Sylhet Today 24 PRINT

শিশুটি কোথায়?

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৩ এপ্রিল, ২০২১

পুরান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এলাকা থেকে এক সাংবাদিকের লাইভের মাঝে ঢুকে পড়ে লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন তোলা শিশু মারুফকে বৃহস্পতিবার থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

শিশুটির অবস্থান সম্পর্কে তার সঙ্গী পথশিশুরা কিছু বলতে পারছে না। এলাকাবাসী ও পুলিশও বলছে, মারুফের কোনো খোঁজ নেই। তার খোঁজখবর রাখা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছেও কোনো তথ্য নেই।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এলাকা থেকে গত সোমবার দুপুরে ফেসবুকে লাইভ করেন সময়ের কণ্ঠস্বর নামের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের প্রধান প্রতিবেদক পলাশ মল্লিক।

তার কথা বলা প্রায় শেষের দিকে ক্যামেরার ফ্রেমে ঢুকে পড়ে পথশিশু মারুফ। সে বলে ওঠে, ‘এই যে লকডাউন দিছে, মানুষ খাবে কী? সামনে ঈদ। এই যে মাননীয় মন্ত্রী একটা লকডাউন দিছে, এটা ভুয়া। থ্যাঙ্কু।’

পরদিন মারুফের চোখে জখমসহ একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। ওই ছবি শেয়ার করে অসংখ্য ফেসবুক ব্যবহারকারী অভিযোগ তোলেন, লকডাউন নিয়ে সরকারি অবস্থানের বিরোধিতা করার কারণেই তাকে পুলিশ বা ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধর করেছে।

তবে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মারুফের সঙ্গে তার এলাকার পথশিশুদের মারামারিতেই জখমের ঘটনাটি ঘটে।

মারুফকে বৃহস্পতিবার দিনের বেলাতেও দেখা গেছে বাহাদুর শাহ পার্কের আশপাশে। তবে বিকেল থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। শিশুটির খোঁজে বৃহস্পতি সন্ধ্যা ও শুক্রবার সারা দিন বাহাদুর শাহ পার্ক, সদরঘাট, জজকোর্ট, মালিটোলা এলাকা ঘুরেছেন নিউজবাংলা প্রতিবেদক, তবে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি।

বাহাদুর শাহ পার্কে বসবাসকারী নুপুর নামের এক পথশিশু জানায়, মারুফ ওই এলাকায় এসেছিল তিন সপ্তাহ আগে। এর আগে সে কমলাপুর এলাকায় ছিল।

বিজ্ঞাপন



নুপুর বলে, ‘কালকা থাইকা ওরে (মারুফ) দেখতাছি না। অনেকে ওর খোঁজ করতাছে দেইখা আমরা কোর্টের মইধ্যেও খুঁজছি। আবার ওই যেহান যেহান যায় সেইহানের গেছি, কিন্তু পাই নাই। মারুফের তো এমনতেই মাথার ঠিক নাই। কই গেছে কে জানে।’

মারুফের সঙ্গী আরেক পথশিশু রুস্তম আলী বলে, ‘রাইতের দিকে মারুফরে খাবার আর জামা কাপড় দেয়ার জন্য কয়জন লোক আইছিল। আমাগো বল্লো মারুফ কই, কিন্তু মারুফ পার্কে ছিল না। ওরা মারুফরে খুঁজতে বলার পর আমরা বাইর হইছিলাম। ও যে দোকান থাইকা ড্যান্ডির আঠা কেনে সেখানে গিয়াই পাই নাই।’

এলাকাবাসী জানায়, বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় ছিন্নমূল বেশ কয়েকজন শিশু থাকে। তাদের সঙ্গেই থাকত মারুফ। এসব শিশুর বেশিরভাগই ড্যান্ডি (আঠা জাতীয় নেশা) আসক্ত। মারুফও এই নেশাদ্রব্য গ্রহণ করায়, তার আচরণ ও বক্তব্য ছিল অসংলগ্ন।

জজকোর্ট এলাকার রিকশা চালক মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘দেখতাম ওরা ড্যান্ডিম্যান্ডি নিয়া আশপাশে দৌড়াদৌড়ি করত। এরপর শুনলাম মারুফকে কারা যানি ভাইরাল করছে। গত রাইত থাইকা তারে আর দেহি নাই।’

পার্ক এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ী আজগর আলী বলেন, ‘ছেলেটারে নিয়া তো এই কয়দিন সবাই মাতামাতি করল। সাংবাদিক আইলো, আরও নানান কিছিমের লোকজন আইলো। কাইলাকা থেইকা মারুফরে আর দেখি না, লোকজনও দেখি না। সবার তো সবকিছু হইলো, কিন্তু মারুফের কী হইলো?’

এ ব্যাপারে সূত্রাপর থানায় যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমরাও শিশুটিকে খুঁজছি, কিন্তু গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত থেকে এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাইনি।

তিনি জানান, শিশুটির জন্য খাবার নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে তারা ওই এলাকায় গিয়েছিলেন, শুক্রবারও একাধিকবার খোঁজখবর করা হয়েছে। কিন্তু তাকে পায়ও যায়নি।

শিশুটির পুর্নবাসনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পুর্নবাসনের ব্যাপারে কারো কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত শুনিনি। তাছাড়া আমরা উদ্যোগ নিতে গেলে একটু সমস্যা আছে। ধরেন আমরা আনতে গেলাম সংশোধনাগারে দেয়ার জন্য। এক্ষেত্রে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারে যে, পুলিশ কই নিয়ে গেছে? এ কারণে আমরা পদক্ষেপটা নিতে পারছি না।’

মামুনুর রহমান বলেন, ‘এখানে আমাদের অনেক পুলিশ ডিউটি করে। তারা এসে আমাকে বলেছে, মারুফের মতো আরও অনেক শিশু আছে এখানে। শিশুগুলো তাদের পরিবারের কাছেও যায় না। পার্কেই পড়ে থেকে ড্যান্ডি খায়। এর আগে গত বছর ১৫ এর মতো শিশুকে ধরে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তারা থাকে না। আর এখন যে অবস্থা ওদের ধরাও মুশকিল।’

শিশুটিকে পুলিশ জখম করেছে, এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘শুনছি অনেকে ভিডিও করে প্রচার করেছে যে, শিশুটিকে পুলিশ মেরেছে। বিষয়টি সত্য না। পুলিশ কেন শিশুটির গায়ে হাত তুলবে? বরং আমি যখন গতকাল শিশুটির সন্ধানে যাই, তখন তার বন্ধুরা আমাকে বলল, তারা নিজেরা মারামারি করতে গিয়ে মারুফ জখম হয়েছে।’

মারুফের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে শিশুটির নিয়মিত খোঁজখবর রাখছিলেন সহমর্মিতা ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তা পারভেজ হাসান।

পারভেজ বলেন, ‘শিশুটিকে মাদকের ছোবল থেকে মুক্ত করে আগে সুস্থ করা জরুরি। এ ব্যাপারে আমরা একটা রিহ্যাব সেন্টারের সঙ্গে কথাও বলেছি। সেখানে থেকে সুস্থ হয়ে ফেরার পর আমরা তার পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়াসহ সব দায়িত্ব নিতে চাই। তাছাড়া অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানও শিশুটিকে সাহায্য করতে চাইছে।

‘তবে এখন তো তাকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। শিশুটিকে পাওয়ার পর আমাদের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তাকে পুনর্বাসন করব।’ সূত্র : নিউজবাংলা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.