন রাজাকারদের রোষানল থেকে বয়স কম হওয়ায় বেঁচে যান কয়েকজন। গ্রামের নারী-পুরুষদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে তাদের কলেমা পাঠ করায় রাজাকাররা।

যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের তো দূরের কথা রাজাকারদের নাম বলতেও এখনো ভয় পান নির্যাতিতের পরিবার। কারণ হিসেবে জানা গেছে, রাজাকারদের সন্তানরাই এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থেকে সম্পদ ও শক্তিতে বলিয়ান হয়ে এখন এলাকা শাসন করছে। তারা এতটা প্রভাবশালী যে তাদের নাম এখনো নিতে ভয় পান এলাকাবাসী।

বর্তমানে বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবি ও সাবেক ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রিয় সভাপতি শিশির মনিরের পরিবারের লোকজন এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন দাবি করে নির্যাতিতের পরিবার এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

জেলার মুক্তিযোদ্ধারা এ নির্মম গণহত্যার কথা জানলেও বিষয়টি এখনো অনালোচিত রয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তারা। রাজাকার ও তার দোসদের ক্ষমতা, প্রভাব প্রতিপত্তির কাছে অসহায় নির্যাতিত লোকজন তাদের পরিবার নাম উচ্চারণ না করলেও রাজাকারদের বিচার দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, পেরুয়া গ্রামের হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের প্রক্রিয়া চলছে আর বীরাঙ্গণাদের সরকারি সহায়তার আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.