Sylhet Today 24 PRINT

জবরদখল: ড. ইউনূসের অভিযোগের জবাব দিল গ্রামীণ ব্যাংক

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে নেয়ার যে অভিযোগ তুলেছেন তার জবাব দিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক। তাতে দাবি করা হয়েছে, আইন মেনেই গ্রামীণ টেলিকম ভবনের সাতটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূসের কোনো মালিকানা বা শেয়ার নেই বলে দাবি গ্রামীণ ব্যাংকের।

রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যালয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে এখানে অধ্যাপক ইউনূসের কোনো টাকা নেই। এখানে ওনাদের কোনো শেয়ার হোল্ডিং নেই।

তিনি আরও বলেন, আইন অনুযায়ী আমরা তিনটি প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান মনোনয়ন দিয়েছি। ড. ইউনূস এখন আর সেসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নন।

সাইফুল মজিদ বলেন, ‘সব মিলে আমাদের ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতার সংখ্যা এক কোটি পাঁচ লাখ। তাদের যেসব আইনগত অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে সেগুলো আমরা রক্ষার চেষ্টা করছি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু নেই। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাইফুল মজিদ বলেন ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারির প্রসঙ্গে টেনে বলেন, ‘ওনাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণের যে তথ্য এসেছে সেটা প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়। শুধু একজন, গ্রামীণ কল্যাণের যিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উনি রূঢ় আচরণ করেছেন। ভালো হতো উনি যদি রূঢ় আচরণ কম দেখাতেন। সে জন্য হয়তো সামান্য কিছু হতে পারে।

‘পুরো তথ্য দেয়া হয়নি, কারণ অনেক তথ্য আছে। গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ শক্তি, গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশন- শুনলাম, অধ্যাপক ইউনূস টেলিভিশনে বলেছেন যে এগুলো বড় হয়েছে মুনাফা করে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু নট ফর প্রফিট। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করার জন্য না। সারপ্লাস যদি হয়, জনকল্যাণে ওনারা কাজে লাগাতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস এবং যারা পরিচালনা পর্ষদে আছেন, ওনারা কিন্তু টাকা দেননি। টাকাগুলো গ্রামীণ থেকে গেছে। গ্রামীণের বোর্ডে অনুমোদিত হয়েছে। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলো গঠন করার জন্য গ্রামীণ শুধু অনুমোদনই দেয়নি- গ্রামীণ পরিচালনা পর্ষদ অর্থ দিয়েছে, গ্রামীণের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনেক শ্রম ব্যয় করেছেন। বছরের পর বছর ওনারা খেটেছেন। গ্রামীণের অনেক পুরনো কর্মচারীকে কাজে লাগানো হয়েছে।’

গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, অধ্যাপক ইউনূস চেয়ারম্যান ছিলেন না। তিনি ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক; ফাউন্ডিং এমডি, ফাউন্ডার এমডি না।

‘আমরা অনুসন্ধান করে দেখছি, ওনারা এতগুলো প্রতিষ্ঠানের ৫১-৫২টি, এই সংখ্যা নিয়ে একটু মতভেদ আছে, গ্রামীণ ব্যাংকের পূর্ণকালীন কর্মকর্তা হিসেবে ওনারা এতগুলো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কী করে পরিচালক হলেন? এ ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে।

‘অধ্যাপক ইউনূস সবগুলোর চেয়ারম্যান। গ্রামীণ কল্যাণ হয়েছে ১৯৯৬ সালে এবং তার দুবছর পর তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু উনি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আজীবন চেয়ারম্যান। এটা খুবই অস্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, ‘১৯৮৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অডিট করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, এই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত নব্বইয়ের দশকে হয়েছে। আমরা কোনো লেজার খুঁজে পাইনি। সেজন্য আমরা জিডি করেছি।’

সাইফুল বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৩ আইনগত কাঠামোতে স্পষ্ট করে লেখা আছে গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা কোথায় কোথায় যেতে পারবে। আমরা আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করেছি, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিটি টাকা ব্যয় হবে গ্রামীণের বিত্তহীন, দরিদ্রদের জন্য। অন্য কোথাও নিয়ে, অন্যভাবে এই টাকা খরচ করার এখতিয়ার নেই।

‘এখানে ওনাদের কোনো শেয়ার হোল্ডিং নেই। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এখানে অধ্যাপক ইউনূসের কোনো টাকা নেই। গ্রামীণ কল্যাণে নেই, গ্রামীণ টেলিকমে নেই। গ্রামীণ পরিবারের অনেকগুলো বোর্ড সভায় অনুমোদন দিয়েছেন। কোথাও লিখেছেন অবহিত করেছেন। বোর্ড আরও সক্রিয় হলে ভালো হতো।’

গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাতটি প্রতিষ্ঠানে আইন অনুযায়ী আমরা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বোর্ডের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান নমিনেশন দিতে পারি এবং দুজন পরিচালক নিয়োগ দিতে পারি। আমরা সেটাই করেছি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আমরা শুধু এ কাজটিই করেছি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাইফুল মজিদ বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মিটিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তিনটি চেয়ারম্যান নমিনেশন দিয়েছি। সেগুলো হলো- গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ ফান্ড।

‘আমরা আইন অনুযায়ী দেখেছি, আগে যিনি ছিলেন ওনার চেয়ারম্যান থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমরা জবরদখল করতে যাইনি। আইনি মতে যতদূর বুঝি উনি (ড. ইউনূস) এখন চেয়ারম্যান নন।’

গ্রামীণ ব্যাংকের আইন বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাসুদ আক্তার বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে তালা দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে থাকা আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল করে নেয়ার অভিযোগ তোলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা বহু রকমের দুর্যোগের ভেতর দিয়ে যাই। এরকম দুর্যোগ আর দেখিনি যে, হঠাৎ করে বাইরে থেকে কিছু লোক এসে বলল তোমরা সরে যাও।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.