Sylhet Today 24 PRINT

একাত্তরে পাগলের অভিনয় করে বেঁচে যান মহিউদ্দিন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমি সদর দপ্তরের কাছে গ্রেপ্তার হন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন দীর্ঘ চার মাস। পরে পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন সম্মুখসমরে। যুদ্ধ করেন ভারত-বাংলা যৌথ বাহিনীর মাউন্টেন ডিভিশনের অধীনে। নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’তে যুদ্ধকালীন সেসব স্মৃতির কথা লিখে যান চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ।

‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’য় মহিউদ্দিন চৌধুরী লেখেন, জন্ম চট্টগ্রামে রাউজানে হলেও বাবার চাকরির সুবাধে বিভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করতে হয় তাকে। তিনি পড়েছেন মাইজদি জিলা স্কুল, চট্টগ্রাম নগরীর কাজেম আলী ইংলিশ হাইস্কুল ও প্রবর্তক সংঘে। স্কুলজীবনেই তিনি জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। মাধ্যমিক শেষে বাবার আদেশে ভর্তি হয়েছিলেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে। সেখানের পাঠ না চুকিয়ে পরে ভর্তি হন চট্টগ্রামের অন্যতম বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম কলেজে। বছর না ঘুরতেই কমার্স কলেজ, আর শেষমেশ সিটি কলেজ। সিটি কলেজেই তার বিপ্লবী রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

ছাত্র অবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া মহিউদ্দিন ১৯৬২ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি ও ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং পরে আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ করেননি। জড়িয়ে পড়েন ছাত্র আন্দোলনে। ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দিন একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী।

রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর সান্নিধ্যে আসেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিতে গিয়ে পাকবাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হন অসংখ্যবার।

সম্মুখসমরের যোদ্ধা মহিউদ্দিন স্বাধীনতার পর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পান। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুর প্রিয়ভাজন। পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর প্রতিশোধ নিতে মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে মহিউদ্দিন গঠন করেন ‘মুজিব বাহিনী’। সে সময় ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা’র আসামি করা হলে তিনি পালিয়ে কলকাতায় চলে যান। এরপর ১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন বলে আত্মজীবনীতে উল্লেখ করে গেছেন এ রাজনীতিবিদ।

দেশে এলে তার ওপর আরোপিত হয় একের পর এক হুলিয়া। শুরু হয় সামরিক বাহিনীর হাতে নির্যাতন এবং একের পর এক কারাভোগ। জিয়া সরকারের আমলে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন মহিউদ্দিন। এ সময় তার ভয়ে তটস্থ থাকতেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দিতেও তিনি ভূমিকা রাখেন। দেশে ফিরে আসার পর শেখ হাসিনাকে নগণ্য করতে যখন ষড়যন্ত্রকারীরা তত্পর, তখন অদম্য সাহসী মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে দলবল নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। সব বাধা অতিক্রম করে শেখ হাসিনাকে দলের কাণ্ডারির দায়িত্ব নিতে সহায়তা করলেন।

এরপর এরশাদ সরকারের শাসনামলে স্বয়ং এরশাদকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সরকারের চক্ষুশূল হন মহিউদ্দিন। এ সময় আবারো রাজনৈতিক বন্দিজীবন কাটে তার। ততদিনে চট্টগ্রামের মানুষের প্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.