Sylhet Today 24 PRINT

করোনায় গরিব হয়েছেন দেড় কোটি লোক

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৭ মে, ২০২৩

ছবি: সংগৃহীত

বৈশ্বিক মহামারি করোনার ধাক্কায় দেড় কোটি নিম্ন মধ্যবিত্ত নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (১৭ মে) রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে দুই দিনের ‘বিআইডিএস রিসার্চ এলামনাক ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, বর্তমানে দেশে দারিদ্র্যের যে হার, তার অর্ধেক করোনাভাইরাস মহামারির সময় নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন; চাকরি ও ব্যবসা হারিয়ে তারা এই দুর্গতিতে পড়েছেন।

অনুষ্ঠানে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ যে দারিদ্র্য হারের কথা বলা হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেক বা ৯ শতাংশের মতো নতুন দরিদ্র হয়েছেন। এর আগে এরা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছিলেন।

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। এর ৯ শতাংশ, অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ মহামারির ধাক্কায় অধোপতিত হয়েছেন। করোনাভাইরাস মহামারি না হলে দেশের দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশের আশপাশে নেমে আসতে পারত।
এসব নতুন দরিদ্র মানুষকে আবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ রাখেন বিনায়ক সেন। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ কর্মসূচি নেয়ার পরামর্শ দেন এই গবেষক।

বিআইডিএস মহাপরিচালক বলেন, তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছে, মহামারি চলার সময় তাদের সন্তানদের শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে। শিক্ষা ও মানবিক পুঁজির বিকাশের ক্ষেত্রে শহরের দরিদ্র শ্রেণি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান বিনায়ক।

তাদের শিক্ষায় ফেরাতে বিশেষ শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি চালু করাও পরামর্শ দেন তিনি। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচি ঠিকমতো বাস্তবায়নও দারিদ্র্য কমাতে বিশেষ অবদান রাখে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

করোনা মহামারির সময় দেশে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল বলে কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তার সমালোচনা করেন বিনায়ক সেন। তিনি মনে করেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করেছে তারা।

বিনায়ক সেন বলেন, ‘আমাদের সমগোত্রীয় (গবেষণা প্রতিষ্ঠান) কেউ কেউ তাদের তখনকার, ২০২০-এর কাজের ভিত্তিতে বলেছিল যে, দারিদ্র্য প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’

২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ২০২০ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সারা দেশের ৮ বিভাগের ৬৪টি জেলার ৫ হাজার ৫৭৭টি পরিবারের ওপর একটি জরিপ চালিয়ে তখন দেশের দারিদ্র্য হার ৪২ শতাংশ হয়ে যায় বলে দাবি করে। সেটি দেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়। আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ওই বছরের এপ্রিলে এক গবেষণার বরাত দিয়ে একই ধরনের তথ্য প্রকাশ করে।

সেই প্রসঙ্গ টেনে বিনায়ক বলেন, ‘ফ্যাক্ট অব দ্য মেটার হচ্ছে সেই সময় বাড়লেও সেটা শুধু সাময়িক সময়ের জন্য। এটা ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেড়েছিল। জুনের পর থেকে এটা কমে আসা শুরু হয়েছিল। এরপর কোভিডের ওমিক্রন, ডেল্টা (ধরনের বিস্তার) ইত্যাদি পার হয়ে ২০২২ সালের প্রথম দিক থেকেই দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক প্রবণতায় ফিরে আসতে শুরু করে। ২০১৯ এবং ২০২২ এর মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে। একই সময়ে চরম দরিদ্র পরিবারের অনুপাতও ৩ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে গেছে।’

করোনার ধাক্কায় অনেক মানুষ আত্মকর্মসংস্থানে ঝুঁকেছে বলেও বিআইডিএসের গবেষণায় উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে বিনায়ক সেন বলেন, ‘কোভিডের আগে থেকে যাদের আর্থিক সমস্যা ছিল এবং যাদের কাছে দুঃসময়ের জন্য অর্থ জমা ছিল, তারাই এই সুবিধাটা নিয়েছেন। ওই সময় বেসরকারি এবং সরকারি, দুই পক্ষই নিজস্ব উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অর্থায়ন করেছে। এতে তথ্য প্রযুক্তি এবং কৃষি সম্প্রসারণ প্রযুক্তি কাজে দিয়েছে।’ ২০২২ সালের শুরুতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পমামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘কোভিডের সময় নানা প্রতিষ্ঠান নানা রকম তথ্য দিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল। তবে বিবিএসের সর্বশেষ জরিপে যে দারিদ্র্য হার পাওয়া গেল তাতে দেখা যায়, আমরা সঠিক পথেই আছি।’

দারিদ্র্য হার কমলেও সরকার বৈষম্য নিয়ে চিন্তিত বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে বৈষম্য। আমি মনে করি, এই বৈষম্য আমাদেরই সৃষ্টি। তাই আমরা নতুন সম্পদ সৃষ্টি এবং সেই সম্পদ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ন্যায়ভিত্তিক সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.