Sylhet Today 24 PRINT

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ধর্ষণকে গণহত্যা স্বীকৃতি ট্রাইব্যুনালের

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৯ এপ্রিল, ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশিয় দোসরদের ধর্ষণকে গণহত্যা স্বীকৃতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) কিশোরগঞ্জের সৈয়দ মো. হুসাইন ওরফে হোসেন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনাল এ পর্যবেক্ষণমূলক স্বীকৃতি দিয়েছেন।

রায়ের পর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় হওয়া ধর্ষণকে জেনোসাইড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। দালিলিক সাক্ষ্য প্রমাণেও কোনও ঘাটতি না থাকে সেদিকে সচেষ্ট ছিলাম। অবশেষে ট্রাইব্যুনাল আজ এই রায়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধকালীন ধর্ষণকে জেনোসাইড ঘোষণা দিলেন।’

তিনি আরও বলেন, দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে আনা চতুর্থ অভিযোগে তারা ধর্ষণকে জেনোসাইড হিসেবে হাজির করেছিলেন এবং ট্রাইব্যুনাল এই অভিযোগে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে থাকা ছয় অভিযোগের মধ্যে চতুর্থ অভিযোগ অনুসায়ী, নিকলীর নানশ্রী গ্রামে হিন্দু নারীদের ধর্ষণ ও হিন্দুদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর ৩৪ জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আসামি হুসাইনের মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে। হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নারীদের চিহ্নিত করে ধর্ষণের ঘটনাকে আদালত বিবেচনা করেছে জেনোসাইডের সমতুল্য বলে বিবেচনায় নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।

এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণকে জেনোসাইড (গণহত্যা) উল্লেখ করে প্রথমবারের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। ওই সময় প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ধর্ষণকে গণহত্যার সমতুল্য ঘোষণার বিষয়টি উপস্থাপন করে বলেন, ‘একাত্তরে নারী ধর্ষণ জেনোসাইড হিসেবে ঘোষণার সুযোগ আছে।’

যুক্তিতর্কের পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এই মামলায় আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণ ও ধর্মান্তকরণকে গণহত্যার সমতুল্য হিসেবে ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। সেজন্য আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত বিভিন্ন বিচারের নজির তুলে ধরেছি।’

দুই আসামির বিরুদ্ধে থাকা ছয়টি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও বাকি অভিযোগগুলোতে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ইন্টারপোলের সহায়তা নিয়ে পলাতক আসামির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ৪ নং অভিযোগে দুজনই এবং ৩ নং অভিযোগে মো. হুসাইন ওরফে হোসেন এককভাবে পেয়েছেন মৃত্যুদণ্ড।

দুই আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৯ মে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয় ট্রাইব্যুনালে। এক বছরের কম সময়ের মধ্যেই এই বিচার শেষে মামলাটি সিএভি রাখেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার ৬২টি, অপহরণ ও আটক ১১জনকে এবং লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ আড়াইশ বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ছিল।

মোসলেম প্রধান কারাগারে থাকলেও মো. হুসাইন ওরফে হোসেন পলাতক রয়েছেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে আনা ছয় অভিযোগ:
প্রথম অভিযোগ, একাত্তর সালের আগস্টের মাঝামাঝি থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিকলীর দামপাড়া গ্রাম ও নিকলী থানা ভবন, সদরের মহাশশ্মান এলাকায় আসামি হোসেন ছয় নারীকে ধর্ষণ, সুধীর সূত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মনসহ চার জনকে নির্যাতন করে।

দ্বিতীয় অভিযোগ, হোসেন ও মোসলেম দুজনের বিরুদ্ধেই একাত্তরের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে সৈয়দ হোসেন ও মোসলেম প্রধানের নেতৃত্বে নিকলী বাজার ও থানা কম্পাউন্ড এলাকায় কাশেম আলীসহ চারজনকে আটক ও নির্যাতন করা হয়।

তৃতীয় অভিযোগ, নিকলীর গুরুই গ্রামের পূর্বপাড়ায় ১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ফুল মিয়াসহ ২৬ জনকে হত্যা এবং আড়াইশ বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের উল্লেখ আছে।

চতুর্থ অভিযোগ, হোসেনের বিরুদ্ধে এতে বলা হয়েছে, একাত্তর সালের ২১ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিকলীর নানশ্রী গ্রামে তোফাজ্জল খান জিতুসহ সাতজনকে অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়।

পঞ্চম অভিযোগ, হোসেন ও মোসলেম দুজনের বিরুদ্ধেই। একাত্তর সালের ১০ অক্টোবর নিকলী সদরের পূর্বগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল মালেককে তার নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।

ষষ্ঠ অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহান ও মো. সেলিমকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ রাজাকার হোসেন কিশোরগঞ্জ পৌরসদর, প্যারাভাঙা ও শোলাকিয়ায় রিকশা দিয়ে ঘুরানো ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহানের মাকে তার ছেলের রক্ত দেখিয়ে বীভৎসতার প্রমাণ রেখেছিলেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.