Sylhet Today 24 PRINT

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর

ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: |  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আমৃত্যু পাহাড়ি জনগোষ্ঠী মানুষের ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন লারমা) লারমা। তবে তিনি শুধু পাহাড়ের মানুষেরই নেতা ছিলেন না; তার সংগ্রাম ছিল দেশের সকল নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে। বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার আদর্শ এখনো প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ফেসবুক পেইজ থেকে সম্প্রচার করা হয়।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এর সঞ্চালনায় ও সভাপতিত্বে আলোচনায় দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ সাধারণ সম্পাদক পল্লব চাকমা।

ভার্চুয়াল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বরেণ্যে রাজনীতিবিদ ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার, সাহিত্যিক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানাদাশ গুপ্ত, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্রেট সদস্য জান্নাত ই ফেরদৌসী, বিএনপিএস এর উপ পরিচালক শাহানাজ সুমি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্য চঞ্চনা চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধরণ সম্পাদক অলিক মৃ প্রমুখ।

বক্তারা বলেছেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সকল আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ‘বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্রগুলো সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করছে। বাংলাদেশর ক্ষেত্রেও সেটা পুরোপরি লক্ষ্যণীয়। কেননা যে আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এদেশের আদিবাসীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল সেটি পুরোপুরি উপেক্ষিত।’

সাহিত্যিক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘এম এন লারমা একজন ভিন্ন প্রকৃতির নেতা ছিলেন। তিনি শুধু পাহাড়ী মানুষের অধিকারের কথা বলেননি, তিনি সকল জাতিসত্বার কথা বলেছেন। একটি সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি সংগ্রাম করেছেন।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আদিবাসী এদেশে সবচেয়ে পশ্চাৎপদ জাতি। তাই তাদেরকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। একারণে এম এন লারমা সকল মেহনতি মানুষের কথা সংবিধানে অন্তর্ভূক্তির জন্য সোচ্চারভাবে দাবি তুলেছিলেন।’

বরণ্যে রাজনীতিবিদ ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘এম এন লারমা একজন ব্যতিক্রমধর্মী জাতীয় নেতা ছিলেন। তিনি সমগ্র জুম্ম জাতিকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি দেশের গোটা বাঙালী সমাজকেও প্রভাবিত করেছিল। নারীদেরকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধকরণের মধ্য দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি।’

অ্যাডভোকেট রানাদাশ গুপ্ত বলেন, ‘এদেশের মানবাধিকারের লড়াই যতদিন থাকবে ততদিন এমএন লারমা আমাদের মাঝে থাকবেন। তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানুষের নেতা।’

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘এদেশ বহু ভাষার, বহু বর্ণের, বহু জাতি ও বহু সংস্কৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। স্বাধিনতার ৫০ বছরেও এদেশে আদিবাসীদের অধিকার স্বীকৃতি মেলেনি। এ কারনে এমএন লারমা সংবিধান রচনার প্রাক্কালে সকল মানুষের অধিকারের কথা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘প্রগতিশীল পরিবারের জন্ম নেয়া এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষটি ছিলেন প্রতিবাদী, সাহসী, সংগ্রামী, দৃঢ়চেতা ও বিচক্ষণ প্রতিভাবান। প্রতিবাদী ছিলেন বলে তিনিই প্রথম কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করেছিলেন। যার কারণে পাাকিস্তান সরকার কর্তৃক তিনি গ্রেপ্তার হন। কাপ্তাই বাধের ফলে ৫৪ হাজার একর ধানি জমি পানিতে তলিয়ে যায়, প্রায় ৬০ হাজার পাহাড়ী উদ্বাস্তু হয়ে পাশের দেশ অরুনাঞ্চলে নাগরিকত্বহীন অবস্থায় বসবাস করছেন। যা তাদেরকে এখনো সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করা হয়নি। ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ীদের মধ্যে হতাশা ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।’

প্রসঙ্গত, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরের মহাপূরমের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক ও চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি বিএ পাশ করেন। এরপর তিনি বিএড এবং এলএলবি পাশ করেন। তার উদ্যোগে ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠিত হয়। জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.