Sylhet Today 24 PRINT

কাজী হতে লড়বেন আয়েশা সিদ্দিকা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৪ জানুয়ারী, ২০২১

দিনাজপুরের ফুলবাড়ির দারুল সুন্নাহ সিনিয়র সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেছেন তিনি, ডিগ্রি নিয়েছেন হোমিও কলেজ থেকেও; ইচ্ছা ছিল নারী কাজী বা নিকাহ্ রেজিস্টার হওয়ার, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। প্রথমে আইন মন্ত্রণালয়, এরপর হাই কোর্ট থেকেও তার বিপক্ষে রায় এসেছে। অথচ ধাপে ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন তিনি। তার সে আশা পূরণ হয়নি মূলত লৈঙ্গিক কারণে। তিনি নারী, এটাই একমাত্র ‘অযোগ্যতা’ উল্লেখে তার আবেদন বাদ পড়েছে।

আয়েশা সিদ্দিকা। গত প্রায় ১৯ বছর ধরে দিনাজপুরে ফুলবাড়ি উপজেলার পূর্ব কাটাবাড়ীতে হোমিও চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন। ২০১২ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে ফুলবাড়ি পৌরসভায় নিকাহ রেজিস্টার বা কাজী পদের জন্য আবেদন করেন তিনি। নিয়োগ বিজ্ঞাপনে কেবল পুরুষ সদস্য আবেদন করতে পারবেন, এমন কোন কথা লেখা ছিল না। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে ২০১৪ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্তে গঠিত কমিটির সদস্য ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়রসহ মোট পাঁচজন। ওই কমিটি নির্বাচিত তিনজন সদস্যের একটি প্যানেল প্রস্তাব দিয়ে চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে কমিটির কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারা কাকে নিয়োগ দিতে চান। সেসময় কমিটি চিঠি দিয়ে আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়োগের সুপারিশ করে।

২০১৪ সালের ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় 'বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ্ রেজিস্টারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়' - এমন মত দিয়ে একটি চিঠি দিয়ে নিয়োগ কমিটির প্রস্তাবিত প্যানেল বাতিল করে। প্যানেলের প্রস্তাবিত তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট দায়ের করেন আয়েশা সিদ্দিকা। ছয় বছর পরে ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালত মন্ত্রণালয়ের মতামতকে বহাল রেখে রায় দেয়। গত ১০ জানুয়ারি ২০২১ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়, আর তারপরই বিষয়টি সবার সামনে চলে আসে।

হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এরবিরুদ্ধে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। কাজী হওয়ার আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল না যে নারীরা আবেদন করতে পারবে না। আমি যখন দেখলাম যে নারী পুরুষ কিছু উল্লেখ নাই, তখন ভাবলাম - তাহলে আমি তো আবেদন করতেই পারি। পরে আবেদনপত্র বাছাই, বা পরীক্ষার সময়ও তো আমাকে নারী বলে বাদ দেয় নাই, নিয়োগ কমিটিও তো ফলাফল চূড়ান্ত করে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এই কোন পর্যায়েই তো আমাকে 'ডিসকোয়ালিফাইড' বা অযোগ্য ঘোষণা করা হয় নাই! তাহলে আমি তো অযোগ্য না।

আয়েশার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফুলবাড়ির পূর্ব কাটাবাড়িতে। তিন বোন এক ভাইয়ের পরিবারে দ্বিতীয় সন্তান তিনি। বাবাও ছিলেন হোমিও চিকিৎসক। বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় মাদ্রাসায় পড়তে পড়তেই অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় তাকে। বিয়ের পরও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান। একই সঙ্গে ফুলবাড়ির দারুল সুন্নাহ সিনিয়র সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করেছেন, আবার হোমিও কলেজ থেকেও ডিগ্রি নিয়েছেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.