Sylhet Today 24 PRINT

ভুয়া নবাব আসকারীর যে পরিচয় জানা যাচ্ছে

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৭ নভেম্বর, ২০২০

নবাব সলিমুল্লাহ খানের বংশধর পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার আলী হাসান আসকারীর আসল পরিচয় মিলেছে। তার আসল নাম কামরুল ইসলাম হৃদয়। বিহারি বংশোদ্ভূত এই ব্যক্তি নবাব এস্টেটের সম্পত্তি দখলের জন্য ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি করেন। সেই জন্ম নিবন্ধনের ভিত্তিতে তৈরি করেন পাসপোর্ট। সেগুলো দিয়ে তৈরি করেন জাতীয় পরিচয়পত্র।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নবাব এস্টেটের সম্পত্তি দখলের পাশাপাশি এই ভুয়া নবাব টার্গেট করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। তার পছন্দের টার্গেট ছিল দেশের বিভিন্ন এলাকার মাদ্রাসার শিক্ষকরা।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া নবাব তার আসল পরিচয় প্রকাশে অস্বীকার করলেও আমরা তার আত্মীয়-স্বজনকে খুঁজে বের করেছি। এখন তার প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া অর্থের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

ফেসবুকে নিজেকে ঢাকার নবাবের বংশধর পরিচয় দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে আলী আহসান আসকারী দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। নিজেকে নওয়াব সলিমুল্লাহর নাতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলতেন তার বাবা নিউ ইয়র্কে থাকেন এবং তিনি নিজে নেদারল্যান্ডসে থাকেন। আরও বলতেন, তার বাবা ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। দুবাইতে তাদের স্বর্ণের কারখানা এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের মালিকানা তার বাবার। ওই হাসপাতালে নার্স নিয়োগের কথা বলে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছেন। এমন একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সিটিটিসি।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তারের পর কামরুল ইসলাম ওরফে আসকারীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রথমে জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে তার বাবা ঢাকার উত্তরায় বসবাসরত অবস্থায় মারা গেছেন। নিউ ইয়র্কে থাকা, ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পরিচয় এবং দুবাইয়ে ব্যবসার কথা বলে তিনি মানুষের আস্থা অর্জন করে প্রতারণা করতেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা তার আসল পরিচয় উদ্ধারের জন্য পুরান ঢাকায় খোঁজ-খবর শুরু করেন। এক পর্যায়ে জানা যায়, তার নাম কামরুল ইসলাম হৃদয়। কর্মচারী হিসেবে যারা তার সঙ্গে কাজ করতো তারা তার আপন ভাই। তার বাবার নাম আব্দুস সালাম। তিনি এখনও বেঁচে আছেন। মায়ের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করে কামরাঙ্গীরচরের একটি বাসায় তিনি বাস করছেন।

কামরুল ইসলাম হৃদয়ের চাচাতো ভাই তাজুল ইসলাম জানান, ‘আসকারী নামে যে ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে সে তার চাচাতো ভাই। তার আসল নাম কামরুল ইসলাম হৃদয়। তারা আগে পুরান ঢাকার ২১ নম্বর গৌরসুন্দর রায় লেনে তাদের যৌথ পরিবার একসঙ্গে থাকতো। হৃদয়ের বাবা তার ভাগের সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রায় ১০-১২ বছর ধরে তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। হৃদয়রা সাত ভাই, দুই বোন। হৃদয়ের মা নাইমা খাতুন অনেক আগেই মারা গেছেন। হৃদয়ের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম ও এক ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন। আমিনুল ইসলাম নামে আরেক ভাই কামরাঙ্গীরচরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকেন। বাকি তিন ভাই আহাম্মদ আলী, রাজা ও রানা তার সঙ্গেই থাকেন।’

ভুয়া নবাব আসকারী ২০১৬ সালে মামুন নামে এক ব্যক্তির স্ত্রীকে বিয়ে করেন। গ্রেপ্তারের পর গণমাধ্যমে নবাবের ছবি দেখে কাউন্টার টেরোরিজম কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন মামুন নামের এক ব্যক্তি। মামুন জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে আসকারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। আসকারীর একটি প্রতিষ্ঠানে কয়েকদিন চাকরিও করেছিলেন। এর সূত্র ধরেই তার স্ত্রী মেরিনা খাতুনের সঙ্গে নবাবের পরিচয় হয়। ২০১৬ সালে মেরিনা তাকে তালাকনামা পাঠিয়ে আসকারীকে বিয়ে করেন।

পুলিশ জানায়, বিয়ের পর এফিডেভিট করে তার স্ত্রী মেরিনা খাতুনের নাম পরিবর্তন করে হেনা আসকারী বানিয়েছেন ওই প্রতারক। মেরিনার বাবা হাতেম আলী পুলিশকে জানিয়েছেন, আসকারীকে তারা সত্যিকারের নবাবের বংশধর হিসেবেই জানতেন। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারা তার আসল পরিচয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আসকারী, তার স্ত্রী মেরিনা ও এক শ্যালকের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গাতেও একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন এক ব্যক্তি। বিদেশ পাঠানো ও চাকরি দেওয়ার নাম করে ওই ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তারা ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। সূত্র: বাংলাট্রিবিউন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.