Sylhet Today 24 PRINT

ফেনিতে গর্ভের শিশু হত্যা: ফেসবুকে ক্ষোভ-প্রতিবাদের ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ৩১ অক্টোবর, ২০১৫

নিহত শিশুর মরদেহের পাশে নির্বাক বাবা

ফেনির জেলেপাড়ায় লক্ষ্মীপূজায় আতশাজি ফোটানো নিয়ে হামলায় এক নারীর গর্ভের সন্তান হত্যার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযােগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন অনেকে। এছাড়া সংবিধানে উল্লেখিত রাষ্ট্রেয় অসাম্প্রদায়িকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে ছাত্র নেতা ধ্রুবজ্যোতি সৈকত তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন- 

অপরাধ না হয় আমরা করেছি প্রিয় বাংলাদেশে জন্মে। কিন্তু এই নিষ্পাপ শিশুটির কি অপরাধ??!! যাকে এই পৃথিবীর আলো দেখতে দেয়া হল না। প্রিয় জন্মভূমি থেকে মনুষ্যত্ব, মানবতাবোধ কি বিলীন হয়ে গেল!!!! এই পাশবিকতার দারা কোন ধর্ম পালন করছি আমরা।'

লক্ষ্মীপূজার পরদিন গত বুধবার এ হামলার ঘটনা ঘটে।। আতশবাজি ফোটানো নিয়ে বিরোধের জের ধরে স্থানীয় কিছু যুবক বুধবার মধ্যরাতে ফেনির জেলেপাড়ায় হামলা করে বাড়িঘরে ভাংচুর চালায়। হামলায় সন্তানসম্ভবা তুলসী রানী দাসসহ (২০) অন্তত ১০ জন আহত হন। বৃহস্পতিবার ভোরে মৃত সন্তান প্রসব করেন তুলসী। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অভিযোগ রয়েছে, এই হামলার সাথে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ জড়িত। এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইডি গবেষণারত অনলাইন এক্টিভিস্ট লিটন সি. ভৌমিক ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্ করে লিখেছেন-

'প্রিয় হাসুআপা,
আপনার সন্তানকে বিরানী রান্না করে খাওয়ানোর ছবিতে চারদিক সয়লাব।
কিন্তু আপনার সোনার ছেলেদের কল্যাণে সন্তানকে রান্না করে খাওয়ানো দুরের কথা, সন্তানের জীবিত মুখও দেখলো না তুলশী রানী। বুঝি আপনার সন্তান চাঁদের কনা; বাকিদের সন্তান আবর্জনা!
প্রতি ১৫ই আগস্ট আপনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন- ওরা মাসুম বাচ্চা রাসেলকেও বাঁচতে দেয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি হাসু আপা- আপনার সোনার ছেলেরা একেবারে গর্ভের সন্তানকেও বাঁচতে দিচ্ছে না।'

ব্লগার মারুফ রসুল রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি উল্লেখ করে লিখেছেন-

'মায়ের উদরে তরমুজের মতো বড়ো হওয়া শিশুটি জানতো না, সে জন্ম নিতে যাচ্ছে এমন এক দেশে যেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু তত্ত্বে রাজনীতি চলে; আর রাষ্ট্র চলে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলামে”।'

অনলাইন এক্টিভিস কাজল দাস জেলেপাড়ায় হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেসবুকে। তিনি লিখেছেন-

'আমি স্তব্ধ বাকরুদ্ধ বিমুঢ় পাথর হয়ে আছি। গর্ভবতী তুলশী রানীর পেটে লাথি দেয়ার কারণ ছিল, আযানের সময় কেন লক্ষীপজা করেছিল তারা। আজব মানুষ, পবিত্র আযান বুঝে কিন্তু পবিত্র দেবশিশু বুঝে না। হায় খোদা !!'

লেখক স্বকৃত নোমানও ক্ষোভ প্রকাশ করেছন বর্বোরোচিত এ ঘটনায়। তিনি ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেন- 

'ফেনীতে ক্ষমতাসীন দলের পাণ্ডাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। এই পাণ্ডাদের হামলায় তুলসি রানী দাসের গর্ভের সন্তান মারা গেছে। আশা করি ফেনীর সাংবাদিক ও সুশীল নাগরিকগণ এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন। সাংবাদিকনেতা তাহের ভাই, মীরু ভাই, মুন্না ভাই, শাহাদাত ভাই, রফিক ভাই, দারা ভাই এবং অন্য নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনাদের পত্রিকায় সংবাদটি একযোগে লীড করুন। প্রশাসনকে চাপে রাখুন। আপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।'

প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী স্নেহা ভট্টাচার্য স্বর্ণা নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন- 

'নিজ ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও অন্য ধর্মকে মনে নেয়ার প্রবণতা হচ্ছে ধর্মীয় সহনশীলতা। এককালে যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু এখনকার বাংলাদেশের চেহারা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। এখনকার বাংলাদেশ হচ্ছে অতিমাত্রায় সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। নইলে প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় মূর্তি ভাঙ্গা উত্‍সব হবে কেনো? রামুতে বৌদ্ধবিহার পুড়িয়ে দেয়া হবে কেনো? আযানের সময় লক্ষীপূজা করার অপরাধে(!) একজন সন্তানসম্ভবা মায়ের পেটে লাথি মেরে তার গর্ভপাত ঘটানো হবে কেনো?
শেষোক্ত ঘটনাটি আজকে ঘটেছে, ফেনী এলাকায়। আমি নিজে সিলেট অঞ্চলের মানুষ। সিলেটেই ভাড়া বাসায় থাকেন এমন অনেক আত্মীয়কে দেখেছি যারা তাদের ঘরে উলু দিতে পারেন না, শাঁখ/ঘন্টা/কাশী বাজাতে পারেন না। কারণ ভিন্নধর্মী বাড়িওয়ালাটির তাতে আপত্তি আছে। অথচ এই সিলেটই হচ্ছে হাছনরাজা, শাহ আবদুল করিম, রাধারমণ দত্তদের মতো সুফি সাধকদের পূণ্য জন্মস্থান। ইসলাম ধর্মে সংগীত ও যন্ত্রসংগীত নিষিদ্ধ হলেও গ্রামের মুসলমানরা তাঁদের গানকে আপন করে নিয়েছিলো। ইভেন এখনো গ্রামের এবং শহরের; দুই জায়গার লোকজনই তাঁদের সংগীতকে যথেষ্ট লালন করে। তাহলে কীভাবে এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষটি তার ডাল-পালা এতটা বিস্তৃত করতে পারলো? চেষ্টা করলে হয়ত এখনো এই বিষবৃক্ষকে উপরে ফেলা যাবে। সেজন্য সর্বোচ্চ মহলের আন্তরিকতা সবথেকে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু সর্বোচ্চ মহলটিই যে ইতমধ্যে বিষবৃক্ষটির ছায়াতলে চলে যায়নি, সেটা কে নিশ্চিত করে বলবে?'

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.