Sylhet Today 24 PRINT

হান্নানের আসন শূন্য বিষয়ে সংসদকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে : তুরিন আফরোজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৫ নভেম্বর, ২০১৬

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন জাতীয় পার্টি (এরশাদ) দলীয় সংসদ সদস্য এমএ হান্নান সংসদে একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক-দিবস অনুপস্থিত রয়েছেন, কিন্তু অদ্যাবধি তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল ঘোষণা করা হয় নি। এমন পরিস্থিতিতে আইনজ্ঞরা বলছেন সংবিধান অনুযায়ি তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সংবিধানের ৬৭(১)(খ) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হইবে, যদি সংসদের অনুমতি না লইয়া তিনি একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক দিবস অনুপস্থিত থাকেন।’

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি হওয়া জাতীয় পার্টি দলীয় এ সাংসদকে ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে বর্তমান দশম সংসদের ৫টি অধিবেশন সমাপ্ত হয়েছে। এ অধিবেশনের মধ্যে সংসদের বৈঠক দিবস ছিল ঠিক ৯০টি, এবং সবগুলো বৈঠক-দিবসে তিনি সংসদের অনুমতি না নিয়েই অনুপস্থিত ছিলেন। সংবিধান অনুযায়ি এক্ষেত্রে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের কারও সঙ্গে কথাও বলা সম্ভব হয় নি।

জানা যায়, ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সাংসদ এমএ হান্নানের গ্রেপ্তারের পর দশম সংসদের অষ্টম অধিবেশন ১২, নবম অধিবেশন ২৭ দিন। দশম ৯ ও একাদশ অধিবেশন চলে ৩২ কার্যদিবস। দ্বাদশ অধিবেশন চলে মোট ১০ কার্যদিবস।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে 'সদস্যদের আসন শূন্য হওয়া' বিষয়ে বলা হয়েছে- ৬৭(১) কোন সংসদ-সদস্যের আসন শূন্য হইবে, যদি (ক) তাঁহার নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে নব্বই দিনের মধ্যে তিনি তৃতীয় তফসিলে নির্ধারিত শপথ গ্রহণ বা ঘোষণা করিতে ও শপথপত্রে বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরদান করিতে অসমর্থ হন: তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ মেয়াদ অতিবাহিত হইবার পূর্বে স্পীকার যথার্থ কারণে তাহা বর্ধিত করিতে পারিবেন; (খ) সংসদের অনুমতি না লইয়া তিনি একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক-দিবস অনুপস্থিত থাকেন;

জাতীয় পার্টি দলীয় এ সাংসদ দশম সংসদের একাদিক্রমে ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত রয়েছেন, এবং অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে অবহিত করে সংসদের কোন অনুমোদনও নেন নি।

অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী আব্দুল হান্নানের সংসদে টানা ৯০ দিনের অনুপস্থিতিতে সংসদ সচিবালয় ও স্পীকারের কী করণীয় এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, 'সংসদকে বিষয়টি প্রথমে সংবিধান অনুযায়ী আমলে নিতে হবে। তারপর সংসদকে অবশ্যই একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটবে'।

উল্লেখ্য, ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এমএ হান্নানের বিরুদ্ধে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ত্রিশালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন ১৯ জুলাই ২০১৫ তারিখে জেলা আদালতে মামলা করেন। এতে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতা হান্নানের সঙ্গে মামলায় অন্য দুই আসামি হলেন ময়মনসিংহ সদরের ফখরুজ্জামান ও গোলাম রব্বানী। এরপর ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালতের হাকিম আহসান হাবিব এজাহারটি নিয়ে তা ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) পাঠাতে ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় একাত্তরের ৯ অগাস্ট ময়মনসিংহ জেলা শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক হান্নান তার সহযোগী রাজাকারদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রহমানকে গৌরীপুরের ভাংনামারীর চর থেকে ধরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টর্চার সেলে’ নিয়ে দুই চোখ উপড়ে এবং ডান হাত ভেঙে ফেলার পর হত্যা করেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.