Sylhet Today 24 PRINT

বিপুল ভোটারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের জয়

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০

প্রথম ধাপে পৌরসভা নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপিও জয় পেয়েছে দুটি এলাকায়, যদিও বেশিরভাগ এলাকায় তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।

২৪টি পৌরসভার মধ্যে একটির ফল ঘোষণা স্থগিত আছে শেষ মুহূর্তে বিএনপির প্রার্থীর মৃত্যুতে।

বাকি ২৩টি পৌরসভার মধ্যে বিএনপি জয় পেয়েছে দুটিতে, দুটিতে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, একটিতে জয় পেয়েছেন দলের মনোনয়ন না পাওয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নেতা। বাকি ১৮টিতে জয় পেয়েছেন নৌকা মার্কার প্রার্থীরা।

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন নির্বাচনে নিম্ন ভোটার উপস্থিতিতে বড় ব্যবধানে জয় পেয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। সোমবার দিনভর ভোটার উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। আর কয়েক বছর ধরে ভোটের যে ধারাবাহিকতা, তা পাল্টায়নি এবারও। বেশিরভাগ এলাকায় সরকারদল জয় পেয়েছে বড় ব্যবধানে।

বিএনপি পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ভোটে কারচুপি হয়েছে ব্যাপক। তাদের জয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে এই ভোট চলাকালে বিএনপির তিন জন প্রার্থী বর্জন করেছেন নির্বাচন। বাকিরা শেষ পর্যন্ত ভোটে ছিলেন। তেমন কোনো গোলযোগের খবর আসেনি কোথাও।

২৪টি পৌরসভায় ৩১৯টি ভোট কেন্দ্রে সকাল আটটায় ভোট শুরু হয়। সকাল থেকেই বিপুল ভোটারের উপস্থিতি দেখা যায়। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভায় ভোটার উপস্থিতি এত বেশি ছিল যে নির্ধারিত সময়ের পরেও ভোট নিতে হয়েছে কয়েক ঘণ্টা পরেও। শায়েস্তাগঞ্জে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর্যন্ত।

এসব কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ছয় লাখ ২৪ হাজার ৮০৭ জন।

সব মিলিয়ে কত শতাংশ ভোট পড়েছে, তা জানাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। তবে কমিশন সচিব মোহাম্মদ আলমগীর জানিয়েছেন ৬০ শতাংশের কম ভোট পড়েনি কোথাও। কোথাও কোথাও ভোট পড়েছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ।

গত কয়েক বছর ধরেই ভোট নিয়ে নানা সমালোচনা করে আসছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এই ভোটের নয় দিন আগে ৪২ জন নাগরিক নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেয়ার পর এই ভোট নিয়ে বাড়তি উৎসাহ তৈরি হয়।

কমিশন সচিব মোহাম্মদ আলমগীর মনে করেন এই পরীক্ষায় তারা পাস করেছেন ভালোভাবেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে ভোট খুবই ভালো হয়েছে। সারাদিন শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট হয়েছে। সে হিসেবে বলাই যায় সাকসেসফুল নির্বাচন হয়েছে।’

কোন পৌরসভায় কার জয়

রংপুর বিভাগ

পঞ্চগড় সদরে নৌকা প্রতীক নিয়ে জাকিয়া খাতুন জিতেছেন ১২ হাজার ৫৬ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ বারের পৌর মেয়র তৌহিদুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন নয় হাজার ৪৭৫ ভোট।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী একরামুল হক জিতেছেন ৯ হাজার ২৫৬ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কাশিরুল ইসলাম পেয়েছেন দুই হাজার ৭৬১ ভোট। বিএনপির রেজাউল করিম রেজা পেয়েছেন দুই হাজার ৭১৪ ভোট।

রংপুরের বদরগঞ্জেও জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের আহসানুল হক চৌধুরী টুটুল নৌকা নিয়ে পেয়েছেন নয় হাজার ৭৩৩ ভোট।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রর্থী হওয়া আজিজুল ইসলাম। নারিকেল গাছ প্রতীকে তিনি ভোট পেয়েছেন চার হাজার ৪৭৮ টি। এখানে বিএনপি তৃতীয় হয়েছে।


কুড়িগ্রাম পৌরসভায় আওয়ামী লীগের কাজিউল ইসলাম জিতেছেন ১৯ হাজার ৭৭৩ ভোট পেয়ে। বিএনপির শফিকুল ইসলাম বেবু পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৪৬৮ ভোট।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদ আলম লিটন। ব্যাপক ভোটার উপস্থিতির ওই নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন সাত হাজার ৭৪৭ ভোট।

গত দুই বারের মেয়র ফুলবাড়ী কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলনের নেতা মরতুজা সরকার মানিক পেয়েছেন সাত হাজার ৪০ ভোট পান।

এখানে নৌকা প্রতীকে খাজা মঈন উদ্দীন পেয়েছেন তিন হাজার ৪৬০ এবং ধানের শীষে শাহাদৎ হোসেন পেয়েছেন তিন হাজার ৪২ ভোট পান।

রাজশাহী বিভাগে

রাজশাহীর পুঠিয়ায় ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আল মামুন জিতেছেন পাঁচ হাজার ৯২০ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগের রবিউল ইসলাম পেয়েছেন পাঁচ হাজার ১৬০ ভোট।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে যুবলীগ নেতা গোলাম আযম নয়ন প্রার্থী হয়ে ভেটে পেয়েছেন এক হাজার ১৭৪ ভোট।

একই জেলার কাটাখালী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের আব্বাস আলী নৌকা প্রতীক নিয়ে জিতেছেন ১৬ হাজার ১৬৫ ভোট পেয়ে। এখানে প্রার্থী ছিলেন আরও দুই জন, যাদের ভোটের সংখ্যা নগণ্য।

আব্বাসের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী স্থানীয় জামায়াত নেতা মাজিদুর রহমান পেয়েছেন ৮৫৬ ভোট। বিএনপির প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম পেয়েছেন ৭৩ ভোট।

পাবনার চাটমোহরে আওয়ামী লীগের সাখাওয়াত হোসেন সাখো জিতেছেন ছয় হাজার ৮১২ ভোট পেয়ে। বিএনপির বিদ্রোহী আব্দুল মান্নান দ্বিতীয় হয়েছেন ৮৪২ ভোট পেয়ে। ভোট বর্জন করা বিএনপির আসাদুজ্জামান আরশেদ পেয়েছেন ৮৫ ভোট।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আওয়ামী লীগের মনির আক্তার খান তরু লোদী জিতেছেন ২৯ হাজার ৮৭ ভোট পেয়ে। বিএনপির মাহমুদুল হাসান সজল দ্বিতীয় হয়েছেন এক হাজার ৮৬৭ ভোট পেয়ে।

খুলনা বিভাগ

কুষ্টিয়ার খোকসায় আওয়ামী লীগের তারিকুল জিতেছেন নয় হাজার ৩৭২ ভোট পেয়ে। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নাফিস আহমেদ খান রাজু পেয়েছেন এক হাজার ৫৮৩ ভোট।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় নৌকা প্রতীকে জাহাঙ্গীর আলম মানিক পেয়েছেন ২১ হাজার ৬৩৩ ভোট। বিএনপির বিদ্রোহী মজিবুল হক মালিক মজু দ্বিতীয় হয়েছেন সাত হাজার ৬০৭ ভোট পেয়ে। বিএনপির সিরাজুল ইসলাম মনি পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৮৭ ভোট।


ঢাকা বিভাগ

ঢাকার ধামরাইয়ে আওয়ামী লীগের গোলাম কবির মোল্লা জিতেছেন ২৩ হাজার ১১০ ভোট পেয়ে। ভোট বর্জন করা বিএনপির দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু পেয়েছেন এক হাজার ৫০৩ ভোট।

মানিকগঞ্জ পৌরসভায় ১৫ গুণ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী। আওয়ামী লীগের রমজান আলী পেয়েছেন ৩১ হাজার ৫৮৫ ভোট। বিএনপির আতাউর রহমান পেয়েছেন মাত্র দুই হাজার ৩৩৪ ভোট।

ময়মনসিংহ বিভাগে

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে নৌকার প্রার্থী এসএম ইকবাল হোসেন সুমন জিতেছেন ১২ হাজার ৪১১ ভোট পেয়ে। একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী শাহ্ আব্দুল্লাহ আল মামুন পেয়েছেন ১৯০ ভোট।

নেত্রকোণার মদনে তিন হাজার ১৪১ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাইফুল ইসলাম।

দ্বিতীয় হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন। তিনি পেয়েছেন এক হাজার ৮৬৯ ভোট। বিএনপির প্রার্থী এখানে তৃতীয় হয়েছেন।


বরিশাল বিভাগ

বরিশালের বাকেরগঞ্জে আওয়ামী লীগের লোকমান হোসেন ডাকুয়া সাত হাজার ৪১ ভোট পেয়ে জিতেছেন। ইসলামী আন্দোলনের খলিলুর রহমান দুই হাজার ৪১১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। বিএনপির এসএম মনিরুজ্জামান ৯১৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।

উজিরপুরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন বেপারী জিতেছেন পাঁচ হাজার ৭০৫ ভোট পেয়ে। বিএনপির শহিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৭৬৫ ভোট।

বরগুনার বেতাগীতে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের এবিএম গোলাম কবির পেয়েছেন ছয় হাজার ১০২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের হুমায়ুন কবীর মল্লিক পেয়েছেন ৫০৯ ভোট।

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। ভোট পেয়েছেন তিন হাজার ৩৩৩টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আবদুল বারেক মোল্লা পেয়েছেন দুই হাজার ৬৮৪ ভোট। বিএনপির আবদুল আজিজ মুসুল্লী পেয়েছেন ৩২৬ ভোট।


সিলেট বিভাগ

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী ফরিদ আহমেদ অলি জিতেছেন চার হাজার ৪১ ভোট পেয়ে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগের মাসুদ উজ্জামান মাসুক পেয়েছেন তিন হাজার ১৯৩ ভোট। গত নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ নেতা সালেক আহমেদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পেয়েছেন দুই হাজার ৫৯৯ ভোট।

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আওয়ামী লীগের আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী জিতেছেন পাঁচ হাজার ৯৭৮ ভোট পেয়ে। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুল ইসলাম দ্বিতীয় হয়েছেন তিন হাজার ৮৯ ভোট পেয়ে। বিএনপির আনোয়ারুল ইসলাম পেয়েছেন ৫৯৪ ভোট।

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জিতেছেন আওয়ামী লীগের বিশ্বজিৎ রায়। ভোট পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৯১০টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশারফ মিয়া পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৭৫৭ ভোট। ভোটের ব্যবধান ১৫৩।

বিএনপির প্রার্থী ইকবাল হোসেন চৌধুরী এক হাজার ৯৬০ ভোট পেয়ে হয়েছেন তৃতীয়।

চট্টগ্রাম বিভাগে

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদিউল আলম ১০ হাজার ৮২৯ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আবুল মনছুর পেয়েছেন ৩ হাজার ৭২ ভোট।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.