Sylhet Today 24 PRINT

উচ্চ শিক্ষার জন্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন মুনিয়া

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৭ এপ্রিল, ২০২১

উচ্চ শিক্ষার জন্য কুমিল্লা থেকে রাজধানী ঢাকায় গিয়েছিলেন কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া। আজ লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়িতে। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুনিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে তার মরদেহ কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় তার বড় বোনের বাসায় নিয়ে আসা হয়।

এসময় উৎসুক মানুষজন বাসার আশপাশে ভিড় জমায়। মঙ্গলবার বাদ আসর তার মরদেহ নগরীর টমছমব্রিজ কবরস্থানে দাফন করা হয়। মুনিয়া নগরীর মনোহরপুর এলাকার উজির দীঘির পাড়ের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত সফিকুর রহমানের মেয়ে। এ ঘটনায় এলাকার বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এদিকে পুলিশ কর্তৃক ওই কলেজছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের পর তার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আর এ ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে কলেজছাত্রীর পরিবার।

জানা যায়, নগরীর মনোহরপুরের উজির দীঘির দক্ষিণপাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সফিকুর রহমানের মেয়ে মোসারাত জাহান মুনিয়া রাজধানীর মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। এবার এ প্রতিষ্ঠান থেকে তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। এর আগে সে কুমিল্লা নগরীর বাদুরতলা এলাকার ওয়াইডব্লিউসিএ নামক একটি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পরে সে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকার মডার্ন হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে এবং সর্বশেষ রাজধানীর মিরপুর মনিপুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। পরিবারে এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার কনিষ্ঠ।

মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় ফিরে নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় অরণী নামক ভবনের ফ্ল্যাটে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, দুই বছর আগে থেকে এক শিল্পপতির সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্ক হয়। ওই সম্পর্কের পর তাদের মধ্যে অনেক কিছুই হয়েছে। তাকে রিকভার করে নিয়ে আসছিলাম। সে বেশ কিছুদিন আমার কাছে ছিল। এরপর গত দুইমাস আগে ঐ শিল্পপতি মুনিয়াকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখায়। তাকে বিয়ে করবে, তাকে অনেক ভালোবাসে। সে বলছে- তাকে এখানে সেটেল করতে পারবে না, দেশের বাইরে সেটেল করবে। এমন প্রলোভনের পর আমার বোন আমার কথা শুনে নাই। আমার বোনের অগাধ বিশ্বাস থেকে সে তার কাছে গিয়েছে। তাকে বাসা ভাড়া করে রেখেছে। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে মুনিয়ার মন খারাপ। এরপর বিয়ের কথা ঐ ছেলেকে বলেছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছে।

কালকে মুনিয়া ফোন করে বলে- আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আপু তুমি তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসো, আমার অনেক বড় বিপদ। আমার যে কোন সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি জেনে ঢাকায় রওয়ানা দেই এবং যেতে যেতে তাকে অনেক ফোন দেওয়া হয়, কিন্তু সে আর ফোন ধরেনি। পরে বাসায় গিয়ে দরজা নক করলেও সে খুলেনি। এসময় বাসার মালিককে ডেকে ঘরের তালা ভেঙ্গে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। ওই বাসায় ঐ শিল্পপতির আসা-যাওয়া করেছে সিসিটিভির এমন ফুটেজ পুলিশ পেয়েছে। ৪টি ডায়েরিতে মুনিয়ার লিখিত অনেক এভিডেন্স (তথ্য প্রমাণ) পাওয়া গেছে। এসব ডায়েরিতে অনেক এভিডেন্স আছে। দুটি মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য এভিডেন্স পুলিশ নিয়ে গেছে। বাসায় তার সাথে অনেক ছবি ছিল, সিমটম ছিল।

তিনি আরও বলেন, আমার কি গেছে, তা শুধু আমি বলতে পারব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। সরকার থেকে আমরা কিছুই নেই নাই। ওনার কাছে আমার এতিম বোনের বিচারটা ভিক্ষা চাই। সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে মুনিয়ার বড় ভাই আশিকুর রহমান সবুজ সাংবাদিকদের বলেন, আমার বোন মুনিয়া সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। আমরা মনে করছি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমি আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাতে চাই, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.