Sylhet Today 24 PRINT

মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনের সুপারিশ

সিলেটটুডে ডেস্ক  |  ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬

রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল। এর রুট ও আশপাশে রয়েছে ঢাকা শহরের ঐতিহ্যবাহী ও প্রত্নতাত্ত্বিক বেশকিছু নিদর্শন। এর মধ্যে ৭১টি নিদর্শন রয়েছে, যেগুলো মেট্রোরেল নির্মাণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এগুলো রক্ষায় মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।

মেট্রোরেলের জন্য পরিচালিত ‘হিস্ট্রিক্যাল ইমপোর্ট্যান্স/আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে’ শীর্ষক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রত্যক্ষ সমীক্ষা ছাড়াও এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তথ্য। পাশাপাশি নেয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞদের মতামত। ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের অধীন সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ঢাকা গণপরিবহন কোম্পানি।

সমীক্ষার তথ্যমতে, মেট্রোরেল নির্মাণকালে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে ঢাকার ২০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিক এসব নিদর্শনের আটটি রয়েছে মেট্রোরেলের রুটের মধ্যে। এগুলো হলো— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা গেট, দোয়েল চত্বর, কদম ফোয়ারা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (রেসকোর্স ময়দান), মতিঝিলের শাপলা চত্বর, কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা ও জাতীয় সংসদ ভবন।

রুটের আশপাশে হলেও ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে ১২টি নিদর্শন। এগুলো হলো— টিএসসির পাশের গ্রিক স্মৃতিস্তম্ভ, তিন নেতার মাজার, হাইকোর্টের পুরনো ভবন, চামেলী হাউজ, কার্জন হল, বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ, কারওয়ান বাজারের খাজা আম্বর শাহ মসজিদ, জাতীয় জাদুঘর, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, হাইকোর্টের কাছে হাজি খাজা শাহবাজ মসজিদ ও হাজি খাজা শাহবাজের সমাধি এবং মুসা খান মসজিদ। এগুলোর অবস্থান মেট্রোরেলের রুটের ১৯ থেকে ১৩৬ মিটারের মধ্যে।

সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা গেট। এর মধ্যবর্তী পিলার ও মেট্রোরেলের পিলার খুবই কাছাকাছি স্থানে। এতে পাইলিংয়ের সময় পিলারটি ধসে পড়তে পারে। রাজু ভাস্কর্যের ঠিক পাশেই মেট্রোরেলের পিলার থাকবে। আর মেট্রোরেলের ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) ভাস্কর্যের ওপর দিয়েই অতিক্রম করবে। এতে ভাস্কর্যের ক্ষতির পাশাপাশি সৌন্দর্য নষ্ট হবে। এছাড়া নির্মাণ-পরবর্তী মেট্রোরেল চলাচলে সৃষ্ট কম্পনের ফলেও এটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একই ঘটনা ঘটতে পারে কদম ফোয়ারা, সার্ক ফোয়ারা, দোয়েল চত্বর ও শাপলা চত্বরের ক্ষেত্রেও।

জাতীয় সংসদ ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট ছাড়াও নির্মাণকালীন ধূলিকণায় এর দেয়ালের রঙ নষ্ট হতে পারে। পাইলিংয়ের সময় খননকাজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তিন নেতার মাজার, কার্জন হল, গ্রিক স্মৃতিস্তম্ভ, হাজি খাজা শাহবাজ মসজিদ ও হাজি খাজা শাহবাজের সমাধি। একই পরিস্থিতির শিকার হতে পারে চামেলী হাউজ, বর্ধমান হাউজ ও পুরনো হাইকোর্ট ভবন। এছাড়া পাইলিংয়ের কম্পনের ফলে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে খাজা আম্বর শাহ মসজিদ এবং দ্বিতীয় তলায় ফাটল ধরতে পারে মুসা খান মসজিদে। পাশাপাশি মেট্রোরেলের পিলার জাতীয় জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রবেশে প্রতিবন্ধক হবে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় সংসদ ভবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন ঢাকা শহর-বিষয়ক গবেষকরা। কারণ ২০ কিলোমিটার রুটে এটি ৭১টি ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনকে স্পর্শ করবে। এগুলো কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর ২০টি নিদর্শন বড় ধরনের ঝুঁকিতে আছে। তাই এর রুট পরিবর্তন করে জাতীয় সংসদ ভবনের পরিবর্তে বিজয় সরণি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে রমনা পার্ক হয়ে মত্স্য ভবন দিয়ে নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

সমীক্ষা পরিচালনাকারী দলের প্রধান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম হক বলেন, মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয় গত বছর। তখন মেট্রোরেলের বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন ও সয়েল টেস্টের কাজ চলছিল। প্রতিবেদনের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে তখনই রুট পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া যেত। তাহলে আর আন্দোলন হতো না।

নকশায় পরিবর্তন আনা এখন আর সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা গণপরিবহন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোফাজ্জেল হোসেন। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের নকশা প্রণয়ন হয়ে গেছে। সয়েল টেস্টের রিপোর্টও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন ইউটিলিটি সার্ভের কাজ চলছে। এ অবস্থায় প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন রক্ষায় নকশা পরিবর্তন সম্ভব নয়। এতে প্রকল্প অনেক পিছিয়ে যাবে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মিতব্য মেট্রোরেলের কারণে ক্ষতির তালিকায় থাকা অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— পুরাতন বিমানবন্দর, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ফার্মগেটের ব্রিটিশ বাংলো, হলি ক্রস চার্চ, কারওয়ান বাজারের খাজা আম্বর পুল, রূপসী বাংলা হোটেল (ইন্টারকন্টিনেন্টাল) ও জাতীয় কবির সমাধি।

সূত্র : বণিক বার্তা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.