Sylhet Today 24 PRINT

জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে আউয়ালের পরিকল্পনায় খুন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২১ মে, ২০২১

জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে সাবেক সাংসদ এম এ আউয়ালের পরিকল্পনায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে রাজধানী পল্লবীতে সাহিনুদ্দিন নামের যুবককে খুন করা হয় বলে জানিয়েছে র‍্যাব। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, পল্লবী এলাকায় আউয়ালের আবাসন ও জমির ব্যবসা রয়েছে। সাহিনুদ্দিনের জমি দখল নিতে না পেরে তাকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। সাহিনুদ্দিনের পরিবারেরও রয়েছে একই অভিযোগ।

গত রোববার বিকেলে রাজধানীর পল্লবীর ডি–ব্লকের ৩১ নম্বর রোডে ঘটা এই ঘটনায় বুধবার গভীর রাতে নরসিংদীর ভৈরবে অভিযান চালিয়ে সাবেক সাংসদ আউয়ালকে (৫০) গ্রেপ্তার করে। এর আগের রাতে চাঁদপুরের হাইমচর থেকে হাসান (১৯) ও পটুয়াখালীর বাউফল থেকে জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবুকে (২৭) গ্রেপ্তার করে। সুমন ব্যাপারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ নিয়ে ওই হত্যায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এম এ আউয়াল তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব থাকাকালে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে নৌকা প্রতীকে সাংসদ হন। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাকে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দিলে তিনি ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি এর চেয়ারম্যান।

র‍্যাব এই ঘটনার ৩১ সেকেন্ডের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করেছে। এতে দেখা যায়, দুই তরুণ দুই পাশ থেকে এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছেন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটে পড়েন। এরপর হামলাকারী একজন চলে যান। অপরজন ওই ব্যক্তির ঘাড়ে কোপাতে থাকেন মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত।

ভিডিও ফুটেজে যে দুজন হামলাকারীকে দেখা গেছে, তাদের শনাক্ত করেছে র‌্যাব। একজনের নাম মানিক ও আরেকজন মনির। র‌্যাব বলছে, এ খুনের মূল পরিকল্পনাকারী লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল। তার নির্দেশে স্থানীয় সন্ত্রাসী মনির, মানিক, সুমন ব্যাপারী, হাসানসহ অন্যরা ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে রামদা ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করেন। এরপর সুমন মুঠোফোনে সাবেক সাংসদ আউয়ালকে জানান, ‘স্যার, ফিনিশ’।

মুঠোফোনের কল রেকর্ড পরীক্ষা করে র‌্যাব এ তথ্য পেয়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে।

এরআগে সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগম অভিযোগ করে বলেছিলেন, পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের বুড়িরটেকে (আলীনগর) তার ও তাদের স্বজনদের ১০ একর জমি রয়েছে। আশপাশের কিছু জমি দখল করে সেখানে হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেড নামের আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন আউয়াল।

আকলিমা বেগমের অভিযোগ, তাদের জমি জবরদখলে ব্যর্থ হয়ে আউয়াল ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বরেও সন্ত্রাসীরা সাহিনকে কুপিয়ে আহত করেছিল। সেই ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো আউয়ালের দেওয়া মিথ্যা মামলায় সাহিনুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সপ্তাহখানেক আগে সাহিনুদ্দিন জামিনে মুক্তি পান।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাহিনুদ্দিনদের জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে সাবেক সাংসদ আউয়ালের নির্দেশ ও পরিকল্পনায় এ খুনের ঘটনা ঘটে। ঘটনার চার-পাঁচ দিন আগে আউয়ালের কলাবাগান অফিসে আসামি তাহের ও সুমন চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। পল্লবী এলাকার সন্ত্রাসী সুমনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তাদের সহযোগী হিসেবে আরও কয়েকজন ছিলেন।

র‌্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, আউয়াল জমি বেচাকেনা করতেন। সুমনের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী গ্রুপ দিয়ে তিনি জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তার করতেন। সুমন আউয়ালের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা করে মাসোয়ারা পেতেন। ক্ষেত্রবিশেষে কাজ অনুযায়ী অতিরিক্ত টাকা পেতেন। সুমন এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রিকশা টোকেন বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতেন। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে পল্লবী থানায় অন্তত ছয়টি মামলা রয়েছে।

আউয়াল কেন সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করিয়েছেন, এ প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, আউয়ালের সঙ্গে সাহিনুদ্দিনের জমি নিয়ে বনিবনা হচ্ছিল না। সাহিনুদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, এ হত্যার জন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ৩০ লাখ টাকা চুক্তি করেছেন আউয়াল।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.