Sylhet Today 24 PRINT

বাসের বক্সে নারীর লাশ, নিখোঁজ জিডির সূত্রে ধরা পড়ল ‘খুনি’

সিলেটটুডে ডেস্ক: |  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

২০১৫ সালের ৩ মে ভোররাত। চট্টগ্রামে এ কে খান মোড়ে ঈগল পরিবহনের কাউন্টার থেকে ঢাকাগামী বাসের টিকিট কাটেন এক ব্যক্তি। এরপর তিনি একটি ট্রাঙ্ক তুলে দেন বাসের বক্সে। ট্রাঙ্ক বক্সে দেওয়ার পর ওই ব্যক্তি হেলপারকে বলেন, সামনের একটি কাউন্টার থেকে একজন যাত্রী উঠবেন। এটি তার ট্রাঙ্ক। তিনি এটি নেবেন। তবে সামনের কাউন্টারতো দূরের কথা ঢাকা পর্যন্ত ট্রাঙ্কটি কেউ বুঝে নেয়নি। এ অবস্থায় বিকেলে গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে হেলপার ট্রাঙ্ক খুললে দেখতে পান এক নারীর মরদেহ।

আতঙ্কিত হয়ে বাসের হেলপার খবর দেন দারুস সালাম থানায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় লাশটি। কেউ বাদী না হওয়ায় দারুস সালাম থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহানুর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে একটি মামলা করেন।

এরপর কয়েক দফা হাতবদলের পর তদন্তের দায়িত্ব আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে। অবশেষে ওই নারীর হত্যাকারীকে শনাক্ত করে সংস্থাটি। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নাম রেজাউল করিম স্বপন। স্বপন (অবসরপ্রাপ্ত নৌ বাহিনী সদস্য)।

মামলার রহস্য উদঘাটন নিয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, হত্যার পর প্রায় তিন মাস পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। থানা পুলিশের পর সিআইডি দীর্ঘ চার বছর তদন্ত করে। কিন্তু মরদেহের পরিচয় শনাক্ত এবং হত্যারহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়। দাখিল করা চূড়ান্ত রিপোর্ট না নিয়ে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে দেন।

তিনি বলেন, ‘মামলাটি হাতে পাওয়ার তদন্তকারী কর্মকর্তা সশরীরে চট্টগ্রামে গিয়ে ২০১৫ সালে এন্ট্রিকৃত ১০-১২টি নিখোঁজ হওয়া ঘটনার জিডি সংগ্রহ করেন। এদের মধ্যে একটি ছিল শম্পা বেগমের। শম্পার মরদেহ উদ্ধারের কয়েকদিন আগে তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন।’

পিবিআইয়ের তদন্ত দল শম্পা বেগমের বাবা ইলিয়াস শেখের (অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য) সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, ২০১৩ সালে রেজাউল করিম স্বপন (অবসরপ্রাপ্ত নৌ বাহিনী সদস্য) খুলনার তিতুমীর নৌ ঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। আর শম্পা স্থানীয় একটি হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করতেন। সেই হাসপাতালে ইলিয়াস শেখ নামে এক নৌ অফিসারের স্ত্রীর চিকিৎসাকালীন শম্পা বেগমের সঙ্গে আসামি রেজাউলের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন পরই রেজাউল বদলি হয়ে চট্টগ্রামে চলে যান। শম্পাও কিছুদিন পর চট্টগ্রামে চলে আসেন।

চট্টগ্রামে শম্পা তার ফুফুর বাসায় কিছুদিন থাকেন। এরপর তিনি রেজাউলকে নিয়ে ফয়’স লেক এলাকায় একটি হোটেলে কিছুদিন অবস্থান করেন। পরবর্তী সময়ে পাহাড়তলী এলাকার উত্তর গ্রিনভিউ আবাসিক এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেনের টিনশেড বাড়ির একটি বাসায় সাবলেট নিয়ে থাকতে শুরু করেন। সেখানে তারা প্রায় এক বছর একত্রে বসবাস করেন। স্থানীয়দের কাছে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকলেও তারা প্রকৃতপক্ষে বিয়ে করেননি।

পিবিআই প্রধান বলেন, ‘এক সঙ্গে থাকাকালীন দুজনের মধ্যে নানা বিষয়ে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এক পর্যায়ে ২০১৫ সালের ২ মে গভীর রাতে শম্পাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন রেজাউল। এরপর তিনি শম্পার মরদেহ গোপন করার জন্য একটি ট্রাংকে করে তুলে দেন। পাশাপাশি শম্পার বাবাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘শম্পাকে খুলনার বাসে তুলে দেয়া হয়েছে।’

শম্পা তার বাবার বাড়িতে না পৌঁছালে তার ভগ্নিপতি আব্দুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় ওই জিডিটি করেন। দীর্ঘ তদন্তের পর শুক্রবার রাতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি চৌকস দল রেজাউল করিম স্বপনকে কুমিল্লা জেলার ইপিজেড এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার রেজাউলকে আদালতে পাঠানো হয়। হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন রেজাউল।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.