Sylhet Today 24 PRINT

আমলাগোষ্ঠীর চক্রে প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াস নিস্ফল: মেনন

সিলেটটুডে ডেস্ক: |  ১৪ জুন, ২০২১

সংসদে প্রস্তাবিত (২০২১-২২) অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন স্বাস্থ্যখাতের কঠোর সমালোচনা করেছেন। দেশে করোনা টিকা আসার অনিশ্চয়তার কথাও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত না হওয়ার অভিযোগ তোলেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি হেফাজত ইসলামেরও কঠোর সমালোচনা করেন। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু দেশে অতি ধনী সামরিক-বেসামরিক আমলাগোষ্ঠী ও দুর্নীতিবাজদের চক্রে প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রয়াস অনেকখানিই নিস্ফল হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের জীবন রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, আমলাতান্ত্রিক খবরদারিত্বে বাস্তবে রূপ নিতে পারেনি। করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যখাত বিশেষজ্ঞদের পরিবর্তে আমলাতান্ত্রিক নির্দেশে পরিচালিত হওয়ায় কি ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল তা সকলেই জানেন। চোখের সামনে মাস্ক, পিপিই, করোনা টেস্ট নিয়ে জাল-জালিয়াতি ঘটেছে। একজন শাহেদ, একজন সাবরিনা গ্রেপ্তার হয়েছে, কিন্তু যারা সচিত্র চুক্তি স্বাক্ষর করল, কাজ দিল তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।’

মেনন বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রথমেই টিকা সংগ্রহ করে সফলভাবে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে টিকা সরবরাহের পরিণতি সবাই দেখেছে। টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। আগামী মাসগুলোতে টিকা আসবে তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। দেশের ১২ কোটি মানুষের জন্য টিকা ব্যবস্থা করতে না পারলে করোনা সংক্রমণ রোধ হবে না। এই টিকা সরকারকেই সংগ্রহ করতে হবে। কোন মধ্যস্বত্বভোগী অথবা বানিজীকরণের জায়গা নাই। দেশে টিকা উৎপাদনের যে সক্ষমতা আছে তাকে কাজে লাগাতে হবে। অর্থমন্ত্রী বাজেটে টিকাদানের কোনো রোডম্যাপ দেননি বলে তিনি মন্তব্য করেন।’

মেনন তার বক্তব্যে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে পাঁচ লাখ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া করাচ্ছে তাদের ওপর ১৫ ভাগ কর চাপানো হয়েছে যা শেষ বিচারে শিক্ষার্থীদের উপর পড়বে। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বর্ধিত বরাদ্দের একটা বড় অংশ সরকারি কর্মচারীদের পেনশন। বাজেটে আদিবাসী দলিত, ভূমিহীন, প্রান্তিক চাষি উপেক্ষিত তাদের কথা নাই।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হেফাজতের তাণ্ডব দেখা গেছে। কিভাবে তারা কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে একটা অভ্যুত্থান ঘটাতে চেয়েছিল। তারা যে বিএনপির সমর্থন পেয়েছিল এটা এখন দলের মহাসচিবের কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসাকে শিক্ষার মূলধারায় নিয়ে আসার বিষয়ে সংসদে আগেই বলেছিলাম 'বিষবৃক্ষ' লালন করছি কিনা। তার প্রতিক্রিয়ায় হেফাজত মিছিল করে আমার ফাঁসি চেয়েছে। এই সংসদে জাতীয় পার্টির এক এমপি 'ধান ভানতে শিবের গীত' গেয়েছি বলে উপহাস করেছিলেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী হেফাজতের সমর্থনে তাদের ভারতের দেওবন্দের অনুসারী বলে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা বলে বাবুনগরী পাকিস্তানের মাদ্রাসার ছাত্র। ইজাহার হুজির সদস্য 'আফগান যুদ্ধ ফেরত তালেবান' ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডবের নায়ক সাজাদ্দুর রহমান, মোবারক মোলতা সবাই তালেবান অনুসারী। বাংলাদেশে আরেকটি তালেবানি অভ্যুত্থান দেখতে চাই কিনা সেটা দেখার বিষয়।’

পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মার্কিন অথবা অন্য কারও নেতৃত্বধীন জোটে যোগদান সংবিধান সমর্থন করে না। আর যুক্তরাষ্ট্র যার বন্ধু তার শত্রুর প্রয়োজন নাই। বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়টি প্যালেস্টইন সম্পর্কে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু আমল থেকে অনুসৃত নীতির বিপরীত। ভুল বার্তা দেয়। পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় সেই ব্যাখা তাদের দিতে হবে।’

মহিলা ইউএনও এর গার্ড অব অনার বিষয়ে সংসদীয় কমিটির বিরোধিতার সমালোচনা করে মেনন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়ায় নারী কর্মকর্তাদের না রাখতে বলেছেন। এটা নাকি ধর্মবিরোধী কাজ। জানাজায় মহিলারা অংশগ্রহণ করতে পারেন না বলে ফতোয়াও দিয়েছে। এই ফতোয়া দেওয়ার যোগ্যতা তারা রাখেন না। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে বলবো এই বিষয়ে যেন কোনো রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা না হয়। এটা হলে তা হবে মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ।’

তিনি বলেন, ‘করোনাকালে আড়াই কোটি মানুষ যারা দরিদ্র হয়ে গেলেন বাজেটে তাদের জন্য কিছু নেই। করোনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্রস্তাবে ৩৫ ভাগ অর্থ বিতরণ হয়নি। যে গরিব মানুষের জন্য দুই দফায় ২৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ অব্যয়িত, তারা পায়নি।’

অর্থনীতির ড্রাইভিং সিটে ব্যক্তিখাতকে বসাবেন বলে অর্থমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন তা সংবিধানবিরোধী।

তিনি বলেন, ‘জিয়া-এরশাদ যা করতে পারে নাই অর্থমন্ত্রী সে কথাই জোর গলায় বললেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অর্থনীতি সংবিধানের উল্টো পথে চলছে। তাহলে বরং খোলামেলায় ঘোষণা দিন বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত এই সংবিধান অচল। মেনন বলেন, করোনাকালে ভারতের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ যেখানে ১৩৩ ভাগ বাড়ানো হয়েছে, আমাদের বাজেটে বাড়ানো হয়েছে ১৩ ভাগ যা জিডিপির ১ শতাংশের কিছু বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় যেখানে বেশি, সেখানে মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানেরও পেছনে। বর্তমান বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের ৩৫ ভাগ ব্যয় হয় নাই। গবেষণার ১০০ কোটি টাকা পুরোটাই রয়ে গেছে। স্বাস্থ্যক্রয়ে দুর্নীতির কথা বলে সংসদকে ভারাক্রান্ত করতে চাই না।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.