Sylhet Today 24 PRINT

করোনাকালে রমজানে কি খাবেন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২১ এপ্রিল, ২০২১

এই করোনা মহামারির সময় এবার শুরু হয়েছে রমজান মাস। সাধারণত এ মাসের খাবার অন্যান্য মাসের থেকে সবাই একটু আলাদা হয়। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে রোজা রেখে যাতে সবাই পর্যাপ্ত পুষ্টি পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য দরকার সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ এবং সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার।

কিন্তু সারা দিনের রোজার পর ইফতারে অনেক কিছুই খেতে ইচ্ছা করে। ভাজাপোড়া ও ভারী খাবার খেলে অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যার সঙ্গে ওজন ও বাড়তে পারে। তাই শরীর সুস্থ ও দেহের ওজন না বাড়িয়ে পুরো রমজান মাস ভালো থাকার জন্য একটা ব্যালেন্স ডায়েট বা সুষম খাবারের দরকার।

এবার যেহেতু অনেক গরম থাকবে, তাই শরীরকে হাইড্রেট রাখতে প্রচুর পানি, মৌসুমি ফল ও সবজির জুস বা স্মুদি এ ধরনের তরল, ঠাণ্ডা ও আঁশ জাতীয় খাবার রাখতে হবে। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত জুস না খেয়ে প্রাকৃতিক খাবার থেকে অ্যানার্জি নেওয়াই ভালো। প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। একসঙ্গে বেশি পরিমাণ পানি পান না করে ইফতার ও সেহরির মধ্যবর্তী সময়ে অল্প অল্প করে বারবার পানি পান করা উচিত। আর সেইসঙ্গে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবারই খেতে হবে।

সেহরির খাবার
রোজায় সেহরির খাবার হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; তাই এটি যেন কোনোভাবেই বাদ না পড়ে। কারণ না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। আবার অতিরিক্ত খেলেও সারা দিনের ক্ষুধা মেটানোও সম্ভব নয়। তাই খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটু খেয়াল রাখলেই ক্ষুধাকে বিলম্বিত করা সম্ভব। সেহরির খাবার সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে, যাতে সারা দিন রোজা সুস্থভাবে পালন করা যায়। আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে এবং খাবারগুলো ভুনা না হয়ে কম তেল, মসলার ঝোলের তরকারি হলে সবচেয়ে ভালো হয়। তাহলে সারা দিন ভালো যাবে।

সেহরিতে যে খাবারগুলো থাকতে পারে
ভাত, যদি সম্ভব হয় লাল চালের ভাত। মিক্সড সবজি যেমন- লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শসা, পটোল, ঝিঙে, পেঁপে, কচুশাক, কচু, মাছ বা মুরগি থাকতে পারে; সেই সঙ্গে ডাল এবং দই বা লো ফ্যাট দুধ। তখন ১/২টি খেজুর খেলে সারা দিন কিছুটা পিপাসা কম লাগবে। এ ছাড়া কেউ ভাত খেতে না চাইলে লাল আটার রুটি, চিড়া-দই, কর্ন ফ্ল্যাক্স দুধ ও সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন। নুড্লস বা পাস্তা করেও অনেকে খেতে পারেন। তবে সেহরিতে খিচুড়ি, বিরিয়ানি, তেহারি জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। এতে করে এসিডিটির সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া বাদ দিতে হবে। লবণাক্ত খাবার পিপাসা বাড়ায়। সেহরির সময় একসঙ্গে বেশি পানি না খেয়ে ইফতারের পর থেকে রাত পর্যন্ত অল্প অল্প করে পানি বা অন্যান্য তরল খেয়ে দেহকে আর্দ্র রাখতে হবে।

ইফতার
স্বাভাবিকভাবেই সারা দিন রোজার পর রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। সেজন্য ইফতারের সময় শরীর, ব্রেইন ও স্নায়ুকোষ এ খাবারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শক্তির দরকার। তাই ইফতারের খাবার হতে হবে ঠাণ্ডা ও সহজে হজম হয় এমন। ইফতারের খাবারের সময়কে দুই ভাগে ভাগ করে খাওয়া যেতে পারে। মাগরিবের আগে কিছু খেয়ে আর দ্বিতীয় ভাগ মাগরিবের পর খেতে হবে। কারণ একসঙ্গে খেলে বেশি খাবার খাওয়া হয়ে যায়; ফলে শরীরে নানারকম জটিলতা তৈরি হতে পারে।

ইফতারে রাখা যায় যে খাবারগুলো
ইফতার শুরুতে লেবু পানি, তোকমার পানি, টক দইয়ের শরবত হতে পারে আদর্শ। চিনি ছাড়া যে কোনো ফলের জুস, আখের রস, কচি ডাবের পানি, দইয়ের লাচ্ছি, কয়েক ধরনের ফল ও দই মিলিয়ে তৈরি করা যায় স্মুদি অথবা খেতে পারেন ১ গ্লাস লাবাং। বেলের শরবত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে, ডাবের পানি আমাদের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখবে ও দেহকে সতেজ রাখবে। খেজুর ইফতারের প্রধান উপকরণ। খেজুরে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি ও আঁশ। এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি আমাদের তাৎক্ষণিক শক্তি দেবে।

দুধের যে কোনো একটি আইটেম থাকতে পারে ইফতারিতে। চিড়া-দই, দুধ, সাগু, ওটস পায়েস, ওটস ফালুদা, পুডিং হতে পারে। এর সঙ্গে যে কোনো ফল যোগ করে আরও পুষ্টিকর করা যায়। যাদের দুধ হজম হয় না তারা দই, পনির, ছানা করে খেতে পারেন। সবজি, মাশরুম, চিকেন বা ওটস দিয়ে তৈরি স্যুপ হতে পারে একটু ভালো ইফতার আইটেম। এ ছাড়া সেদ্ধ ছোলা দিয়ে তৈরি যে কোনো একটি সালাদ খাওয়া যেতে পারে। তাজা ফল ও সালাদ রাখা যায় স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে।

ডুবো তেলে না ভেজে কম তেলে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করতে পারেন পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, কাটলেট, রোল, কাবাব ইত্যাদি। খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে পারেন, তবে নিজেকে সুস্থ রাখতে এগুলো না খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ধরনের ইফতার না বানিয়ে একটি/দুটি আইটেম থেকে যাতে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। যেমন- সবজি দিয়ে নুড্লস, চিকেন মোমো, ঘরে তৈরি মুরগির হালিম, নরম খিচুড়ি।

রাতের খাবার
রোজার মাসে রাতের খাবার সেহরির মতো কিছুটা হালকা থাকতে হবে। যদি সম্ভব হয় ইফতার একসঙ্গে বেশি না খেয়ে কিছুটা দেরি করে খেলে সেটাতেই রাতের খাবার হয়ে যাবে। আর যদি খেতেই হয় ভাত, রুটি, মাছ, মুরগি ও কিছুটা সবজি খেতে পারেন। যদি কেউ একটু বেশি ইফতার করে ফেলেন সে ক্ষেত্রে রাতে ভাত বা ভারী কিছু না খেয়ে হালকা কিছু খেতে পারেন। সেটি কিছু ফল ও দুধ বা দই হতে পারে। আবার যে কোনো ধরনের স্যুপও হতে পারে।

যে খাবারগুলো বাদ দিতে হবে
চা, কফির মাত্রা কমাতে হবে। তা নাহলে পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত তৈলাক্ত খাবার বেশি খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, তাই এসব যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। সাদা চাল, সাদা আটা, সাদা পাউরুটি ও ফ্রায়েড চিকেন, চর্বিযুক্ত মাংস, খাসির মাংস ও কলিজা। আইসক্রিম, মিষ্টি, নারকেল, সবজি ভাজা ও চিনিযুক্ত ফলের রস ও অধিক লবণযুক্ত খাবার।

সবশেষে এটাই বলব, রোজা রাখার ফলে শরীর থেকে টক্সিনও বের হয়ে যায়। এতে আমাদের দেহকোষ আরও শক্তিশালী ও কর্মক্রম হয়। তাই বেশি খেয়ে ওজন না বাড়িয়ে বা অসুস্থ হয়ে রমজান মাসটা না কাটিয়ে নিয়ম মেনে পরিমিত ও সুষম খাবার খেয়ে সুস্থ থাকুন।

 

 

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.