Sylhet Today 24 PRINT

সেক্যুলার শিশুদের চেয়ে ধার্মিক শিশুরা বেশি সংকীর্ণমনা

ওয়েব ডেস্ক |  ১০ নভেম্বর, ২০১৫

গবেষণায় দেখা গেছে যেসব পরিবারে ধর্মচর্চা হয় সেসব পরিবারের শিশুরা ধর্মচর্চাহীন পরিবারের শিশুদের চেয়ে কম দয়ালু এবং বেশি দন্ডপ্রিয় হয়। শুক্রবার (৬ নভেম্বর) দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ম ও নৈতিকতার মধ্যে সম্পর্ক পরীক্ষা করে দেখতে বিশ্বজুড়ে খ্রীষ্টান, মুসলিম ও ধর্মচর্চাহীন পরিবার এর শিশুদের মধ্যে এই গবেষণা চালায় ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়।  গবেষণায় দেখা যায়, শিশুদের নিঃস্বার্থ হবার শিক্ষার পথে ধর্মীয় বিশ্বাস নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

এই সপ্তাহে প্রকাশ হওয়া ‘বিশ্বজুড়ে ধর্মচর্চা ও শিশুদের নিঃস্বার্থপরতার মধ্যে নেতিবাচক সম্পর্ক’ বইয়ের লেখকরা বলেন, “ধার্মিক পরিবারের শিশুরা অন্যদের প্রতি নিঃস্বার্থ ও দয়ালু হয়, এই প্রচলিত ও জনপ্রিয় ধারণার সাথে আমাদের গবেষণা ফলাফল এর বিরোধ রয়েছে”।

তারা আরো বলেন, “উপরন্তু, এই ফলাফলে প্রশ্ন উঠে যে নৈতিক উন্নয়ন এর জন্য ধর্ম আদৌ অপরিহার্য কিনা। এই গবেষণা সমর্থন করে যে সেক্যুলারিজম আসলে মানবিক সহানুভূতিকে কমিয়ে দেয় না, বরং এর উল্টোটাই করে”।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, জর্দান, তুরস্ক এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পাঁচ থেকে বারো বছর বয়সী প্রায় ১২০০ শিশু এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে ২৪% খ্রিস্টান, ৪৩% মুসলিম এবং ২৭.৬% ছিল অধার্মিক। ইহুদী, বৌদ্ধ, হিন্দু, অজ্ঞেয়বাদী এবং অন্য শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল অতি সামান্য।

গবেষণায় শিশুদের বলা হয় স্টিকার পছন্দ করার জন্য এবং তারপরেই বলা হয় যে এখানে স্কুলের সব বাচ্চাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই, এটা দেখার জন্য যে তারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয় কিনা। শিশুদের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তাদেরকে একটি চলচ্চিত্রও দেখানো হয় যেখানে শিশুরা একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কি করছিল।

ফলাফলে খুব জোরালোভাবেই দেখা যায়, বিশ্বের প্রধান দু’টি ধর্মপরিচয় (খ্রিস্টান ও ইসলাম) বহনকারী পরিবারের সন্তানেরা ধর্মপরিচয় বহন না করা পরিবারের সন্তানদের চেয়ে সংকীর্ণমনা। এমনকি বয়সে একটু বড় শিশুরা যারা নাকি ধর্মীয় আচার আচরণে বেশি সময় কাটিয়েছে তারা সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক সম্পর্ক প্রদর্শন করে।

গবেষণায় আরো দেখা যায়, ধর্মচর্চা শিশুদের মধ্যে শাস্তি দেয়ার প্রবণতাকে প্রভাবিত করে। ধার্মিক পরিবারের শিশুরা অন্যদের কর্মকান্ডের প্রতি বেশি অবিবেচকসুলভ হয়।

ধর্মচর্চাহীন পরিবার কিংবা খ্রিস্টান পরিবারের শিশুদের চেয়ে মুসলিম পরিবারের সন্তানরা ব্যক্তিগত ক্ষতিকে বেশি ক্ষতিকর বলে বিচার করে। এমনকি অন্য দুই ধরণের পরিবারের শিশুদের চেয়ে মুসলিম পরিবারের শিশুরা এক্ষেত্রে কঠোরতর শাস্তি দাবী করে।

একইসাথে গবেষণায় বলা হয়, অন্যদের তুলনায় ধার্মিক পিতামাতারা তাদের সন্তানদের বেশি সহানুভূতিশীল ও বেশি বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মনে করেন। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, সমগ্র বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮৪% মানুষ ধার্মিক। গবেষণায় আরো বলা হয়, “যদিও এটা স্বাভাবিকতই মেনে নেয়া হয় যে ধর্ম মানুষের নৈতিক বিচার এবং প্রগতিশীল সামাজিক আচার ব্যবহারকে ব্যহত করে, তবু ধর্ম আর নৈতিকতার মধ্যে সম্পর্ক একটি বিতর্কিত ব্যাপার”।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল সেক্যুলার সোসাইটির কেইথ পরটিউস উড বলেন, “নৈতিকতার পূর্বশর্ত ধর্ম এই ধারণার বিপরীতে এই গবেষণা একটি ভালো প্রতিষেধক”।

তিনি আরো বলেন, “এই ক্ষেত্রে আরো গবেষণা দেখতে ভালো লাগবে। কিন্তু আমরা আশা করি যে এর ফলে অন্তত ‘বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে ধর্মীয় নীতি স্বাভাবিকভাবেই উত্তম’ এই ধারণার পরিবর্তন হবে। আমরা মনে করি সব ধরণের বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী মানুষ তাদের নিত্য নৈমিত্তিক জীবনে একই ধরণের নীতি আদর্শ মেনে চলেন, অবশ্য দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে তারা হয়তো একেকজন সেটা একেকভাবে প্রকাশ করবেন”।

সৌজন্যে : জাগরনীয়া

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.