Sylhet Today 24 PRINT

ভায়াগ্রার উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে এনার্জি ড্রিংকস

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৮ অক্টোবর, ২০১৫

দেশে ১৮টি কোম্পানির এনার্জি ড্রিংকসে ভায়াগ্রার উপাদান সিলডেনাফিল সাইট্রেটের অস্তিত্ব পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সম্প্রতি তাদের একটি প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া কার্বোনেটেড বেভারেজ হিসেবে লাইসেন্স নেওয়া আরও ১২টি প্রতিষ্ঠানের ড্রিংকসে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ও ৪টিতে রয়েছে অতিরিক্ত অ্যালকোহল।

জানা যায়, দেশে বাজারজাত করতে বৈধভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে 'এনার্জি ড্রিংকস' তৈরির নিবন্ধন দেয়নি কোনো সরকারি সংস্থা। 'এনার্জি ড্রিংকস' লেখা সাঁটিয়ে যেসব পানীয় বিক্রি হচ্ছে তা অবৈধ। কার্বোনেটেড বেভারেজ হিসেবে যা বাজারজাত করছে বিভিন্ন কোম্পানি, অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার কাছে তা এনার্জি ড্রিংকস হিসেবে পরিচিত। ওই কার্বোনেটেড বেভারেজে নির্ধারিত মাত্রার অনেক বেশি ক্যাফেইন পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের পর দিন সিলডেনাফিল, অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল মিশ্রিত তথাকথিত এনার্জি ড্রিংকস পান করার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি, গর্ভপাত, মারমুখী আচরণসহ মানবদেহে ও মনে নানা উপসর্গ বাড়ছে।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশে এনার্জি ড্রিংকসের নামে যেসব পানীয় বিক্রি হচ্ছে তাতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন মন্ত্রিসভা কমিটিতে জমা দিয়েছে। যেসব এনার্জি ড্রিংকসে অ্যালকোহলসহ অন্যান্য মাদকের উপাদান পাওয়া গেছে তা নিষিদ্ধ করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা ড. দুলালকৃষ্ণ সাহা বলেন, ৪৮টি পৃথক কোম্পানির এনার্জি ড্রিংকসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের এনার্জি ড্রিংকসে ভায়াগ্রার উপাদানের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। কয়েকটিতে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইন পাওয়া গেছে। প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এনার্জি ড্রিংকসে অনুমোদিত ক্যাফেইনের মাত্রা প্রতি লিটারে ১৪৫ মিলিগ্রাম। বাংলাদেশে কোনো কোনো কোম্পানির এনার্জি ড্রিংকসের মধ্যে প্রতি লিটারে ৩৩০ মিলিগ্রামের ওপর ক্যাফেইন পাওয়া গেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, কোনোভাবেই এনার্জি ড্রিংকসের ভেতরে সিলডেনাফিল সাইট্রেট, অ্যালকোহল ও মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ব্যবহার করা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খুরশীদ জাহান বলেন, মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংকস পান করলে শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়।

দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এইচএম আনোয়ার পাশা। ভেজাল ও নকল এনার্জি ড্রিংকসের অনেক কারখানায় তিনি অভিযানও চালিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি পদোন্নতি পেয়ে পিএটিসির পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছেন।

আনোয়ার পাশা বলেন, কিছু এনার্জি ড্রিংকসের মধ্যে এর আগে ফেনসিডিলের উপাদান 'অপিয়াটেস' পাওয়া গেছে। কুটিরশিল্পের মতো এনার্জি ড্রিংকস তৈরি হচ্ছে। এর ক্ষতিকর দিকের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করার বিকল্প নেই।

১৮ প্রতিষ্ঠানের এনার্জি ড্রিংকসে ভায়াগ্রার উপাদান: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরীক্ষায় দুবাই থেকে আনা রেডবুল নামে 'এনার্জি' ড্রিংকসের প্রতি লিটারে ৩৩০ দশমিক ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন পাওয়া গেছে। খুলনার জিএম এগ্রো ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ডাবল হর্সের প্রতি লিটারে ২০৬ দশমিক ৭০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৬৩ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল পাওয়া যায়। পাওয়ার হর্সের গায়ে লেখা অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি। তাতে প্রতি লিটারে ৩২২ দশমিক ০৬ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন পাওয়া গেছে। কুমিল্লার জাহান ফুড প্রোডাক্টের মাশরুম ব্র্যান্ডের প্রতি লিটারে ২০২ দশমিক ৫০ মিলিগ্রাম, ফু-ওয়াং ব্র্যান্ডের প্রতি লিটারে ১৯৭ দশমিক ৪০, সাভারে এগ্রো ফুড অ্যান্ড ফুড বেভারেজের জিন্টারে ১৮০ দশমিক ৪৩ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১২৭ দশমিক ৫০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, তনু লায়ন ফ্রুট সিরাপে ১৮৮ দশমিক ২৫ মিলিগ্রাম ও ১২৬ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল, বগুড়ার উত্তরা ল্যাবরেটরিজের জিনসিনে ১৭৪ দশমিক ৭২ মিলিগ্রাম ও ১৩২ দশমিক ৮০ গ্রাম সিলডেনাফিল, থ্রি স্টার ইউনানি ল্যাবরেটরিজের জিন্টার প্লাস জিনসিনে ২০৬ দশমিক ৯১ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩২ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, বিএনসি এগ্রো ফুড অ্যান্ড বেভারেজের হর্স ফিলিংসে ১৯৫ দশমিক ২ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩২ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল, স্নেহা ফুড অ্যান্ড হারবাল প্রোডাক্টের কোরিয়ান রেড জিনসিংয়ে ১৯৯ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, ১৩৫ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, রানা ফুড বেভারেজের হাই পাওয়ার ফিলিংসে ১৩২ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল, স্ট্রং-৫০০-এ ১৬২ দশমিক ৫২ গ্রাম ক্যাফেইন, এপি ফিজে ১৮৫ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, রয়েল টাইগারে ১৯৭ দশমিক ৮২ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, থ্রি স্টার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের জিনসিনে ১৬৩ দশমিক ৬০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, ইন্ট্রা ফার্মাসিউটিক্যালসের জিনসিন প্লাসে ২১০ দশমিক ৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৩৫ দশমিক ২৫ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল, আসিফ এগ্রো ফুড বেভারেজের সেভেন হর্স ফিলিংসে ১৯৮ দশমিক ২৮ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন ও ১৯০ দশমিক ৮০ মিলিগ্রাম সিলডেনাফিল পাওয়া গেছে।
সূত্র : সমকাল

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.