Sylhet Today 24 PRINT

হেফাজতের নোমানেরও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে: পুলিশ

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৬ মে, ২০২১

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজীরও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এসপি এসএম রশিদুল হক।

এসপি বলেন, ‘নোমান ফয়েজীকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে আমরা একটি মোবাইল সেট উদ্ধার করেছি। ওই মোবাইল সেটের সূত্র ধরে আমরা জানতে পারি, কিছু নারীর সঙ্গে তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে।

‘এই ধরনের তথ্য আমাদের কাছে আগেও ছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক তথা দুই ধরনের সম্পর্কের কথা তিনি স্বীকার করেছেন।’

রশিদুল বলেন, ‘তার মোবাইল থেকে আমরা বেশ কিছু চ্যাটিং পেয়েছি, যাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। আমাদের হাতে সেগুলো আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করছি না।

‘এই নারীদের সঙ্গে তার যে যোগাযোগ ছিল এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সেটি এই চ্যাটের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। পরবর্তী তদন্তের মাধ্যমে এগুলো আমরা তুলে ধরব।’

এসপি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি এবং বলেছি আপনার যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং আপনি যে পোশাক পরেন সেটির সঙ্গে আপনার এই চরিত্র যায় কি না। তখন তিনি বলেছেন মানুষমাত্রই ভুল হয়।’

নোমান ফয়েজী আরও বিয়ে করেছেন কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তিনি কাউকে বিয়ে করেননি। তার সঙ্গে নারীদের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং কারও সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে।’

অর্থের জোগানদাতা হিসেবে পুলিশ নোমান ফয়েজীকে অভিযুক্ত করেছে। তাহলে কোথা থেকে এসব অর্থ এসেছে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তাকে আমরা বুধবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে গ্রেপ্তার করেছি। প্রাথমিক তদন্তে আমরা যতটুকু পেলাম ততটুকু আপনাদের (সাংবাদিক) কাছে জানালাম। পর্যায়ক্রমে যেসব রহস্য উন্মোচিত হবে সেগুলো আমরা আপনাদের জানাব।’

হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে মামলার আসামি করা হয়েছে। জাকারিয়া নোমান ফয়েজী সহিংসতার পেছনে বাবুনগরীর ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্ত এগিয়ে যাবে। তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা এই নাশকতার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কাউকে ছাড় দেয়ার মতো অবকাশ নাই।

এর আগে হেফাজতের আরেক নেতা মুফতি হারুন ইজহারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবার সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজীকে গ্রেপ্তার করা হলো। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তারা তাণ্ডবের উদ্দেশ্য কী আপনাদের বলেছেন; এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তাণ্ডবের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশকে অস্থিতিশীল করা। তারা চেয়েছিল পুরো দেশকে অস্থিতিশীল করতে। কিন্তু তাদের ধারণা ছিল না পুলিশ এত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে।’

তাণ্ডব ঠেকাতে পুলিশ ব্যর্থ কি না জানতে চাইলে এসএম রশিদুল হক বলেন, ‘এখানে ব্যর্থতার কিছুই নেই। পুলিশ প্রত্যেকটা বিষয় তদন্ত করছে। ধাপে ধাপে সবকিছু আমরা মিটআপ করব।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘কারা কারা নির্দেশ দিয়েছেন, কারা কারা অর্থের জোগান দিয়েছেন এবং কারা কারা হেফাজতের কাঁধে ভর করে রাষ্ট্রকে তথা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে সব তথ্য পুলিশের আছে। অনেকগুলো মামলা হয়েছে, সব মামলার তদন্ত চলছে। যেকোনো পর্যায়ে, যিনি হোন, যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

তাণ্ডবে বাবুনগরীর ইন্ধন ছিল কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক প্রশ্নটি এড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে দেন।

৫ দিনের রিমান্ডে জাকারিয়া নোমান ফয়েজী

হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজীকে আদালত ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম রশিদুল হক। তিনি বলেন, পুলিশ তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল। কিন্তু আদালত তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।

কয়টি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘জাকারিয়া নোমান ফয়েজী হাটহাজারী থানায় করা তিনটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি। এই তিনটি ছাড়াও আরও কয়েকটি মামলা আছে, যেগুলোর সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত।

‘নোমান ফয়েজী সেটি স্বীকার করেছেন, আমরাও তদন্তে তার সম্পৃক্ততা পেয়েছি। নোমান ফয়েজী যেসব মামলার নির্দেশদাতা এবং অর্থের জোগানদাতা আপাতত সেসব মামলায় প্রত্যেকটিতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’

হেফাজতের সাবেক নেতা নোমান ফয়েজী চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মেখল মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি হেফাজতের সাবেক আমির প্রয়াত শাহ আহমদ শফীকে হত্যার প্ররোচনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

গত ২৬ মার্চ ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার জেরে ওই দিনই চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও পটিয়ায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হন।

হাটহাজারী থানায় হামলা, ভূমি কার্যালয়, ডাকবাংলাতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা হয়। এসব মামলায় ৪ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.