Sylhet Today 24 PRINT

গার্ড অফ অনারে নারী: আপত্তি আমলে নেবে না মন্ত্রণালয়

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৩ জুন, ২০২১

কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মানের অংশ হিসেবে ‘গার্ড অফ অনার’ দেয়ার সময় সরকারের নারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি তোলা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ আমলে নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বুধবার এ কথা জানান মন্ত্রী। সংসদীয় কমিটির ওই সুপারিশকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘সুপারিশ আকারে আমাদের কাছে আসেনি। আসবে কি না আমি জানি না। আসলে তখন আমরা বলব। যেদিন আলোচনা হয়েছে, তখন আমি বলেছি, আমার অভিমত ব্যক্ত করেছি যে, সেখানে কোনো ব্যক্তি যায় না। যায় রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী। সেটা নির্ধারণ করে দেয়া আছে, কে যাবে।’

সংবিধান সমুন্নত রাখা দায়িত্ব বলে জানিয়ে আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে লিঙ্গ বৈষম্য করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আমাদের সংবিধানের সংরক্ষণের জন্য শপথ নিয়েছি। কাজেই আমার এর বাইরে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।’

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় প্রশাসন। ‘গার্ড অফ অনার’ দিতে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। রাষ্ট্রীয় সম্মানের অংশ হিসেবে সরকারের প্রতিনিধি হয়ে মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধাও জানান ওই সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা।

‘গার্ড অফ অনার’ দেয়ার সময় সরকারের নারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিয়ে ১৩ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৯তম বৈঠকে আপত্তি তোলা হয়। এর বিকল্প খুঁজতে সুপারিশ করা হয় সভায়।

বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে একটি রিটও হয়। হাইকোর্ট থেকে জানানো হয়, নারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতির বিকল্প চাওয়া সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে বিষয়টি তারা দেখবে।

রিটকারীর উদ্দেশে আদালত বলে, বিষয়টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশমাত্র। এমন সুপারিশ গেজেট আকারে প্রকাশিত হলে তখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ দেয়া হবে। তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।

গার্ড অফ অনারে সংসদীয় কমিটির সুপারিশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। তারা জানান, এ ধরনের সুপারিশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে ধর্মের বিষয়টিকে সামনে আনা হচ্ছে।

শ্রীবরদী উপজেলার ইউএনও নিলুফা আক্তার বলেন, ‘নারীরা মুক্তিযুদ্ধে অনেক বড় অবদান রেখেছেন। তারা এখন গার্ড অফ অনার দিলে সমস্যা কোথায়? আমরা মাঠ পর্যায়ে সব কাজই তো করছি। তাহলে গার্ড অফ অনার দিতে পারব না কেন?’

বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। ‘গার্ড অফ অনার’-এ নারী কর্মকর্তাদের বাদ দেয়ার সুপারিশ করায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায় ‘আমরাই পারি’ নামে একটি সংগঠন।

এসব সমালোচনার মধ্যেই সংসদীয় কমিটির সুপারিশ আমলে নেয়া হবে না বলে জানালেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। বললেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নারী না পুরুষ সেটা দেখার সুযোগ নেই।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের নির্দেশ হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর ওপর, যিনি সর্বোচ্চ কর্মকর্তা জেলার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক, উপজেলার ক্ষেত্রে ইউএনও। তারা নিজেরা উপস্থিত থেকে গার্ড অফ অনার দেবেন। যদি কোনো কারণে তিনি হেড কোয়ার্টারে না থাকেন তাহলে তার পরবর্তী ব্যক্তি দেবেন। কাজেই নির্দেশটি কোনো নারী বা পুরুষের জন্য নয়, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী জন্য।

‘আইনের যেহেতু পরিবর্তন হয়নি, অন্য কারও গার্ড অফ অনার দেয়ার সুযোগ নাই। এখন যদি বলতে হয় যে মহিলারা দেবে না, তাহলে কোনো মহিলাকে ইউএনও করা যাবে না। কোনো মহিলাকে ডিসি করা যাবে না। যদি এটা মানতে হয়।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর ‘গার্ড অফ অনার’ দেয়ার আয়োজন দিনের আলোয় সম্পন্ন করার পক্ষে মত দিয়েছিল। এই সুপারিশেও বিরোধিতা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘জানাজা আমাদের ধর্ম (ইসলাম) মতে যেটা যতো দ্রুত সময়ের মধ্যে দাফন করা যায়। বিদেশ থেকে লাশ আসলে তো দেরিতেও হয়। দাফন কখন হবে সেটা নির্ভর করে ওই পরিবার, ওই সমাজের ওপর। সেটা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নয়। প্রশাসনের কাজ হলো নির্ধারিত সময়ে হাজির হওয়া।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.