Sylhet Today 24 PRINT

পাকিস্তানি জাল সার্টিফিকেট জমা দেওয়ায় খন্দকার মাহবুব তিরস্কৃত

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৮ নভেম্বর, ২০১৫

দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের আইনজীবি খন্দকার মাহবুব হোসেন কর্তৃক সুপ্রীম কোর্টে জাল সার্টিফিকেট জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তিরস্কৃত হয়েছেন খন্দকার মাহবুব।

প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা খন্দকার মাহবুবের উদ্দেশে বলেন, এগুলো ফেক (ভুয়া)। আপনারা একটা মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে অনেকগুলো মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।

‘‘আপনারা পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে সাকার সার্টিফিকেট এনে দিয়েছেন। অথচ এগুলো ফেক (ভুয়া)। আপনারা একটা মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে অনেকগুলো মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।’’

বুধবার (১৮ নভেম্বর) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুবের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা রিভিউ আবেদনের শুনানির সময় এসব কথা বলেন।

তখন খন্দকার মাহবুব প্রধান বিচারপতিকে বলেন, ‘এ সার্টিফিকেটের বিষয়ে সন্দেহ হলে আপনারা দূতাবাস ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মাধ্যমে তা যাচাই করে দেখতে পারেন।’

প্রধান বিচারপতি তখন হাসতে হাসতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, ‘মিস্টার অ্যাটর্নি জেনারেল শোনেছেন? আপনাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে সার্টিফিকেটগুলো যাচাই করতে বলছেন খন্দকার মাহবুব।’

খন্দকার মাহবুব আরও বলেন, ‘পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির একটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সালাউদ্দিন কাদেরকে প্রত্যায়নপত্র দিয়েছিলেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওই সময় ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে ক্রেডিট ট্রান্সফার করেছিলেন।’

এর জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মাই লর্ড, আমিও ওই সময় ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র  ছিলাম। তখন  ক্রেডিট ট্রান্সফার কিংবা সেমিস্টারের সিস্টেম ছিল না।’

মাহবুবে আলম বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া যে ডুপলিকেট সার্টিফিকেট আদালতে দাখিল করেছেন সেটা ২০১২ সালে ইস্যু করা। আদালত তা গ্রহণযোগ্য মনে করেননি। ২০১৩ সালে তিনি যখন সাক্ষ্য দেন তখন এটা উল্লেখ করেননি।

তিনি বলেন, পাকিস্তানে আমাদের যিনি হাইকমিশনার আছেন তিনি সেখানে কোনো সত্যায়িতও করেননি। কাউন্টার সাইন করতে হয়, সেটা করা হয়নি। আইনের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি কীভাবে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা দিলেন সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। জানান মাহবুবে আলম।

"সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার পাকিস্তানে অবস্থানের বিষয়ে ২০১৩ সালের জুলাইতে নিজেই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এসব কিছু উল্লেখ করেননি। সুতরাং এই সার্টিফিকেট শেষ মুহূর্তে বিবেচনায় আনার প্রয়োজন আছে বলে আদালত মনে করেনি। আমরাও একই রকম বক্তব্য দিয়েছি।

“তারচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কোনো বিদেশি কাগজ সেই দেশের নোটারি পাবলিকেশন্সের সামনে অথেনটিকেট করতে হয়। ওটা সাইন করেন সেখানে আমাদের দেশের অ্যাম্বাসেডর, হাইকমিশনার অথবা অন্য কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

"পাকিস্তানে আমাদের হাইকমিশনার সেখানে স্বাক্ষর করেননি। সুতরাং এটাকে কাউন্টার সাইন করার প্রশ্ন আসে না। আইনি প্রক্রিয়ায় এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

"আজকের কথিত সার্টিফিকেটে লেখা ছিল সেশন- ১৯৭১, এর আগে একজন কথিত অধ্যাপকের একটি সার্টিফিকেইট দেওয়া হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল সেশন ১৯৭০-৭১। সেশন কখনও এক বছর হয় না। হয়তো ৭০-৭১ হবে, অথবা ৬৯-৭০ এরকম হবে।

"যেহেতু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভর্তি দেখানো হয়েছে ১৯৬৮ সনে, তারা মৌখিকভাবে বলেছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্রেডিট টান্সফার করা হয়েছে।

"ওই সময় আমি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগে পড়তাম। সেই সময় আমাদের কোনো সেমিস্টার সিস্টেম ছিলনা। সুতরাং ক্রেডিট ট্রান্সফারের কোনো বিধানও তখন ছিল না। সেমিস্টার সিস্টেম চালুর পর আমাদের দেশে ক্রেডিট ট্রান্সফারের বিষয়টি চালু হয়।

"সুতরাং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এতো শর্ট টাইমে পাস করার বিষয়টিও নিয়ম বহির্ভূত।"

প্রধান বিচারপতি তখন খন্দকার মাহবুবকে বলেন, ‘ফেক সার্টিফিকেটগুলো আপনারা কেন আমাকে দিলেন? লন্ডন, ওয়াশিংটনের সার্টিফিকেট দিলেন কিন্তু পাঞ্জাবেরটা দিতে পারলেন না কেন?’

তিনি এও বলেন, ‘একাত্তরে পাকিস্তান আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধী ছিল, তাদের সার্টিফিকেট আমরা কীভাবে গ্রহণ করবো? তাছাড়াও যে সার্টিফিকেটগুলো দিয়েছেন যেগুলোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো স্বাক্ষর নেই।’

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সাকা চৌধুরীর আইনজীবিরা সাকা সে সময় পাকিস্তানে ছিলেন তা প্রমাণ করতে ভুয়া সার্টিফিকেট দাখিল করেছিলেন। সব ধরনের রায়ের সাকা চৌধুরীর ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.