Sylhet Today 24 PRINT

এই দিনে তেলিয়াপাড়া বাংলো থেকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে শুরু হয় সমর সংগ্রাম

শাকিলা ববি, হবিগঞ্জ |  ০৪ এপ্রিল, ২০১৬

আজ (৪ এপ্রিল) ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগান ম্যানেজার বাংলোয় দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বৈঠকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকেই মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী।

স্বাধীনতার পর সেখানে বুলেট আকৃতির দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও ঐতিহাসিক এ স্থানটি সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।
 
এ বিষয়ে  জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মোহাম্মদ আলী পাঠান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ি সদরদপ্তর ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম প্রধান স্বাক্ষী তেলিয়াপাড়া ম্যানেজার বাংলো। মুক্তিযুদ্ধের এ স্মৃতিচিহ্নকে সংরক্ষনের জন্য আমরা অনেক কথা বলছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ২০১১ সালের মে মাসের ৭ তারিখে তেলিয়াপাড়াতে একটি মহাসমাবেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হেলাল মুর্শেদ খান বীর বিক্রম এ তেলিয়াপাড়াকে ভবিষ্যত প্রজন্মের উপস্থাপনের জন্য ঐ খানে একটি মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মানের ঘোষনা দিয়ে ছিলেন। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায় করে মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মানসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনের জন্য একটি মহা পরিকল্পনা করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতে পরবর্তিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় এ কমপ্লেক্সটি করার জন্য এলজিইডি কে দায়িত্ব দেয়া হয়। সে অনুসারে প্ল্যান, ইস্টিমিট সবই করা হয়।  কিন্তু পরবর্তিতে ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি ) বোর্ড অব ডাইরেক্টরির সিদ্ধান্ত নেয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষন করলে তাদের পরিবেশ নষ্ট হবে । তাদের এই  অজুহাতের কারনে আজ পর্যন্ত এ প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

তিনি আরো বলেন, সারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধাদের কাছে সমগ্র দেশবাসীর কাছে এই তেলিয়াপাড়া একটি ঐতিহাসিক স্থান কিন্তু সে হিসেবে আজ পর্যন্ত সরকার এক টাকা খরচ করে এ স্মৃতি সংরক্ষনের কোনো ব্যবস্থা করেন নাই। আমাদের প্রানের দাবী মহান মুক্তিযুদ্ধের এ স্মৃতিকে সংরক্ষন করা হউক। ম্যানেজার বাংলোকে যাদুঘর গোষনা করা হউক। আমরা এখনও আশা করি প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক এ স্থানটিকে সংরক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৪এপ্রিল ঐ বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মেজর সি আর দত্ত, মেজর জিয়াউর রহমান, কর্ণেল এম এ রব, রব্বানী, ক্যাপ্টেন নাসিম, আব্দুল মতিন, মেজর খালেদ মোশাররফ, কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, ভারতের ব্রিগেডিয়ার শুভ্রমানিয়ম, এমপিএ মৌলানা আসাদ আলী, লেঃ সৈয়দ ইব্রাহীম, মেজর কে এম শফিউল্লাহ।

তেলিয়াপাড়া চা বাগান ম্যানেজারের বাংলোটিকে ৩ নম্বর সেক্টরের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বৈঠক শেষে এম.এ.জি ওসমানী নিজের পিস্তলের ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের শপথ করেন। ওসমানী ও রবের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের নকশা প্রণয়ন এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ অনুষ্ঠিত হয়। শপথবাক্য পাঠ করান এম.এ.জি ওসমানী।

১ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান পরে মেজর রফিকুল ইসলাম। দুই নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন প্রথমে খালেদ মোশাররফ পরে মেজর হায়দার। তিন নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন প্রথমে মেজর শফিউল্লাহ পরে মেজর নূরুজ্জামান। চার নম্বর  সেক্টর কমান্ডার ছিলন মেজর সি আর দত্ত। পাঁচ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। ছয় নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন উইং কমান্ডার বাশার। সাত নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর কাজী নূরুজ্জামান। আট নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন প্রথমে মেজর ওসমান চৌধুরী পরে মেজর এমএ মনছুর। নয় নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন প্রথমে মেজর আবদুল জলিল এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন এমএ মঞ্জুর। দশ নম্বর সেক্টর নৌ-বাহিনীর সৈনিকদের নিয়ে গঠন করা হয়। এগার নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু তাহের ও পরে ফ্লাইট লেঃ এম হামিদুল্লাহ।

মুক্তিবাহিনীকে ৩টি ব্রিগেডে ভাগ করে পরিচালনার জন্য ৩ জনকে দায়িত্ব দেন জেনারেল ওসমানী। জিয়াউর রহমানের নাম অনুসারে জেড ফোর্স জিয়াউর রহমানের দায়িত্বে, মেজর শফিউল্লাহর নামানুসারে এস ফোর্স মেজর সফিউল্লাহর দায়িত্বে এবং খালেদ মোশাররফের নাম অনুসারে অপর ব্রিগেড কে ফোর্সের দায়িত্ব দেয়া হয় মেজর খালেদ মোশাররফের উপর।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কেএম শফিউল্লাহ্ তাঁর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করেন তেলিয়াপাড়া চা বাগানে। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখান থেকে মুক্তি বাহিনী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে উঠে। ১৯৭১ সালের ২১ জুনের পরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেড কোয়ার্টার তুলে নেয়া হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.