Sylhet Today 24 PRINT

রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

রাজাকারের তালিকায় অনেক গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে আলোচনা-সমালোচনার সময়ে এই তালিকা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে মন্ত্রী বলেছেন, ভুলের পরিমাণ বেশি হলে তালিকা প্রত্যাহার করা হবে। আর ভুলভ্রান্তির পরিমাণ কম হলে ভুলবশত যাদের নাম তালিকায় এসেছে, সে নামগুলো প্রত্যাহার করা হবে।

মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে তাকে উৎসর্গকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম খানের ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং আমি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মন্ত্রী বলেন, এ তালিকার ভুলের দায় আমরা এড়াতে পারি না। যেসব অভিযোগ পাব, যাচাই করে সেসব নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। আগামীতে আগে যাচাই-বাছাই করে পরে তালিকা প্রকাশ করা হবে।

মহান বিজয় দিবসের আগের দিন রোববার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সচিবালয় সংলগ্ন সরকারি পরিবহন পুল ভবনের ৬ তলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এ তালিকার প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করেছিল বরিশালের আইনজীবী সুধীর কুমার চক্রবর্তীকে। তার ছেলে আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রথম ধাপে রাজাকারের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে তপন কুমারের নাম এসেছে। একই সঙ্গে আছে তার মা প্রয়াত ঊষা চক্রবর্তীর নামও।

একইভাবে রাজশাহী, বরগুনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও বগুড়ায় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম এসেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত। এসেছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার নামও। ফলে এই তালিকা নিয়ে ওই সব এলাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে এই তালিকা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।

তালিকায় নাম এসেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর মো. মজিবুল হকের (নয়া ভাই) নাম। নিজের অত্যন্ত প্রিয় মানুষটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হক চাচা বলে সম্বোধন করতেন। ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর মারা যান মজিবুল হক।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় চারজনের নাম থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুল হক ছাড়াও আমির হামজা ওরফে রুস্তম খাঁ ও খলিলুর রহমান ওরফে মানিক গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মৃত্যুর পর দুই পরিবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছে। কিন্তু তাদের নাম এসেছে তালিকায়। এ ছাড়া আমজাদ আলী নামের একজনের নাম এসেছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে না গেলেও আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন।

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রাজাকারদের নামের তালিকায় সাবেক সাংসদ ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কছিম উদ্দীন আহম্মেদ, সাবেক এমএনএ মজিবর রহমান, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মৃত ফরেজ উদ্দীন আহম্মেদ, আওয়ামী লীগ নেতা তাহের উদ্দীন সরদার, আওয়ামী লীগ নেতা মৃত মহসিন আলী মল্লিক, লাইব্রেরিয়ান মৃত হবিবর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা নজিবর রহমান, সান্তাহার কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি আবদুস শুকুরের নাম এসেছে।

এদিকে রাজশাহী বিভাগের তালিকায় আইনজীবী গোলাম আরিফের নাম আছে। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় নেই। এই গোলাম আরিফ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি (প্রসিকিউটর) গোলাম আরিফ টিপু কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আইনজীবী আবদুস সালাম ও মহসিনের নামও আছে এই তালিকায়। এ নিয়ে রাজশাহীতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তালিকায় নিজের নাম দেখে বিস্মিত গোলাম আরিফ টিপু এনিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলছেন, এর বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার চাইতে তিনি আদালতে যাবেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.