Sylhet Today 24 PRINT

নিজামীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল না, দাবি মাহবুবের

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধো ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছিল না বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে নিজামীর আপিলের শুনানি শেষে নিজ কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন খন্দকার মাহবুব।

তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় যাঁরা প্রধান আসামি ছিলেন, তাঁদের বিচার হচ্ছে না। যাঁরা তাঁদের সহযোগী ছিলেন বা সমর্থন করেছেন, তাঁদের বিচার করা হচ্ছে। মতিউর রহমান নিজামী ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল না। আপিল বিভাগে আশা করি তিনি ন্যায়বিচার পাবেন, যোগ করেন খন্দকার মাহবুব।

যুদ্ধাপরাধী নিজামীর এ প্রধান আইনজীবী বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনায় নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও সাক্ষীদের বক্তব্যে অসামঞ্জস্যতা পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি আদালত যদি প্রসিকিউশনের বক্তব্য বিশ্বাসও করে, তাহলেও তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া যাবে না। আমরা আদালতের কাছে ন্যায় প্রত্যাশা করি, বলেন সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ৬ জানুয়ারি এ বিষয়ে রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ রায় দেবেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের জবাবে আসামিপক্ষে যুক্তিখণ্ডন করেন নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এর মধ্য দিয়ে ১১তম কার্যদিবসে শেষ হলো আপিল মামলাটির শুনানি।

এর আগে সোমবার (৭ ডিসেম্বর) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। অন্যদিকে গত ৩০ নভেম্বর থেকে ০২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন কার্যদিবসে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান।

এ আপিল মামলার শুনানি শুরু হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালের রায়সহ মামলার নথিপত্র উপস্থাপন শেষ করেন আসামিপক্ষ।

আসামিপক্ষ বলেন, অপরাধ সংঘটিত হলেও নিজামী সে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন। এরপরও কোনো অভিযোগে যদি আদালত দোষী সাব্যস্ত করেন, তাহলে তাকে যেন চরম দণ্ড দেওয়া না হয়, সে বিষয়ে আদালতে আরজি জানান তারা।

নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।

প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

৫ ও ৯ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এগুলোও ছিল হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উস্কানি ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.