Sylhet Today 24 PRINT

ঘুমন্ত মেয়ের গলায় ছুরি ধরে নারীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’

সিলেটটুডে ডেস্ক: |  ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

ঘুমন্ত মেয়ের গলায় ছুরি ধরে জিম্মি করে এক ভাড়াটিয়া নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাড়ির মালিকের ছেলে ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়।

এ ঘটনায় বাড়ির মালিকের ছেলে ও প্রধান অভিযুক্ত জুবায়েদ হোসেন আকাশকে গ্রেপ্তার করে বুধবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করে পুলিশ।

ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব আহাম্মদ তালুকদারের আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পুলিশ ও ধর্ষণের শিকার নারীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই নারী (৪০) তিন সন্তানের জননী। সদর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। গত দুই বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ায় মাস দুয়েক আগে ফের তার বিয়ে হয়। তার বর্তমান স্বামী পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক। বিয়ের পর তিনি স্বামীর সঙ্গে পৌর এলাকার দত্তপাড়ায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করেন। তাদের পাশের রুমে বসবাস করতেন বাড়ির মালিক একাদুলের ছেলে আকাশ (১৯)। বাবা অন্যত্র থাকায় মাহিন্দ্র চালক আকাশ একাই সেখানে থাকতেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত রোববার রাত ১টার দিকে আকাশ ভাড়াটিয়ার ঘরের দরজা খোলার জন্য ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। দরজা খুলতেই আরও চার সঙ্গীকে নিয়ে তিনি রুমে প্রবেশ করেন।

দেশীয় অস্ত্রহাতে নারীর স্বামীকে ভয় দেখাতে শুরু করেন। অস্ত্রধারীদের ভয়ে পালিয়ে যান ওই নারীর স্বামী। পরে ওই পাঁচ যুবক তাকে ধর্ষণ করেন। ঘটনা স্থানীয়দের জানিয়ে গত মঙ্গলবার থানায় যান ওই নারী। রাতে বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন জুবায়েদ হোসেন আকাশ, আপন মিয়া, মো. জামাল মিয়া, বাবু ওরফে হাড্ডি বাবু ও মো. সোহেল মিয়া। সোহেলের নাম ছাড়া অন্য কোনো পরিচয় জানা যায়নি। বাকিরা সবাই দত্তপাড়ার বাসিন্দা।

নির্যাতিত নারী মোবাইল ফোনে জানান, বাড়ির মালিকের ছেলে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ডেকে তোলেন। ঘরের দরজা খুলতেই অস্ত্রের মুখে তার স্বামীকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর পুরো ঘর তছনছ করে। পরে তার চার বছর বয়সী ঘুমন্ত মেয়ের গলায় ছুরি ধরে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালায় পাঁচজন। বিষয়টি কাউকে না বলতেও হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে তার স্বামী এখনও পলাতক। তিনি ন্যায়বিচারের জন্য মামলা করেছেন।

গত মঙ্গলবার রাতে মামলা হওয়ার পর পুলিশ পৌর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আকাশকে গ্রেপ্তার করে। সে এলাকায় চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অন্য আসামি বাবুর প্রকৃত নাম শরীফুল ইসলাম বাবু। কিন্তু পুলিশের রেকর্ডে নাম বাবু ওরফে হাড্ডি কিলার বাবু। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ছাড়াও আরও পাঁচটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারও হয়েছে বেশ কয়েকবার। নানা অপকর্মের কারণে এলাকায় দেখা যেত না এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা বাবুকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, গত পৌর নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস ছাত্তার পৌরসভার মেয়র হিসেবে নির্বাচন করে নির্বাচিত হন। তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী মাঠে দাপিয়ে বেড়ায় বাবু। এরপর যুক্ত হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নানা কর্মসূচিতে। এলাকায় গ্রুপ সৃষ্টি করে নেতৃত্ব দিয়ে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বাবু। ধর্ষণে অভিযুক্তরা ঘটনার পর থেকে পলাতক।

ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস ছাত্তার বলেন, বাবু এ ঘটনার সঙ্গে কতটুকু সম্পৃক্ত, তা জানেন না। তবে ন্যক্কারজনক এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্যও পুলিশকে বলেছেন তিনি। উপজেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারা পারভীন বিনা ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি করেন।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, আকাশ পাঁচজন মিলে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। স্বীকারোক্তি শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

সূত্র: সমকাল।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.