Sylhet Today 24 PRINT

শনিবার থেকে সারা দেশের চা-বাগানে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

নিজস্ব প্রতিবেদক: |  ১২ আগস্ট, ২০২২

আগামীকাল শনিবার থেকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারা দেশের ২৩১টি চা-বাগানে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন। চা-বাগানের সব কাজ বন্ধ করে দাবি আদায়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশসহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাঘাটে অবস্থান নেওয়ার জন্য প্রতিটি চা-বাগানের শ্রমিকদের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে আসছেন শ্রমিকেরা। আজও দেশের সব চা-বাগানে কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা।

চতুর্থ দিনের কর্মবিরতি পালনকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সমাবেশ করেছেন চা-শ্রমিকেরা। এ সময় চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন চা-বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটি চা-বাগানের শ্রমিকেরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে ফুঁসে উঠেছেন। শ্রমিকেরা মজুরি না বাড়লে কাল থেকে কাজে যোগ দেবেন না। প্রয়োজনে জীবন দেবেন। এই দাসত্বের জীবনে তাঁদের অনেক কষ্ট। মালিকপক্ষের থেকে আমরা মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো আশ্বাস পাইনি। চট্টগ্রাম-সিলেটসহ সারা দেশের শ্রমিকেরা প্রস্তুত। আগামীকাল আমরা ধর্মঘটে নামব। সব বাগানে কাজ বন্ধ থাকবে। কাছাকাছি বাগানগুলোর শ্রমিকেরা একত্র হয়ে আন্দোলনে নামবেন। প্রয়োজনে সড়ক অবরোধ করা হবে। মালিকপক্ষের টালবাহানা আর আমরা মানব না। শ্রমিকদের আন্দোলন কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

সমাবেশে আসা নারী চা-শ্রমিক রিনা কালিন্দী বলেন, ‘আমরা এত কষ্ট করে কাজ করি, কিন্তু আমাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। বাড়িতে দুই ছেলে, এক মেয়ে, স্বামী রয়েছে। আমার একার রুজি দিয়ে সংসার চালাই। রেশন বাবদ তিন কেজি আটা পাই। চাল, ডাল, তেল, মসলাসহ অন্যান্য জিনিস কিনতে হয়। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ আছে। অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হয়। প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ছে না। আমরা ৩০০ টাকা মজুরি না পেলে কাজ করব না।’

আরেক নারী চা-শ্রমিক তারামন বলেন, ‘আমরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করি। আমাদের আন্দোলনের আগেই বাগানমালিকদের উচিত ছিল আমাদের খোঁজখবর নিয়ে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া। আমরা কাজ ফেলে কেন আন্দোলন করব? ২ বছর আগে যে জিনিস ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেটা ২০০ টাকা। আমাদের তো আলাদা কোনো রুজির ব্যবস্থা নেই। এটা তো বাগানমালিকেরা জানেন। আমরা ছেলেমেয়েদের আশা পূরণ করতে পারি না। ভালো জামাকাপড় কিনে দিতে পারি না। ছেলেমেয়েদের জীবন আমাদের কষ্টের জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। আমরা আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হলে রাস্তায় রক্ত দেব। যদি শ্রমিক ইউনিয়নও আন্দোলন বন্ধ করার কথা বলে, আমরা মানব না।’

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আমরা চার দিন ধরে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি করে আসছি। মালিকপক্ষ থেকে কোনো সাড়া আসেনি। তাদের টনক নড়েনি। দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি শেষে প্রতিদিনই শ্রমিকেরা বাগানের সব কাজ করছেন। চা-বাগানের ভরা মৌসুমে বাড়তি সময় দিয়ে পাতা তুলছেন, যেন আন্দোলনের ফলে চা–শিল্পের কোনো ক্ষতি না হয়। এটা চা-বাগানের প্রতি আমাদের ভালোবাসা। কিন্তু মালিকপক্ষ যদি মনে করে, এই ভালোবাসা আমাদের দুর্বলতা, তাহলে তারা ভুল করবে। গত চার দিন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি দিয়েছি। আজ বিকেলের মধ্যে সমাধান না পেলে আমরা আগামীকাল থেকে কঠোর আন্দোলনে নামব।’

পংকজ কন্দ বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার জন্য আমরা দুই বছর আগ থেকে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু ১৯ মাস পেরিয়েও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী না গিয়ে মালিকপক্ষ মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে গড়িমসি করছে। তারা মাত্র ১৪ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এই দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র ১৪ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.