সিলেটটুডে ডেস্ক | ২৫ জানুয়ারী, ২০২১
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রম বন্ধের দাবি তোলা জাতীয় পার্টি দলীয় সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদকে ‘নিতান্ত একজন মূর্খ মানুষ’ বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
রোববার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় ফিরোজ রশীদ একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কার্যক্রম বন্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বক্তব্যে ফিরোজ রশীদ বলেন, আমাদের কিছু সংগঠন আছে। একটি সংগঠন আছে নাস্তিক নির্মূল কমিটি। আরেকটি সংগঠন হচ্ছে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। এই নির্মূল করার ক্ষমতা এদের কে দিয়েছে? আমি জানতে চাই। তুমি কে নির্মূল করার?
এর প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমকে বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদ যে নিতান্ত একজন মূর্খ মানুষ, এটা তার বক্তব্যে প্রমাণ করেছে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, নির্মূল কমিটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটাকে তৃণমূলে পৌঁছে দিয়েছিল। একাত্তরের গণহত্যার দেশের বাইরে ভুলেই গিয়েছিল। সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়েছে একাত্তরের গণহত্যার বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা, বিচারের পথ তৈরি করা। এটা যদি উনি (ফিরোজ রশীদ) না জানেন, এটা তো আমরা ওনার অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই বলব না। মূর্খতা ছাড়া কিছুই বলব না।
শাহরিয়ার কবির বলেন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি যখন তারা দেশের তৃণমূল অবধি পৌঁছে দিতে পেরেছেন, তখন সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টির ফিরোজ রশীদ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে তুষ্ট করতেই এই দাবি তুলেছেন।
শাহরিয়ার কবির কাজী ফিরোজ রশীদ ও তার দলের রাজনৈতিক চরিত্র সম্পর্কেও প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, এখন তারা (জাতীয় পার্টি) আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘর করছে আবার বিরোধী দলে, এটা তো রাজনৈতিক চরিত্রহীনতার চূড়ান্ত। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে পার্লামেন্টে গিয়ে তারা আবার বিরোধী দল সেজেছে। পার্লামেন্টে গিয়ে এই আবোলতাবোল কথা তারা বলছে। জাতীয় পার্টির দেওলিয়াপনা কোন পর্যায়ে গেছে, সেটা সারা দেশের মানুষ জানে। আজকে আওয়ামী লীগ সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে জাতীয় পার্টির একজন সদস্যও পার্লামেন্টে আসতে পারবে?
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে দেখতে গেলে এটার উপর আক্রোশ তো থাকবেই। আমরা যখন এরশাদের সমালোচনা করি, তিনি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বৃক্ষ রোপণ করেছিলেন, সেটার তো পরিণতি আমরা এখন দেখছি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংবিধানের এই সংশোধনী এই সংযোজনের দ্বারা তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছেন। এর চেয়ে ক্রিমিনাল অফেন্স স্বাধীন বাংলাদেশে কেউ করেননি। এ রাজনীতি থেকে তিনি এটা করতে পারেন, তার তো বিদ্বেষ থাকারই কথা।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ- দুজনই সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ‘হত্যা’ করেছেন বলে মন্তব্য করেন শাহরিয়ার কবির।
জিয়ার মতো এরশাদের সরকারেও যুদ্ধাপরাধীদের স্থান দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে কি তারা সরকার গঠন করেননি? চিহ্নিত গণহত্যাকারীরা তো এরশাদের কারণেই মন্ত্রী হয়েছেন। কাজী ফিরোজ রশীদরা তো তাদের সঙ্গেই ঘর করছেন।