Sylhet Today 24 PRINT

উৎপাদন ও পালন খরচ বৃদ্ধি, বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম

শাকিলা ববি |  ২১ মার্চ, ২০২৩

বাসায় মেহমান আসবে তাই নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করছেন গৃহিণী তাহমিনা আক্তার। সব কেনাকাটা শেষ করে এসেছেন মুরগি কিনতে এসে চিন্তায় পড়ে গেছেন। কারণ ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে গেছে। আগে যেখানে ২০০ টাকা হলে তিনি দেড় কেজি ওজনের একটি মুরগি নিতে পারতেন সে টাকায় এখন এককেজি মুরগিই হয় না। তাহমিনা বলেন, হুট করে মুরগির দাম বেড়ে গেল। আমরা যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত আছি তাদের জন্য ব্রয়লার মুরগি ছিল আশীর্বাদের মত। কিন্তু এই মুরগি আমাদের কাছে সোনার হরিণ। কারণ আগে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় দেড়কেজি মুরগি নিয়ে বাসার সবাইকে নিয়ে ভালভাবে খাওয়া যেত। মেহমান আসলে দুইকেজি মুরগি নিলেই হয়ে যেত। কিন্তু এখন দেড়কেজি মুরগি নিতেই আমাকে অনেক হিসেব মেলাতে হচ্ছে। কারণ দুইকেজি মুরগি কিনলেই আমার পাঁচশত টাকা শেষ। তার উপর এককেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি থাকে না। নিতে হলে দেড়, দুই বা আড়াইকেজি ওজনের মুরগি নিতে হয়।

সারাদেশের ন্যায় সিলেটও মাস দুয়েকের ব্যবধানে কয়েকগুণ বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত দেড়মাসে মাসে সিলেটের বিভিন্ন বাজারে কেজিপ্রতি ১৬০ টাকা থেকে মুরগির দাম বেড়ে ২৫০ টাকা হয়ে যায়। কোথাও আবার ২৬০/৭০ টাকা কেজিতেও মুরগি বিক্রি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা।

ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, তিনটি ধাপে বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ আসে। প্রথম ধাপে কোম্পানি বাচ্চা উৎপাদন করে। দ্বিতীয় ধাপে ডিলাররা কোম্পানি থেকে বাচ্চা কিনে খামারিদের কাছে বিক্রি করেন, অনেক খামারি আবার সরাসরি কোম্পানি থেকেও বাচ্চা ক্রয় করেন। খামারিরা বাচ্চাগুলো বড় করে নিদিষ্ট দিন পর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এরপর ক্রেতা বাজার থেকে মুরগি কিনেন। মূলত বর্তমানে সব সেক্টরে বাজার দর ঊর্ধ্বগতি হওয়ার প্রভাব এই তিন ধাপেই পড়েছে। তাই ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে।

খামারি, ডিলার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চাহিদার তুলনায় কম বাচ্চা উৎপাদন, ফিডের (মুরগির খাবার) দাম বৃদ্ধি, ওষুধের ব্রয়লার মুরগির দাম, বাড়তি বিদ্যুৎ বিল ও শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম।

বিপ্লব পোল্ট্রি ফার্মের খামারি বিপ্লব কান্তি চৌধুরী বলেন, পোল্ট্রি মুরগির খামারের মূল চালিকা শক্তি বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ ইউনিট প্রতি ৮ টাকা থেকে ১২ টাকা হয়ে গেছে। বিলে আমাদের যে ২০% ছাড় দেওয়া হত সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। ছয় মাস আগে যে ফিড ২৩৫০ টাকা দিয়ে কিনেছি এখন সেই ফিড ৩৭০০ টাকার বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ৪০০ টাকার ওষুধ ৭২০ টাকা হয়ে গেছে। ১২০ টাকা কিরে ধানের কুড়া বাড়িতে এনে দিয়ে যেত, এখন সেই কুড়া ২৫০ টাকা দিয়েও পাওয়া যায় না।

এসবের সাথে রয়েছে কম বাচ্চা উৎপাদনের কথা উল্লেখ করে বিপ্লব কান্তি চৌধুরী বলেন, মুরগির বাচ্চার কৃত্রিম সংকট মূলত সব সময় হয় না। সিজন বুঝে কোম্পানিগুলো বাচ্চা উৎপাদন কমিয়ে দেয়। যেমন প্রথম রোজা, শবেবরাত, ঈদ, পূজা পার্বণ, বিয়ের সিজন এই সময়ে কোম্পানিগুলো উৎপাদন কম করে। তখন চাহিদা বেশি থাকে ডিলার খামারি সবাই বেশি পরিমাণে বাচ্চা নিতে চায়। সেই সুযোগে কোম্পানিগুলো একদিনের বাচ্চার ডাবল দাম নেয়। এর প্রভাব তখন খামারি, ডিলার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের উপর পড়ে।

ডিলার এবং পাইকারি ব্যবসায়ী ভাই ভাই পোল্ট্রির পরিচালক মাশেদুর রহমান বলেন, এই ব্যবসায় সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা যখন কোম্পানি থেকে বেশি দামে বাচ্চা কিনে আনি তখন বিক্রি করতে হয় বেশি দামে। আমরা কোম্পানিকে আগে টাকা দিয়েও আবেদন করেও চাহিদা অনুযায়ী বাচ্চা পাই না। পাশাপাশি ফিডের দাম বেড়ে প্রায় দিগুণ হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সব কিছু মিলিয়েই পোল্ট্রি মুরগির দাম বেড়েছে।

এ বিষয়ে নগরীর মদিনা মার্কেটের সজিবুর পোল্ট্রি শপের প্রোপাইটর মো. সজিবুর বলেন, আমরা খুচরা বিক্রেতা। আমারা এখন ভাবে দাম বাড়াতে পারি না। আমরা পাইকারদের থেকে বেশ দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি। দাম বেশি কেন, জিজ্ঞেস করলে খামারি ও পাইকাররা বলেন উৎপাদন কম ফিডের দাম বেশি তাই। এটা সত্য কথা। বাজারে ফিডের দাম অনেক বেড়েছে। তাছাড়া এই ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সব কিছুর দাম বেড়েছে তাই খুচরা বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.