Sylhet Today 24 PRINT

শেখ হাসিনা কি গড যে সমালোচনা করা যাবে না: ফখরুল

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৬ অক্টোবর, ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা যাচ্ছে না অভিযোগ করে কেন এমনটি হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা কি গড, বিধাতা, সৃষ্টিকর্তা যে তার বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না?’

রাজধানীর নয়াপল্টনে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোকমিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্প্রতি দেশব্যাপী আন্দোলনে নিহত নেতাকর্মীদের স্মরণে এই মিছিল করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।

গত জুলাই থেকে নানা কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে ভোলায় জেলা ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম, মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম শাওন, নারায়ণগঞ্জ যুবদল নেতা শাওন প্রধান এবং বেনাপোল পৌর সভার ৩৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতা মো. আব্দুল আলিম নিহত হয়েছেন।

তাদের স্মরণে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া শোক মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আরামবাগ হয়ে আবারও কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

এই মিছিলকে ঘিরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ এর আশ-পাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তার বলায় গড়ে তোলে। কর্মসূচিকে ঘিরে আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজটও তৈরি হয়।

শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে ফখরুল এই কথাগুলো বলেন ফেসবুকে লেখালেখির কারণে এক মামলায় রাজবাড়ীর মহিলা দল নেত্রী সোনিয়া আক্তার স্মৃতিক গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে।

রাজবাড়ীর মিজানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সামসুল আরেফিন চৌধুরী থানায় জমা দেয়া এক অভিযোগে বলেন, সোনিয়া প্রধানমন্ত্রীর সুনাম নষ্টে মিথ্যা ও মানহানিকর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করেন।

পৌর এলাকার বেড়াডাঙ্গার বাসা থেকে মঙ্গলবার গভীর রাতে সোনিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার আদালতে তোলা হলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এই গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তোলে ফখরুল বলেন, ‘কী অপরাধ? অপরাধ, তিনি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন, লিখেছেন হাসিনার বিরুদ্ধে? কেন? আপনি কি গড, বিধাতা যে, আপনার বিরুদ্ধে কিছু কথা বলা যাবে না? একটা গণতান্ত্রিক দেশে যে কারও সমালোচনা করার অধিকার আছে। প্রত্যেকটি মানুষের রয়েছে।’

‘অস্তিত্বের জন্য সরকার পতন ছাড়া বিকল্প নেই’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আজকে আমাদের অস্তিত্বের জন্য, আমাদের বাঁচার জন্য এবং আমাদেরকে রক্ষা করবার জন্য আমাদের কোনো বিকল্প নাই। এই হাসিনা সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

‘এই সরকারকে আর কোনো সময় দেয়া যায় না। এই সরকার জাতির জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। সে জন্য এ দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, জেগে উঠেছে আমাদের তরুণ-যুবকেরা। আজকে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব, পেছনে ফিরব না।’

বিএনপির নিহত ৫ নেতার স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা এ দেশকে স্বৈরাচার ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাত থেকে মুক্ত করতে চেয়েছেন। তারা মিছিলে থেকে এই দানবীর সরকারের পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। আর অসংখ্য আহত হয়েছে। কারও চোখ চলে গেছে এবং কারও বুক চলে গেছে। অসংখ্য মামলা হয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের আন্দোলন থেমে থাকেনি।

‘এই স্বৈরাচারি সরকারের পতনের লক্ষ্যে প্রতিদিন এবং তাকে সরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে মিছিলে মিছিলে আরও মানুষ বাড়ছে।’

ফখরুল বলেন, 'এই সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করতে, পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা প্রদান করতে। সংসদ বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্যে দিয়ে জনগণের ভোটে নতুন সংসদ গঠন করে নতুন সরকার গঠন করা হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মতো করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘অনেক রক্ত আমরা দিয়েছি। আমরা আরও রক্ত দেব। কিন্তু এদেশের মানুষকে আমরা মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন
সরকার ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করেছে, তার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব। দাবি করেন, দুর্নীতি ও চুরি ঢেকে রাখাই এর উদ্দেশ্য।

ফখরুল বলেন, ‘মানুষ যাতে সঠিক তথ্য জানতে না পারে, আমাদের গণমাধ্যম যাতে এই সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ করতে না পারে তার জন্য সার্কুলার দিয়ে ২৯টি বিভাগকে, তাদের কাছ থেকে কোনো খবর নেয়া যাবে না।

‘তারা কাউকে কোন খবর দেবে না। এর অর্থ হচ্ছে, তাদের যে দুর্নীতি ও চুরিকে ঢেকে রাখবার জন্য এবং সঠিক খবর থেকে তারা সমস্ত দেশ এবং জাতিকে বঞ্চিত রাখতে চায়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘শোককে শক্তিতে রূপান্তর করা হবে। সরকারের পতন নিশ্চিত করা হবে।’

বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, শিরিন সুলতানা, নাজিম উদ্দিন আলম, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হকও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.