Sylhet Today 24 PRINT

ধর্ম মানার পাশাপাশি না মানার স্বাধীনতাও দিতে হবে : ড. আনিসুজ্জামান

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্লগারসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তির ওপর জঙ্গি হামলার সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সব ধর্মের, সব সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মমতের স্বাধীনতা থাকবে, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ধর্ম মানার স্বাধীনতা থাকলে কোনো ধর্ম না মানার স্বাধীনতাও থাকবে। কারো লেখায় বা কথায় কারো ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত লাগলে তিনি লিখে বা মুখের কথায় বিরোধীপক্ষের বক্তব্য খণ্ডন করতে পারেন, চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু কলমের উত্তরে চাপাতি কেন? একাই অভিযোগ-উত্থাপনকারী, বিচারক ও দণ্ডকর্তার ভূমিকা গ্রহণ এদেশের সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। কোনো ধর্মই নরহত্যা সমর্থন করে বলে আমার জানা নেই।’

রোববার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনে দেয়া সমাবর্তন বক্তা হিসেবে এসব কথা বলেন প্রখ্যাত এ শিক্ষাবিদ।

ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের জ্ঞানচর্চার পরিবেশ যেসব কারণে বিঘ্নিত হতে যাচ্ছে, তার একটি হলো সহনশীলতা ও উদারতার অভাব। প্রায় একশ বছর আগে মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে মুসলিম সাহিত্য সমাজ বুদ্ধির মুক্তির একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সামাজিক অনুদারতা ও সংকীর্ণতার কারণে বছর কয়েকের মধ্যে তার কাজকর্ম বন্ধ করে দিতে হয়। নজরুল ইসলামের স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রবল প্রাণ প্রবাহই কেবল কোনো ধরণের বাধা মানেনি। আজ বাংলাদেশে আমরা দেখছি ব্লগার হত্যা করা হচ্ছে তাদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে। আবার যেসব প্রকাশ ব্লগারদের বইপত্র প্রকাশ করেছে তাদেরও হত্যা করা কিংবা হত্যার প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আস্তিক হলেই যে রক্ষা, তাও নয়। কেননা, পিরকে হত্যা করা হয়েছে পিরবাদ ইসলামসম্মত নয়, এমন অভিযোগে। মাজারের খাদেমকে হত্যা করা হয়েছে, মাজারে এক ধরনের পৌত্তলিকতার চর্চা হয়, এই অপবাদে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান পীড়ন করা হচ্ছে, শিয়ারা আক্রান্ত হচ্ছে। তাঁরা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন, আল্লাহ, রসুল ও কোরআনে আস্থা রাখেন, এমন ঘোষণার পরেও। বাংলাদেশে তো এমন হওয়ার কথা ছিল না।’

প্রখ্যাত এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘এই পরিবেশে সুস্থ জ্ঞানচর্চার অন্তরায়। আজ আমরা স্বদেশে মুক্ত পরিবেশ পেতে চাই, যেখানে জ্ঞানের সাধনায় কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় না, যেখানে আমাদের সংবিধানসম্মত স্বাধীনতা আমরা সকলে ভোগ করতে পারি।’

শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এই প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘তারা যেন অধীত বিষয়ে জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সঙ্গে উদার হওয়ার শিক্ষা নেয়। তারা যেন পরমতসহিঞ্চু হয়, পেশিশক্তির বদলে যেন সর্বদা যুক্তির আশ্রয় নেয়। সুষ্ঠু জ্ঞানচর্চার পরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের পালনীয় ভূমিকা আছে। শিক্ষকরা তাদেরকে সেভাবে তৈরি করবেন, এটাই প্রত্যাশিত।’

উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে বাংলাদেশে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক। দেশে উচ্চ শিক্ষার চাহিদা কত বেড়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা থেকে তা বুঝা যায়। তার ওপরে বহু কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের উচ্চশিক্ষার মান সম্পর্কে নানা প্রশ্ন রয়েছে। সকল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সকল কলেজে উচ্চ শিক্ষাদানের মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নেই। এ-নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উদ্বেগ নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ’

সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল হামিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখারুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান।

উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। চলার পথের পঞ্চাশ বছরে এর আগে তিনটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়, যার সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর। রোববার অনুষ্ঠিত চতুর্থ সমাবর্তনে সাত সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেন।

এবারের সমাবর্তনে ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে শিক্ষা সমাপনকারী ৭ হাজার ১ শ ৯৪ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদান করা হয়, যার মধ্যে চ্যান্সেলর পদক পাচ্ছেন নয়জন শিক্ষার্থী। এছাড়া ২৫ জন পিএইচডি ও ১৩ জন এমফিল রয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের হাতে সনদ তুলে দেন রাষ্ট্রপতি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.