Sylhet Today 24 PRINT

সংসদ সদস্য পদ হারাচ্ছেন মুরাদ!

সিলেটটুডে ডেস্ক: |  ০৮ ডিসেম্বর, ২০২১

মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের পর দল থেকেও বহিষ্কৃার হতে যাচ্ছেন ডা. মুরাদ হাসান। মঙ্গলবার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাকে। পাশাপাশি ইঙ্গিত মিলেছে দল থেকে বহিষ্কৃারেরও। বহিষ্কৃত হলে সংগঠনে তার প্রাথমিক সদস্যপদও থাকবে না। ঝুঁকির মুখে পড়বে সংসদ সদস্য পদও। তবে সে ক্ষেত্রে সংবিধানের নির্দেশনা মেনে নির্বাচন কমিশনের মতামত নিতে হবে স্পিকারকে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পরবর্তী বৈঠকে মুরাদ হাসানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

এর আগে মুরাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশের কথা জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ।

এদিকে, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ডা. মুরাদ হাসান যে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, তা গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তার অনুমোদনের পর এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গত মাসে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃার করা হয়। সদ্য সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের ক্ষেত্রেও তা-ই হবে বলে আভাস দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'যেভাবে জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রে হয়েছে, ডা. মুরাদের বেলায় তা-ই হবে। তবে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ছাড়া এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।'

ওবায়দুল কাদের এ বক্তব্য দেওয়ার কিছুক্ষণ পর জানা যায়, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ স্বাস্থ্য সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে মুরাদ হাসানকে। নৈতিক স্খলনে দণ্ডিত হলে এমপি পদ হারাতে হয়। মুরাদ হাসান দণ্ডিত না হলেও একজন চিত্রনায়িকাকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ফোনকল ছড়িয়েছে। তাই তার এমপি পদ থাকবে কিনা- এ প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'গুরুতর অভিযোগ এলে এ বিষয়ে স্পিকার সিদ্ধান্ত দেবেন।'

মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা বেশ দীর্ঘ। খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমানকে অশালীন ও বর্ণবাদী মন্তব্য, রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে নায়িকাকে হোটেলে তুলে এনে ধর্ষণের হুমকি, অশ্নীল বক্তব্যসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ঠিক কোন কারণে তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয়েছে- এ প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যে কোনো অনিয়ম-অপকর্মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থান কঠোর। অপরাধী যে-ই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে নয়। শেখ হাসিনা তা প্রমাণ করেছেন।

বহিষ্কৃার হলেই শূন্য হবে এমপি পদ?: সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দল থেকে পদত্যাগ করলে এমপি পদ শূন্য হওয়ার কথা স্পষ্ট করা রয়েছে। কিন্তু দল থেকে বহিষ্কৃত হলে এমপি পদ শূন্য হওয়ার বিষয়টি সরাসরি কোথাও বলা নেই। তবে অতীতের ঘটনা বিশ্নেষণে দেখা যায়, অনেকেই দল থেকে বহিষ্কৃারের পরও এমপি পদে বহাল থাকার নজির রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নবম সংসদ গঠনের পর এ ধরনের নজির নেই। কারণ, ওই ভোটের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) সংশোধন করে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই এখন আর কেউ দল থেকে বহিষ্কৃার হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বতন্ত্র হতে পারছেন না। কারণ, স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য সংশ্নিষ্ট নির্বাচনী এলাকার শতকরা এক ভাগ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরসহ আরও অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়।

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে এমপি নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতার ক্ষেত্রে যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে- তাতে এ বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। ৬৬(২)(ছ)-তে বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি এমপি নির্বাচিত হওয়ার অথবা থাকার যোগ্য হবেন না যদি 'তিনি কোন আইনের দ্বারা বা অধীন অনুরূপ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হন।'

এই বিধানের অধীনে নির্বাচন কমিশন আরপিওর ১২(খ) অনুযায়ী সংসদ সদস্যপদ বাতিলের সুযোগ রয়েছে। কারণ ওই ধারায় বলা আছে- এমপি হিসেবে থাকার যোগ্যতা পূরণে তাকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে।

তাই দল থেকে বহিষ্কৃারের পর দলীয় সিদ্ধান্ত চিঠি দিয়ে স্পিকারের দপ্তরকে জানাতে হবে। স্পিকার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাছে সুপারিশের জন্য পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত আবার স্পিকারের কাছে এলে তিনি তা সংসদের বৈঠকে জানিয়ে দেবেন।

এ ছাড়া সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে (ঘ) বলা আছে, 'কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দণ্ডিত হন।' মুরাদ হাসানের বিষয়টি আদালতে যায়নি। তবে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে সরকারের একাধিক সূত্র।

বহিষ্কৃার হয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকীও: এর আগে বিতর্কিত মন্তব্য করে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বহিষ্কৃার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করেন তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। ওই বছরের ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে বহিষ্কৃার, দলীয় প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত এবং কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃার করা হবে না- তার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। ২৪ অক্টোবর টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে পাঁচবারের নির্বাচিত এমপিকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কৃার করা হয়। দল থেকে বহিষ্কৃারের আট মাস পর ২০১৫ সালের ৫ জুলাই বিষয়টি জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। স্পিকার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেন। ওই বছরের ২৩ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে উপস্থিত হয়ে সংসদ সদস্যপদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। ১ সেপ্টেম্বর সংসদ অধিবেশনে অংশ নিয়ে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে তার পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়।

খবর: সমকালের।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.