Sylhet Today 24 PRINT

ঐতিহাসিক ৭মার্চ: মুক্তিসংগ্রামের অনিবার্য রূপ মুক্তিযুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৭ মার্চ, ২০১৫

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। মুক্তিসংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের সুস্পষ্ট ডাক দেওয়ার এক অবিনাশি দিন। এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা ১৯৭১ সালের এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়ে গিয়ে বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

এই প্রজন্মের কেউ সে উত্তাপ, সে উত্তেজনা আর দিক নির্দেশনা ধারণ-ধারণ অনুধাবণ করতে পারবে না সেভাবে কিন্তু তার কিছুটা উত্তাপ, উপস্থাপনা বজ্রকণ্ঠ ধারিত ভাষণ অনুধাবণ করতে পারে নির্মলেন্দু গুণ’র কবিতার মাধ্যমে। যেখানে কবি বর্ণনা করেছিলেন রেসকোর্স বর্তমানের সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের সে পরিবেশ।

কবিতায় কবি লিখেন-“একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য কি দারুণ অপেক্ষা আর উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে, জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি’?....শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মত দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন.... কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।”

এর আগে ৩ মার্চ পল্টনের জনসমাবেশে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ৬ মার্চের মধ্যে যদি সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন না করে তাহলে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

৩ মার্চের পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চরম দমন-পীড়নে বিক্ষুব্ধ মানুষ নতুন কর্মসূচির অপেক্ষায় ছিল। ভোর হতেই চারদিক থেকে মানুষের ঢল নামে রেসকোর্স ময়দানে। ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল রেসকোর্স ময়দান।

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা যাতে না দেন, তার জন্য মার্কিন সরকার তৎপরতা শুরু করে। ৭ মার্চ সকালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বরে সাক্ষাত করেন। স্বল্প সময়ের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পরিষ্কার ভাষায় ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের কথা বঙ্গবন্ধুকে জানান। তিনি বলেন- ‘পূর্ববাংলায় স্বঘোষিত স্বাধীনতা হলে যুক্তরাষ্ট্র তা সমর্থন করবে না।’ 

বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন, ‘...এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়- তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। ...আমি যদি তোমাদের হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা সব বন্ধ করে দেবে। ...রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব। তবু এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ওইদিন একই মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আগে বক্তব্য দিয়েছিলেন আসম আবদুর রব, নুরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।

স্বাধীনতার জন্য সারাদেশ থেকে ছুটে আসা পিপাসার্ত মানুষের তৃষ্ণা মিটে বঙ্গবন্ধুর মাত্র ১৯ মিনিটের অমর কবিতায়, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণে। এই একটি ভাষণেই নিরস্ত্র বাঙালীকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেন বঙ্গবন্ধু। বিশ্বের ইতিহাসে কোন রাষ্ট্রনায়ক বা নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা পূর্ব এই ধরনের ভাষণ দেয়ার নজির নেই। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার দিন থেকেই মূলত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার অঙ্কুরোদগম ঘটতে থাকে বাংলাদেশে।

২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে তারা। আওয়ামিলীগ নেতা আবদুল হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন, এরপর আরও অনেকেই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এ ঘোষণা পাঠ করার পর ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমানও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

মুক্তি সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ঝাঁপিয়ে পড়া মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, বিকাল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে দলটি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘অসহযোগ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.