Sylhet Today 24 PRINT

চিঠি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় খালেদার ভাই

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৫ মে, ২০২১

করোনায় আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়া হতে পারে এমন আলোচনার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গেলেন তার ভাই শামীম ইস্কান্দার।

বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে একটি চিঠি দিয়ে আসেন বলে নিশ্চিত করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু। তবে চিঠিতে কী লেখা আছে এ ব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি।

এ ব্যাপারে বিএনপি অবগত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই।’

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শরীরের অবস্থা সোমবার সকালের দিকে অবনতি হলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়। এখনও সিসিইউতেই রয়েছেন।

এরপর থেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা জানান, খালেদা জিয়ার বিষয়ে সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর।

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যেতে বিএনপি বা দল থেকে কোনো আবেদন পাননি বলে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে খালেদা জিয়ার তরফ থেকে কোনো ধরনের আবেদন আমরা পাইনি।’

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত বিএনপি নেত্রীকে বিদেশ নিয়ে যেতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিনদ্দিন।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয় সরকার। এখন এটা (বিদেশ নিতে) করতে গেলে আদালতে আসতে হবে, আমার মনে হচ্ছে আদালতে আসতে হবে। তারপরও আমি না দেখে বলতে পারছি না।’

‘ওনার (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসা কতটুকু প্রয়োজন। এই খানে বাংলাদেশে কী আছে, না আছে, সবকিছু দেখে সরকার বিবেচনা করবে। সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে, যদি আইন আনুযায়ী প্রয়োজন হয়, তবে আদালতে আসবে সরকার। কারণ এটা তো সরকারি আদেশ, সরকারই এটা নির্ধারণ করবে।’

তবে খালেদা বিদেশযাত্রায় আদালতের অনুমতির দরকার নেই, নির্বাহী আদেশেই তিনি বিদেশ যেতে পারবেন বলে মত তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের।

‘কোনো প্রকার আবেদন ছাড়াই সরকার বেগম জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশযাত্রায় অনুমতি দিতে পারে (সরকার)। এখানে আদালতের কোনো ভূমিকা নেই।’

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে বিএনপির দাবি রাজনৈতিক হিসেবে দেখছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বুধবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়ার) এই অসুস্থতার অজুহাতকে সামনে এনে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। করোনার চিকিৎসা তো আমাদের দেশে যা, ইংল্যান্ডেও তা, সিঙ্গাপুরেও তা, ইউরোপেও তা। সুতরাং এই ধরনের দাবি আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’

গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শুরুর দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থেকেই চিকিৎসা নেন বিএনপির চেয়ারপারসন। বিএনপি থেকে একাধিকবার বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হলেও তেমন কোনো জটিলতা নেই খালেদা জিয়ার।

গত ১৫ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান করানো হয় খালেদা জিয়ার। সে রিপোর্ট ভালো আসে বলে বিএনপি থেকে জানানো হয়।

রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই রিপোর্টও পজিটিভ আসে।

এরপর ২৭ এপ্রিল সিটি স্ক্যান করানোর জন্য আবার এভারকেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপিপ্রধানকে। তার চিকিৎসায় গঠন করা হয় একটি মেডিক্যাল বোর্ড। এতে হাসপাতালটির সাতজন চিকিৎসকের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত তিনজন চিকিৎসককেও রাখা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খবরাখবর রাখছেন লন্ডনে থাকা তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানও।

মেডিক্যাল বোর্ড খালেদা জিয়ার কিছু পরীক্ষা করে। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিস্ক্যান, ইসিজি, ইকো, হৃদরোগ। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে আরও কয়েক দিন হাসপাতালে রাখা হতে পারে।

৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।

২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করিয়ে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দুই দফা বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা ধরনের রোগ আছে বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে তার চোখেও অপারেশন করা হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.