Sylhet Today 24 PRINT

যেভাবে উত্থান দেওয়ানবাগী পিরের

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০

রাজধানী ঢাকার আরামবাগ এলাকায় 'দেওয়ানবাগ দরবার শরিফ' এর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা মারা গেছেন, যিনি 'দেওয়ানবাগী পির হিসাবে' পরিচিত ছিলেন। সোমবার ভোরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

দেওয়ানবাগ দরবার শরিফের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তার পুরো নাম মাহবুব-এ খোদা। তবে ভক্তদের কাছে তিনি 'দেওয়ানবাগী' হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তার বড় একটি ভক্ত শ্রেণি রয়েছে। তার বেশ কিছু বক্তব্য বিভিন্ন সময় বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।

তারা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেন যে, দেওয়ানবাগীর পির হিসাবে পরিচিত সৈয়দ মাহবুব ও তার পরিবারের সদস্যরা সৃষ্টিকর্তাকে দেখতে পান বলে দাবি করেন। এছাড়াও ইসলামের বিভিন্ন বিষয়, ইসলামের নবীকে নিয়েও তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে তার একজন মুরিদ আবদুল মান্নান বলছেন, ''আত্মশুদ্ধির জন্য আমরা তার কাছে এসেছি। তার ভক্ত হয়েছি। তার কাছ থেকে আমরা অনেক শিক্ষা পেয়েছি, তাই তার মুরিদ হয়েছি। তিনি অনেক বই লিখেছেন, সংস্কার করেছেন।"

দেওয়ানবাগী পিরের বিষয়ে বিতর্ক ও তাকে নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে মান্নান বলেন, "ধর্মীয় নেতাদের অনেকেই তাকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমরা মনে করি তার অবস্থান সঠিক, এবং সেজন্য সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশায় তার অনেক ভক্ত তৈরি হয়েছে।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শফিকুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''উল্টা পাল্টা ফতোয়া দিয়ে তার উত্থান হয়েছে। ইসলামকে কাটছাট করেছেন তিনি। তিনি বেহেস্ত দিয়ে দেবেন, আল্লাহকে দেখেছেন, এসব বলে মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন।' আসলে মানুষ তো অন্ধ ভক্ত। বাঙালিরা অনেকে বেশি হুজুগে নামছে। এই জন্য তার ভক্ত হয়েছে,'' তিনি বলছেন।

কয়েকবার তার ভক্তদের সঙ্গে অন্যদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তবে তাদের দরবার শরিফের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

১৯৪৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকার তালশহর কারিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা আবুল ফজল সুলতানা আহমেদ চন্দ্রপুরীর মেয়ে হামিদা বেগমকে বিয়ে করেন। এর কিছুদিন পরে নিজেই নারায়ণগঞ্জে দেওয়ানবাগ নামের একটি স্থানে আস্তানা তৈরি করেন এবং নিজেকে সুফি সম্রাট হিসাবে পরিচয় দিতে শুরু করেন। সেখান থেকেই তার নামের সঙ্গে দেওয়ানবাগী শব্দটি যুক্ত হয়। পরবর্তীতে মতিঝিলের ১৪৭ আরামবাগে স্থায়ী দরবার গড়ে কার্যক্রম শুরু করেন।

এদিকে, দেওয়ানবাগী এই পির নিয়ে দেশের আলেম সমাজের মধ্যে অনেক আলোচনা ছিল। তার সমালোচনায় মুখর ছিলেন বেশিরভাগই। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১৯৯১ সালে তার বিরুদ্ধে ফতোয়াও জারি করে বলে জানা যায়। ১৯৯১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দেওয়ানবাগী পির নিয়ে একটি ফতোয়া জারি হয়েছিল। তিনটি ফতোয়ার একটি ছিল, গ. আর তার অপপ্রচার প্রতিহত করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। (১৭৬৭ ইস. ফা. সং ও দাওয়াহ/৩/৮৭/৫১২২ তাং ৫/৯/৯১ ইং।)

এছাড়া, ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর রাজধানীর ফকিরাপুলস্থ বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরিফের পির মাহবুব-এ খোদা’র ইসলাম ও শরিয়ত সম্পর্কিত ‘বিতর্কিত বক্তব্য’ প্রতিরোধের উপায় শিরোনামে এক পর্যালোচনা সভাও করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ওইদিন প্রতিষ্ঠানটির আগারগাঁওস্থ প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে আলেম ও প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পর্যালোচনা সভায় দেওয়ানবাগী পিরের বক্তব্যের ভিডিও দেখিয়ে আলেমদের অভিমত নেওয়া হয়। তবে এনিয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.