Sylhet Today 24 PRINT

রংপুরের ত্রাস আজহারের ফাঁসি আপিলেও বহাল

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ৩১ অক্টোবর, ২০১৯

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। মুক্তিযুদ্ধকালীন রংপুর অঞ্চলের ত্রাস এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসিকাষ্ঠেই যেতে হবে।

জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহার একাত্তরে ছিলেন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি এবং আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার। সে সময় তার নেতৃত্বেই বৃহত্তর রংপুরে গণহত্যা চালিয়ে ১৪ শ’র বেশি মানুষকে হত্যা, বহু নারীকে ধর্ষণ ও অপহরণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল বলে এ মামলার বিচারে উঠে আসে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার মাত্র এক মিনিটে রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেয়। আপিল আংশিক মঞ্জুর হলেও তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে। এই বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা এবং বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।

প্রায় পাঁচ বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে তিন অভিযোগে এটিএম আজহারের মৃত্যুদণ্ড এবং দুই অভিযোগে মোট ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। আপিলের রায়েও রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা ও হত্যার তিন ঘটনায় তার মৃত্যুদণ্ড সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতের ভিত্তিতে বহাল থাকে।

অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের আরেকটি ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেওয়া পাঁচ বছরের সাজাও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতের ভিত্তিতে বহাল রাখা হয়।

আর বহু নারীকে রংপুর টাউন হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রে ধর্ষণের জন্য তুলে দেওয়ায় ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে আজহারের ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হলেও এ অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছে আপিল বিভাগ।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর আপিলে আসা এটি অষ্টম মামলা, যার ওপর চূড়ান্ত রায় হলো।

নিয়ম অনুযায়ী আসামি এই রায় পর্যালোচনার আবেদন করতে পারবেন। তাতে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত না বদলালে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তাতেও তিনি বিফল হলে সরকার সাজা কার্যকরের পদক্ষেপ নেবে।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আসামির প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “চারজন জাজের ভেতরে তিনজন জাজ একমত হয়ে ফাঁসি বহাল রেখেছেন। আরেকজন দ্বিমত পোষণ করেছেন। এরপর আমরা পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে রিভিউ করব। আমরা আশাবাদী যে রিভিউতে অন্তত ফাঁসির আদেশটা থাকবে না।”

রাষ্ট্রপক্ষে এ আপিল মামলায় শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাৎক্ষণিকভাবে রায় নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, “রায়ে আমরা খুশি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতদিন যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল, সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি।”

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ অগাস্ট মগবাজারের বাসা থেকে আজহারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ১২ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার। বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগে রায় ঘোষণার সময় আজাহার ছিলেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।

সিনিয়র জেল সুপার মো. শাজাহান বলেন, “আদালতের কাগজপত্র পাওয়ার পর আমরা অফিসিযালি তাকে রায় জানাব।”

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.