Sylhet Today 24 PRINT

যেভাবে সন্ধান মিলল পিকে হালদারের

সিলেটটুডে ডেস্ক: |  ১৪ মে, ২০২২

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট ও বিদেশে পাচার করে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারকে ধরতে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের অন্তত নয়টি জায়গায় একযোগে অভিযান চালিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

শুক্রবার থেকে এই অভিযান চালানো হয়। ওইদিন সারাদিন অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বাহিনীটি। শনিবার অবশেষে তিনি ধরা পড়েন সেই অশোকনগরেই, যেখানে তার অন্তত ২০-২২টি বিলাসবহুল বাড়ির সন্ধানও পাওয়া গেছে।

পরে গোয়েন্দা সংস্থাটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পিকে হালদার সে দেশে শিবশঙ্কর হালদার নাম ধারণ করেছিলেন। এই নামে তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেশন কার্ড করে নেন। এমনকি ভারতীয় ভোটার কার্ড, প্যান ও আধার কার্ডের মতো বিভিন্ন সরকারি পরিচয় জালিয়াতি করে তিনি নিজেকে শিবশঙ্কর হালদার বানিয়ে নেন। এছাড়া তিনি নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে জাহির করছিলেন। একই অবস্থা ছিল তার সহযোগীদেরও, যাদের তার সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে ভারতে এ অভিযান চালানো হয়। শনিবার ওই অভিযানে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে দুইজন বাংলাদেশি। তারা হলেন, প্রীতিশ কুমার হালদার ও প্রাণেশ কুমার হালদার। এছাড়া উত্তম মিত্র, স্বপন মিত্র ও সঞ্জীব হাওলাদার নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ইডি।

একই অভিযানে সন্ধান পাওয়া যায় পিকে হালদারের বিপুল সম্পদেরও। ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট পশ্চিমবঙ্গে তার কয়েকটি অভিজাত বাড়িসহ বিপুল সম্পত্তির কথা জানিয়েছে। বাড়িগুলো থেকে জমির দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি জব্দ করা হয়। শুধু পশ্চিমবঙ্গে পিকে হালদারের ২০ থেকে ২২টি বাড়ি আছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে সংস্থাটি।

ভারতে ৫০ হাজার রুপির বেশি জমা করতে গেলে অর্থের উৎস জানানো বাধ্যতামূলক, সেখানে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কেনার জন্য কীভাবে ব্যাংকে এই লেনদেন করা হল, তা জানার চেষ্টা করছে ইডি। পাশাপাশি ব্যাংকটিতে নামে-বেনামে পিকে হালদারের কোনো অর্থ আছে কি-না, তাও জানার চেষ্টা করছে সংস্থাটি।

পিকে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন সুকুমার মৃধা। পিকে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সুকুমার মৃধাকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তিনি কারাগারে আছেন।

কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুকুমার মৃধার বিশাল বিলাসী বাড়ির সন্ধান পেয়েছে ইডি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মৃধাকে তারা মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে চিনতেন। পিকে হালদার ও সুকুমার মৃধা অশোকনগরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী। ইডি ধারণা করছে, এই দুইজনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশে এনআরবির বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অশোকনগরের ভারতী পল্লী এলাকার পাশে নবজীবন পল্লীতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি পাওয়া গেছে পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। ঠিক তার পাশেই আরেক বিলাসবহুল বাগানবাড়ি সুকুমার মৃধার। মাছ ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও এলাকাবাসী সুকুমার মৃধার বিলাসী জীবন দেখে সব সময়ই সন্দেহ করত।

ইডির তদন্তে জানা যায়, এই এলাকাতেই একাধিক সম্পত্তি কিনেছে হালদার-মৃধা জুটি। এর মধ্যে শুক্রবার শুধু অশোকনগরেই তিন বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। যার একটিতে এতদিন একাই থাকতেন সুকুমার মৃধার জামাতা সঞ্জীব হালদার। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সঞ্জীব বলেন, প্রায় দুই বছর আগে শেষবার সুকুমার মৃধা অশোকনগরের এই বাড়িতে এসেছিলেন। মৃধার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা শুনেছি। তবে স্পষ্টভাবে কিছু জানি না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সঞ্জীব হালদার নিজেও বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি সুকুমার মৃধার যে বাড়িতে থাকছিলেন, সেটি মূলত পিকে হালদারের ভাই এনআরবিকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত প্রীতিশ হালদারের। স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রাণেশ হালদার নামে পরিচিত ছিলেন। তিন থেকে চার বছর আগে প্রীতিশ হালদার তার বাড়িটি সুকুমার মৃধার নামে হস্তান্তর করেন।

পিকে হালদারের আরেক সহযোগী স্বপন মিত্রের বাড়িতেও অভিযোন চালায় ইডি। অশোকনগরের একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিত্র অর্থ পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি পাওয়া গেছে বলে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেপ্তার করে ইডি।

অশোকনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন এলাকা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অভিজাত এলাকায় পিকে হালদার চক্রের একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে। সেখানেও তল্লাশি চালায় ইডি। একটি বিলাসবহুল বাড়িতে সুকুমার মৃধার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধার স্বামী সঞ্জীবকে পাওয়া যায়। অন্যগুলো ফাঁকা ছিল। এরপর সঞ্জীবকে জেরা করা হয়। এছাড়া পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদার এবং তার দুই ছেলে মিঠুন হালদার ও বিশ্বজিৎ হালদারকেও জেরা করে ইডি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রণব কুমার হালদার ছিলেন সরকারি কর্মচারী। তার বড় ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এবং ছোট ছেলে মিঠুন হালদার বিএসএফ জওয়ান হিসেবে কর্মরত। আয় ও সম্পত্তি সঙ্গতিহীন হওয়ায় তারাও ইডির নজরে রয়েছেন। তাদের চার বিঘা জমির ওপর বিলাসবহুল বাড়িটি সব সময় এলাকাসীর মনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে। পিকে হালদারের পাচার করা টাকা ‘হাওলা’র মাধ্যমে ভারতে ঢুকেছে বলে ধারণা করছে ইডি।

কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, মুম্বাই ও ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে হালদার-মৃধা জুটির বিনিয়োগ রয়েছে বলে অনুমান করছে ইডি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশি হয়েও ভারতে হালদার-মৃধা জুটির প্রভাবের অন্যতম বড় কারণ ছিল স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। খবর সমকালের 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.