Sylhet Today 24 PRINT

জামায়াতে ইসলামীকে একাত্তরে পাকিস্তানীদের সহযোগী উল্লেখ করে সরকারের অধ্যাদেশ

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৫ জুন, ২০২৫

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন-২০২২-এর সংশোধনী অধ্যাদেশ জারি করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

গত মঙ্গলবার রাতে নতুন এই অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটি বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন- এমন বেসামরিক নাগরিকরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে নতুন অধ্যাদেশে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যদের নামোল্লেখের আগে “তৎকালীন” শব্দ যোগ করা হয়েছে, যা ২০২২ সালে আইনে ছিল না। 

অধ্যাদেশে একাত্তরের এপ্রিলে গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বা মুজিবনগর সরকারের সব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে সরকার।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অংশের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের যাদের বয়স ছিল এবং যারা মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত হবেন। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার ও দখলদার সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেছেন তারাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এই দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন- এমন বেসামরিক নাগরিকরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ-কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সংশোধিত অধ্যাদেশে। একই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের বীর মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করা হয়েছে।

তা ছাড়া সংজ্ঞা অংশের (ক)-তে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা যেসব নারীকে নির্যাতন করেছে (বীরাঙ্গনা) তাদের সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

সংশোধিত অধ্যাদেশে উপধারা (খ) অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফিল্ড হাসপাতালে যেসব ডাক্তার, নার্স, ও চিকিৎসা-সহকারীরা চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তাদের সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সংজ্ঞা অংশের ১২ উপধারাতে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

একই অংশের ১৪ নম্বরে বলা হয়েছে, মুজিবনগর সরকারের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য।

এই অংশের ১৫ নম্বরে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের ভেতরে এবং বিদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করা, মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করা, দ্রুত স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্ব জনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে যেসব নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন ও সহযোগিতা করেছেন তাদের মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী বলা হয়েছে।

তাদের মধ্যে বিদেশে অবস্থানকারী পেশাজীবী, মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং এই সরকারের অধীন নিয়োগ দেওয়া ডাক্তার, নার্স বা অন্য সহকারী, যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী বলা হয়েছে। এ ছাড়া মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা এমপিএ (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল অ্যাসেম্বলি) যারা গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন তাদেরও সহযোগী বলা হয়েছে সংশোধিত অধ্যাদেশে। দেশে ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্বপালনকারী সব সাংবাদিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকেও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এতে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
✉ sylhettoday24@gmail.com ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.